‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অর্জিত অর্থে প্রদীপের স্ত্রী গৃহিণী হয়েও কোটিপতি

অনুসন্ধানী অর্থনীতি আইন-আদালত ক্রাইম নিউজ জাতীয় দুর্নীতি প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল

নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারন গৃহিণী হয়েও কোটিপতি। তাঁর নামে রয়েছে দুটি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি। আছে ৪৫ ভরি সোনা ও ব্যাংক হিসাবে নগদ টাকা। অথচ প্রদীপের নামে কোনো সম্পদই নেই। তাঁর ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী এসব সম্পদ অর্জন করেছেন।

প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় দেওয়া সাক্ষ্যে মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজিদের আদালতে এ সাক্ষ্য শুরু হয়।

প্রদীপের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের বিপরীতে উচ্চ আদালতে করা একটি আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। আজ দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাঁকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। যাওয়ার সময় প্রিজন ভ্যানে ওঠাকালে প্রদীপ উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি, কোনো অপরাধ না করে শাস্তি পেয়েছি।’

২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মামলায় প্রদীপসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। গত ৩১ জুলাই এ রায় দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রদীপের পলাতক স্ত্রীর বিরুদ্ধে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। তিনি আদালতকে বলেন, নগরের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরের বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারন। তাঁর ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকার। তাঁর ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রদীপের ঘুষ, দুর্নীতির টাকায় তাঁর স্ত্রী কোটিপতি হয়েছেন।

মাহমুদুল হক আরও বলেন, উচ্চ আদালতে আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় প্রদীপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিত রেখেছেন আদালত। ২৪ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য রাখা হয়েছে।

২০২০ সালের ২৩ আগস্ট প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রদীপের স্ত্রীর নামে থাকা গাড়ি, বাড়ি ও ব্যাংক হিসাব রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে রাখার জন্য গত বছরের ২৯ জুন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ নির্দেশ দেন। একই বছরের ২৬ জুলাই প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। কিন্তু প্রদীপের স্ত্রী পলাতক।

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *