গাজীপুরে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের বেশকিছু চ্যালেঞ্জ

নির্বাচন প্রচ্ছদ বিনোদন মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

আর মাত্র ৩ দিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আগামী ২৫শে মে বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মেয়র পদে দলের মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খানকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য জনমত তৈরিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে মাঠের পরিস্থিতি দেখে এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ দেখছেন নেতারা। এ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর শক্ত কোনো প্রার্থী না থাকলেও দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতা জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। জাহাঙ্গীর নিজে প্রার্থী হিসেবে না থাকতে পারলেও অনেকে বলছেন মূলত তিনিই এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তার মা জায়েদা খাতুন প্রার্থী হলেও লড়ছেন মূলত জাহাঙ্গীর আলম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন নানা কারণে দলের অনেক নেতাকর্মী জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের পক্ষে কাজ করছেন। ভোটেও এর প্রভাব পড়বে।

এই অবস্থায় ভোটের ফল নিজেদের পক্ষে আনতে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় জনসমর্থন নিজেদের পক্ষে আনতে ব্যাপক তৎপরতা চলছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরাট বহর চষে বেড়াচ্ছে নির্বাচনী এলাকায়। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আছেন প্রচারের মাঠে।

দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করতে ২৯শে এপ্রিল ২৮ সদস্য’র কেন্দ্রীয় একটি সমন্বয় টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমে দলনেতা হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। টিমের সমন্বয়ক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। ওই টিমের পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মায়ের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোয় বিষয়টিকে প্রেস্টিজ ইস্যু বলে ধরে নেয়া হয়েছে।

গত সোমবার তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গাজীপুরে দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক শক্তি বাড়ানোর। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তারা জানান। কীভাবে রাজনৈতিক শক্তি বাড়ানো হবে জানতে চাইলে দলটির নেতারা বলেন, এমপি নন এমন কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী কয়েকদিন গাজীপুরে রাজনৈতিক কাজ করবেন। বিশেষ করে যেখানে জাহাঙ্গীরের প্রভাব বেশি সেসব এলাকায় নৌকার পক্ষে ভোট চাইবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ব্যক্তি থেকে দল বড় এই বিষয়টিকে ভোটারদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বলেন, নৌকা প্রতীক জিতে আসলে গাজীপুরের উন্নয়নকে সরকার গুরুত্ব সহকারে দেখবে বলে জানানো হবে।

গাজীপুরকে আওয়ামী লীগ কেন এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতাকে। তাদের সবার যুক্তি প্রায় একই। এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, গাজীপুর হচ্ছে রাজধানী ঢাকার প্রবেশ পথ। অনেক জেলা থেকে মানুষ গাজীপুর দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। তাছাড়া এটা গার্মেন্টস ও বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানা সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে। সামনে নির্বাচন। বিরোধী দলগুলো এরইমধ্যে আন্দোলন শক্তিশালী করা শুরু করেছে। সামনে আরও হয়তো বাড়াবে। তাই গাজীপুরে যদি নৌকার প্রার্থী জয়লাভ করে তাহলে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা এখানে কাজ করছি গাজীপুরবাসীর ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য। নৌকা বিজয়ী হলে তাদের উন্নয়ন হবে। অন্য প্রতীক জিতলে উন্নয়ন হবে না। এটা গাজীপুরবাসীও জানে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন এখানকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নির্বাচনী প্রচারে তাদেরকে সহযোগিতা করছি।

প্রায় একই মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখানকার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করা হচ্ছে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় সেদিকটাও খেয়াল রাখা হবে। ভোটাররা যেন ভয়ডরহীনভাবে ভোট কেন্দ্রে ঠিকমতো আসতে পারে সেই ব্যবস্থাটা দেখা হবে। তিনি বলেন, এখানে এসে মেসেজ দেয়া হচ্ছে যে- যারা শেখ হাসিনার নির্দেশ মানে না বা মানবে না তারা আওয়ামী লীগের কর্মী বা সমর্থক হতে পারে না। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করার চেষ্টা করা হবে। এদিকে কেন্দ্রের নির্দেশে আওয়ামী লীগের অন্তত দুই ডজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা প্রতিদিন গাজীপুরে আসছেন নিজ দলের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খানের পক্ষে গণসংযোগ করতে। তারা ভোটারদের খোঁজে বাড়ি, মিল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে ছুটে যাচ্ছেন এবং নানা কৌশলে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।

সমন্বয় কমিটির কয়েক নেতা বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গাজীপুরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ এখানে নির্বাচনের হিসাব একটু অন্যরকম। নিজেদের দলের সাবেক নেতা গাজীপুরে বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই কেন্দ্র থেকে টিম তৈরি করে যেকোনো ধরনের বিভেদ দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা বলেন, গাজীপুরে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের বৈতরণি পার হতে হবে। বিরোধী দলকে এখানে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে দেয়া হবে না।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও গাজীপুরের এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি), বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনূর ইসলাম রনিসহ (হাতি) মেয়র পদে আরও তিনজন স্বতন্ত্রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে এ নির্বাচন এখন প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরো পড়ুন : দুবাইয়ে পাচার কিশোরীকে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বাবা-মা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *