খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরুন্নবী। নিজের শখের বসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা দিয়ে একটি খাট বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। শখের সেই খাটের নাম দিয়েছেন পরি পালং খাট। বিক্রির জন্য খাট নিয়ে তিনি হাজির হয়েছেন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। দাম হাঁকিয়েছেন এক কোটি টাকা। আর সেই খাট দেখতে টিকিট কেটে ভিড় জমাচ্ছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা।
শুধু পরি পালং স্টল নয়, গতকাল শুক্রবার নগরের রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে ছুটির দিনে মেলায় দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে মেলার প্রবেশপথে ভিড় জমিয়েছেন দর্শনার্থীরা। টিকিট নিয়ে তাঁদের সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে ৩০তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। শুরু থেকেই মেলায় দর্শক উপস্থিতি ছিল ভালো। তবে ছুটির দিনগুলোতে কেনাকাটার পাশাপাশি বেড়াতেও আসছেন লোকজন। গতকালও তার ব্যতিক্রম দেখা গেল না।
মেলায় প্রবেশ করতেই হাতের বাঁ দিকে আন্তর্জাতিক জোন। ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান ও পাকিস্তান থেকে আগত বিক্রেতারা নানা বিদেশি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন সেখানে। আকর্ষণীয় নকশার লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস, ব্যাগ, জুতা, গয়না ইত্যাদি কিনতে সেখানে ভিড় জমিয়েছেন ফ্যাশনপ্রেমী নারীরা। স্টল ঘুরে পাকিস্তানি কুর্তা দেখছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাবিকুন্নাহার। বিকেল পাঁচটার দিকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, পাকিস্তানি স্টলগুলোতে ভালো মানের ও নকশার কুর্তা পাওয়া যায়। দামও সাশ্রয়ী। তাই মেলায় ঢুকেই প্রথমে এখানে এসেছেন।
দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত মেলায় এবার ২০টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৫৬ প্রিমিয়ার স্টল, ১৪ গোল্ড স্টল, ৪৮ মেগা স্টল, ১১ ফুড স্টল, ৩টি আলাদা জোনসহ মোট ৪০০ স্টল রয়েছে। বড় প্যাভিলিয়নগুলোতে ক্রেতাদের আকর্ষণে ছাড়ের পাশাপাশি বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
মেলা ঘুরে দেখা গেল গৃহস্থালি পণ্য, গয়না, শিশুদের খেলনা ও ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে বেশি ভিড় মানুষের। মেলায় ঘুরতে এসেছেন ব্যবসায়ী মাহফুজুল ইসলাম। একটি গয়নার স্টলের বাইরে সন্ধ্যায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, স্ত্রী আর চার বছরের মেয়ে উম্মে আয়শাকে নিয়ে ছুটির দিনে মেলায় এসেছেন তিনি। মেয়ের আবদারে খেলনা কিনে দিয়েছেন তাকে। স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন গয়না দেখতে।
মেলায় প্রাপ্ত বয়স্কদের হাত ধরে এসেছে শিশুরাও। শিশুদের জন্য মেলার এক প্রান্তে রয়েছে বিভিন্ন রাইড। নাগরদোলা, নৌকাসহ বিভিন্ন রাইডে শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি নানা বয়সী মানুষ ভিড় করেছেন। পাশাপাশি মেলায় থাকা চিত্রশিল্পীদের কাছে গিয়ে নিজের ছবি আঁকিয়ে নিচ্ছেন অনেকে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় এসেছেন অনেক তরুণ-তরুণী। মেলার বাইরেও বসেছে মৃৎশিল্প, খাবার ও নানা পণ্যের দোকান। এসব দোকান থেকে পণ্য কিনতে মানুষের লম্বা সারি। মেলা থেকে বের হয়ে আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছুটির দিনগুলোতে মেলায় প্রচুর ভিড় হয়। ফেরার পথে গাড়ি পেতে অনেক সময় লাগে।
চেম্বার সভাপতি ও মেলা কমিটির উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম বলেন, এবারের মেলায় দর্শকের সমাগম বেশি। ভিড় বাড়ায় বিক্রেতারা খুশি। দর্শনার্থীরাও মেলায় উচ্ছ্বসিত মনে আসছেন বলে মনে করেন তিনি।
আরো পড়ুন : পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের আহমদিয়াদের জলসা ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত দুই, আহত অর্ধশত