বিরোধী জোটের বর্জনের মধ্যে হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই সংসদে বিরোধী দল কে হবে- এনিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই শতাধিক আসন পেলেও আগের সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। যেখানে স্বতন্ত্ররা মিলে পেয়েছেন ৬২ আসন। ফলে সংসদে বিরোধী দলের আসনে কে বসতে যাচ্ছে, তা এখনো পরিষ্কার হয়নি। তবে আসন সংখ্যা যাই হোক, বিগত দুটি সংসদের মতো দ্বাদশ সংসদে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল করার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্বতন্ত্রদের আসন যতই থাকুক, দল হিসেবে জাতীয় পার্টির আসন বেশি থাকায় তারাই হবেন বিরোধী দল।
এ পরিস্থিতিতে সংসদের আসন বিন্যাসের কাজ চলছে। কারণ আগামী ৩০শে জানুয়ারি বিকালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। এর আগে নিয়মানুযায়ী সংসদের অধিবেশন কক্ষে কে কোন আসনে বসবেন তা চূড়ান্ত করা হয়। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই বিরোধীদলীয় নেতার আসনটি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারদলীয় চীফ হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী অধিবেশন কক্ষের আসন বিন্যাস চূড়ান্ত করছেন।
সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, কয়দিন ধরে আসন বিন্যাসের কাজ চলছে।
শুক্রবার চূড়ান্ত হবে। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ নিয়ে তিনি আসন বিন্যাসের কাজ করছেন। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, আসন বিন্যাসে জিএম কাদেরের পরের আসন দেয়া হয়েছে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে। এর মধ্যে জিএম কাদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ উপনেতা এবং মুজিবুল হক চুন্নু হচ্ছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, সংসদে বিরোধী দল বা বিরোধী দলের নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। কেবল সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে ‘বিরোধীদলীয় নেতা’ উল্লেখ আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত্রে দল বা অধিসংঘের নেতা।’
অন্যদিকে আসন বিন্যাসে স্বতন্ত্র এমপিদের বেশির ভাগকে রাখা হচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতাদের পেছনের সারিতে। আবার কয়েক স্বতন্ত্র এমপিকে রাখা হচ্ছে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যদের আসনের পাশের সারিতে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আসন বিন্যাসের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-একাধিকবার নির্বাচিত, রাজনৈতিক বয়স, দলে অবদান, ভোটের ব্যবধান ও জনপ্রিয়তা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথমবার এমপি হওয়া এমপিদের বেশির ভাগের জায়গা হচ্ছে অধিবেশন কক্ষের পেছনের সারিতে। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের অনেক এমপিকে এবার সামনের দিকের আসনে আনা হচ্ছে বলে জানান আসন বিন্যাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বিএনপিসহ তাদের বলয়ের রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্যে ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয়লাভ করে। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জয়ী হন ৬২ জন সংসদ সদস্য। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে। জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা কম হওয়ায় এবং স্বতন্ত্ররা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় কারা বসছেন বিরোধী দলের আসনে- এনিয়ে প্রশ্ন ওঠে নানা মহল থেকে। তবে জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই বলে আসছে, বিরোধী দলের আসনে বসার অধিকার শুধু তাদেরই। ২০১৪ সালে যখন সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ, তখন ৩৪ আসন নিয়ে বিরোধী দলে বসেছিল এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টি। এরপর ২০১৮ সালে ২২টি আর এবার ঠিক তার অর্ধেক আসন নিয়ে বিরোধী দলে বসতে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে দলটি। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, সাধারণত সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলই বিরোধী দলে বসে আসছে এতকাল। শুধু ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কোনো বিরোধীদলীয় নেতা ছিল না। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট করে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাদের নেতা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারেন। তবে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। আর তারা বিরোধী দলে বসতে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
এমন অবস্থায় আগামী রোববার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সরকারি বাসভবন গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, আগামী ২৮শে জানুয়ারি (রোববার) সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে সরকারি বাসভবন গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সকল স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন স্বতন্ত্রদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।