টঙ্গী শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর) : বিশ্ব ইজতেমার বাকি আর পাঁচদিন। প্যান্ডেল নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ। অথচ ময়দানের বেশিরভাগেই শামিয়ানা নেই। শুধু বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করে রাখা হয়েছে। খিত্তাওয়ারি (জেলাভিত্তিক নির্ধারিত স্থান) দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের শামিয়ানা আনতে বলা হয়েছে। তাদেরই নিজ দায়িত্বে তা টানাতে হবে। ইজতেমার ইতিহাসে এবারই প্রথম এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এর কারণ চটের সংকট। শনিবার ইজতেমা ময়দান ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ইজতেমা ময়দানের অধিকাংশ জায়গায়ই খালি। শুধু বাঁশ পুঁতে রাখা হয়েছে। ইজতেমার আয়োজক কমিটির শূরা সদস্য শাহ আলম বলেন, এবারই প্রথম সিদ্ধান্ত হলো, খিত্তাওয়ারী বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিদের শামিয়ানা এনে নিজ দায়িত্বে টানাতে হবে।
ইজতেমা ময়দানের পাহারার দায়িত্বে থাকা নূর আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, চটের কিছুটা সংকট রয়েছে। তাই জেলায় জেলায় বলা হয়েছে যার যার শামিয়ানা নিয়ে আসার জন্য।
এ বিষয়ে ইজতেমার প্রধান সমন্বয়ক প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি তার পাশে থাকা মোস্তফা কামালের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তিনি বলেন, পরামর্শ মোতাবেক সারা দেশ থেকে জিম্মাদার সাথীরা নিজেরা শামিয়ানা নিয়ে আসবে। শামিয়ানার মাপ হবে ১৮ ফুট বাই ৩৬ ফুট।
ময়দানে চটের সংকট বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তিনি বলেন, মূল প্যান্ডেলের ৩০ ভাগ কাজ হয়েছে। বাকি পুরোটাই খালি। যে প্যান্ডেল হয়েছে হয়তো ২-৪টি জেলার সাথী ভাইয়েরা এখানে বসতে পারবেন। এ কারণে প্রত্যেক জেলার তাবলীগ সাথীদের শামিয়ানা আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খালেদ নামে এক মুসল্লি বলেন, শামিয়ানার সংকট রয়েছে। এছাড়া উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় আরেকটি প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। সেখানেও এই ইজতেমা মাঠের বেশ কিছু শামিয়ানা নেওয়া হয়েছে। সে কারণেও কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আসা মুসল্লি আবু দাউদ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার মিরপুরের এক তাবলীগ সাথী জানান, ঢাকা জেলার মুসল্লিদের প্রায় ১০-১২ বছর ধরেই শামিয়ানা দেওয়া হয় না এবং গাজীপুর জেলার মুসল্লিদেরও ২-৩ বছর ধরে শামিয়ানা দেওয়া হচ্ছে না। বহু আগেই সারা দেশের মুসল্লিদের শামিয়ানার দায়িত্ব দেওয়া দরকার ছিল।
গোডাউন জামাতের জিম্মাদার মাওলানা শিহাব উদ্দিন বলেন, বিশ্ব ইজতেমা আয়োজকদের পক্ষ থেকে মোট ১০টি বিভাগ করা হয়েছে। ১০টি বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করবে নজমওয়ালী জামাত। ১০টি জামাত হলো পাহারা জামাত, এস্কেবাল (অভ্যর্থনা) জামাত, জুর্নেওয়ালী জামাত, পানির জামাত, বিদ্যুৎ জামাত, মাইক জামাত, সাফাই জামাত, রিজার্ভ জামাত, গোডাউন জামাত ও নজমওয়ালী জামাত। নজমওয়ালী জামাতে বর্তমানে ৩৫ জন সদস্য রয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম ৬ সদস্য।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠু সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করতে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করেছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দপ্তর নিজ নিজ সেল গঠন করেছে। যতই সময় যাচ্ছে ততই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে দলে দলে লোক আসছে। মাঠে এসেই ধর্মপ্রাণ মানুষ ইজতেমার কাজে লেগে পড়ছেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। আমরা সর্বোাচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা সমাপ্ত হবে।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে প্রথম পর্ব। এরপর ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আরো পড়ুন : হুথির হামলার শিকার ব্রিটিশ জাহাজে আছেন এক বাংলাদেশি