নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলিয়ে ৩৩৩ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে ১৮৪ জনএর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। অর্থাৎ ৪০.২৪ শতাংশ প্রার্থী এসএসসি পাস করেননি। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলার আসামি ২৯.৭৩ শতাংশ প্রার্থী।
কারো কারো নামে একাধিক মামলা রয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এমন তথ্য। সোমবার (২২ মে) গাজীপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সুজন এসব তথ্য প্রকাশ করে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে মামলা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে যা কোনোভাবেই ইতিবাচক নয় বলে জানিয়েছেন সুজন।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন জানায়, প্রতিদ্বন্দ্বী আট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বর্তমানে দুজনের (২৫%) বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারা হলেন জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে অতীতে তিনটি মামলা ছিল। বর্তমানে কোনো মামলা নেই।
তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার মধ্যে একটি ছিল ৩০২ ধারার অর্থাৎ হত্যা মামলা।
২৪৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৮৪ জনের (৩৪.১৫%) বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। ৪২ জনের (১৭.০৭%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২৮ জনের (১১.৩৮%) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা ছিল। প্রার্থীদের মধ্যে আট জনের বিরুদ্ধে (৩.২৫%) বর্তমানে ৩০২ ধারার (হত্যা) মামলা রয়েছে। চার জনের বিরুদ্ধে অতীতে ৩০২ ধারার (হত্যা) মামলা ছিল।
৭৯ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জনের (১৬.৪৬%) বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা আছে এবং তিন জনের (৩.৮০%) বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি মামলা ছিল। একজনের জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩০২ ধারার (হত্যা) একটি মামলা চলমান রয়েছে।
তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৩৩৩ প্রার্থীর মধ্যে ৯৯ জনের (২৯.৭৩%) বিরুদ্ধে বর্তমানে ৪৭ জনের (১৪.১১%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২৯ জনের (৮.৭১%) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল। ৩০২ ধারায় ৯ জনের (২.৭০%) বিরুদ্ধে বর্তমানে এবং ৫ জনের বিরুদ্ধে (১.৫০%) অতীতে মামলা ছিল।
প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে সুজন জানায়, ৪০.২৪ শতাংশ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। এদের মধ্যে ৮ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ জনের (৬২.৫০%) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, এক জনের (১২.৫০%) এসএসসি এবং দুজনের (২৫%) এসএসসির নিচে। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন মনোনয়নপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন স্বশিক্ষিত এবং জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী মো. রাজু আহাম্মেদ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের মধ্যে রয়েছেন আজমত উল্লা খান (এলএলএম), এম এম নিয়াজ উদ্দিন (এমএসএস), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (তাকমিল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম (এমবিএ) ও মো. হারুন-অর-রশীদ (এমএ)। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি উল্লেখ করা প্রার্থী হলেন গণফ্রন্টের আতিকূল ইসলাম।
৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের ২৪৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৯২ জনের (৩৭.৪০%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। ৩৯ জনের (১৫.৮৫%) এসএসসি এবং ৪৩ জনের (১৭.৪৮%) এইচএসসি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫০ (২০.৩৩%) ও ২১ জন (৮.৫৪%)। এক জন (০.৪১%) সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেননি।
১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৭৯ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪০ জনের (৫০.৩৩%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১২ (১৫.১৯%) ও আট জন (১০.১৩%)। অন্যদিকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১০ (১২.৬৬%) ও ৯ জন (১১.৩৯%)।
প্রার্থীদের পেশা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সুজন জানায়, ৮ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন ব্যবসায়ী, দুজন চাকরিজীবী। এ ছাড়া একজন আইনজীবী, একজন গৃহ সম্পত্তি ভাড়া থেকে আয় করেন এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।
২৪৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সিংহভাগ ১৯২ জনের (৭৮.০৫%) পেশাই ব্যবসা। কৃষির সাথে সম্পৃক্ত ১৩ জন, আইনজীবী সাত জন, চাকরিজীবী ১১ এবং ১৬ জন অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। সাত জন পেশার ঘর পূরণ করেননি।
৭৯ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৩৯ জনই (৪৯.৩৭%) গৃহিণী। ১২ জন (১৫.১৯%) ব্যবসায় যুক্ত। আইনজীবী রয়েছেন ছয় জন (৫৭.৫৯%)। চাকরিজীবী সাত জন (৮.৮৬%) এবং অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্ত সাত জন (৮.৮৬%)। এখানেও সাত প্রার্থী পেশার ঘর পূরণ করেননি।
তথ্য উপস্থাপন শেষে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলিপ কুমার, ঢাকা বিভাগের সমন্বয়ক তৌফিক জিল্লূর রহমান। তারা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন : অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণীদের ভিডিও নিয়ে সাত দেশে পর্নো বাণিজ্যর হোতা গ্রেফ্তার