চট্টগ্রাম সিটির চার ওয়ার্ড সার্ভার হ্যাক করে পাঁচ হাজারের বেশি ভুয়া জন্ম নিবন্ধন

আইন-আদালত তথ্য-প্রযুক্তি পুরুষ প্রচ্ছদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সার্ভার হ্যাক করে পাঁচ হাজারের বেশি ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটির পাঁচ ওয়ার্ডে ৫৪৮টি ভুয়া নিবন্ধনের ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে কাউন্টার টেররিজম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মঞ্জুর মোর্শেদ এই তথ্য জানান।

এদিকে গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার চারজন হলো আব্দুর রহমান আরিফ (২৫), দেলোয়ার হোসেন সাইমন (২৩), মোস্তাকিম (২২) ও ১৬ বছরের এক কিশোর। তাদের বাড়ি ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে।

পুলিশের পাশাপাশি গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) ভুয়া জন্ম নিবন্ধন নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। গতকাল তারা ১১ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে যায় বলে জানান সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। দুদক চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক ফয়সাল কাদের জানান, কাউন্সিলরের কার্যালয়ের বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করা হয়েছে।

ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের ঘটনায় গত সোমবার ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে নগরীর খুলশী থানায় মামলা করেন। এরপর রাতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট পতেঙ্গা থানার খালপাড় পকেটগেট এলাকা থেকে চারজনকে আটক করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।

গ্রেপ্তার আব্দুর রহমান আরিফ পতেঙ্গা খালপাড় এলাকায় ‘আরিফ কম্পিউটার অ্যান্ড স্টুডিও’ নামের একটি দোকানের মালিক। ইপিজেড নারকেলতলা এলাকায় ‘এসএম কম্পিউটার’ নামে সাইমনের একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। মোস্তাকিম ও ১৬ বছরের ওই কিশোর এসব প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ব্যবহার করে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করতেন বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা।

সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, গ্রেপ্তার চারজন মূলত মাঠ পর্যায়ে জন্ম নিবন্ধন করে দেওয়ার জন্য লোকজন সংগ্রহ করে। প্রাথমিক তথ্য নিবন্ধনের কাজও করে তারা। তিনটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা সহজে জন্ম নিবন্ধন সনদ সৃজন ও বিতরণের প্রলোভন দেখিয়ে লোকজন সংগ্রহ করত। এগুলো হচ্ছে বার্থ অ্যান্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন, বার্থ সার্টিফিকেট অ্যান্ড লেট রেজিস্ট্রেশন এবং হেল্প অব বার্থ অ্যান্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন। জন্ম নিবন্ধনে আগ্রহীদের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে সেটা পিডিএফ ফরম্যাটে পাঠিয়ে দেওয়া হতো ‘বসের’ কাছে। কথিত বস সেটা সার্ভারে ইনপুট দেন।

আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘এ রকম চার-পাঁচজন বস আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছি। এ ছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেসব ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে, এর প্রায় সবগুলোর ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ভুয়া।’

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, কমপক্ষে পাঁচ হাজার ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের তথ্য তাঁরা গ্রেপ্তার চারজনের কাছ থেকে পেয়েছেন। প্রতিটি জন্ম নিবন্ধনের জন্য তাঁরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা নিয়েছেন। এই চারজন একই চক্রের সদস্য। প্রতিটি চক্রে ৩০ থেকে ১০০ জন আছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘সার্ভারে অ্যাটাকটা যে বাইরে থেকে হয়েছে বা হচ্ছে, এটা দেখাই যাচ্ছে। এখন বাইরে থেকে সার্ভারে অ্যাটাকের বিষয়ে ভেতর থেকে কেউ সহযোগিতা করছে কি না, সেটা আমরা এখনো নিরূপণ করতে পারিনি। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’

গত ৮ জানুয়ারি ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ৪০টি, ৯ জানুয়ারি ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ১০টি, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ১০, ১৮ ও ২২ জানুয়ারি তিন দফায় ৪০৯টি এবং ৪০ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ২১ জানুয়ারি ৮৪টিসহ মোট ৫৪৮টি ভুয়া জন্ম নিবন্ধন শনাক্ত হয়।

২২ জানুয়ারি এ নিয়ে ওকে নিউজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডট কম-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। সোমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এসংক্রান্ত এক সভায় ‘সার্ভার হ্যাক’ করে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করার অভিযোগ আনেন।

তবে সার্ভার হ্যাকড হওয়ার পক্ষে এখনো কোনো তথ্য-প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কথা যদি বলি, তাহলে কাউন্সিলর ও ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারীর কাছে সার্ভারে প্রবেশের আলাদা আলাদা আইডি ও পাসওয়ার্ড আছে। জন্ম নিবন্ধন সহকারী আবেদনের তথ্য প্রাইমারি অ্যাপ্রুভাল এবং কাউন্সিলর ফাইনাল অ্যাপ্রুভাল দিলে সেটি সার্ভারে ইনপুট দেওয়া হয়। আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে এটি হ্যাকিংয়ের কোনো ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না।’

আরো পড়ুন : মোংলা বন্দরে পণ্য নিয়ে আসতে পারছে না রাশিয়ার আরো ৬৯টি বাণিজ্যিক জাহাজ

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *