চলুন জেনে আসি কেমন আছে নব্বই দশকের আলোচিত মডেল পল্লব

টেলিভিশন পুরুষ প্রচ্ছদ ফ্যাশন বিনোদন মডেলিং মুক্তমত লাইফ স্টাইল সিনেমা হ্যালোআড্ডা

বিনোদন প্রতিবেদক : নব্বই দশকের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা পল্লব তাঁর চিরচেনা মাধ্যমে একেবারে অনিয়মিত। হঠাৎ দেখা তো হঠাৎ উধাও। ছয় বছর আগে নাটকে অভিনয়ের জন্য একবার খবরে এসেছিলেন। আর মাস চারেক আগে ১৫ বছর পর নতুন কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য খবরে আসেন। আজ রোববার তাঁর ব্যবহৃত নম্বরে ফোন করা হলে জানালেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। আদাবরের বাসায় আছেন।

পল্লব বললেন, ‘সারা শরীরে এত ব্যথা, বলে বোঝাতে পারব না। ওরে জ্বর, এত বছরের জীবনে কোনো দিন এতটা কষ্ট পাইনি। হাসপাতালে যাবতীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে বাসায় থেকে চিকিৎসা চলছে। স্রষ্টা সবার মঙ্গল করুক।’

পল্লব এখন অভিনয়ে একেবারেই নেই। সাভারের একটি কারখানায় চাকরি করেন। চাকরির ফাঁকে দীর্ঘ ১৫ বছরের বিরতি ভেঙে ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘ছায়া’ সিনেমা দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন।


এর আগে ২০০৮ সালে একই পরিচালকের ‘বিয়ে বাড়ি’ সিনেমায় কাজ করেছিলেন। দীর্ঘদিন পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে শুটিং লোকেশন থেকে পল্লব বলেছিলেন, ‘মাঝে একটি ছবিতে অতিথি চরিত্র করেছি। ১৫ বছর পর পূর্ণাঙ্গভাবে “ছায়া” সিনেমাটি দিয়ে কাজে ফেরা বলা যায়। অনেক দিন পর কাজ করে ভালো লেগেছে। সেই ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় ১৭ বছর টানা ক্যামেরার সঙ্গে দাঁড়িয়েছি। এ জায়গায়টি আমার অনেক দিনের চেনা। তাই আবার কাজ করতে এসে নতুন মনে হয়নি। চেনা জায়গায় ফিরে নিজের কাছে প্রশান্তি লাগছে।’ ‘ছায়া’ সিনেমার পুরো শুটিং এখনো শেষ হয়নি। আর দিন দুয়েক কাজ করলে পল্লবের অংশ শেষ হবে বলে জানালেন তিনি।

‘কী মিষ্টি মিষ্টি অপলক দৃষ্টি, অপরূপ সুন্দর লাগছে/ এই মনের গভীরে, যার ছবি আঁকা আছে, তুমি সেই সুন্দর চোখে ভাসছে’—নব্বই দশকে প্রচারিত জনপ্রিয় এই বিজ্ঞাপনচিত্রের জিঙ্গেলের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। এই বিজ্ঞাপনচিত্রের সেই সুদর্শন মডেলই পল্লব আর সঙ্গে ছিলেন রিয়া। এমন আরও অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রে সে সময় পল্লবের ছিল উজ্জ্বল উপস্থিতি। পল্লবের শুরুটা হয়েছিল আফজাল হোসেনের পরিচালনায় গার্লিক অয়েল পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করে। ১৯৯১ সালে এই বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংয়ে যখন তিনি অংশ নেন, তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায়।


একে একে শতাধিক বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন পল্লব। তাঁর বিপরীতে মডেল হয়েছেন অপি করিম, তারিন, রিয়া, সুইটি, মৌ, তানিয়াসহ অসংখ্য বড় তারকা। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলায় আসক্ত পল্লব হুট করেই বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ শুরু করেন।

স্মৃতির অলিগলি হাতড়ে উঠে এল প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতাও, ‘শুটিং হয়েছিল চন্দ্রিমা উদ্যানে। ভোরবেলা ট্রাউজার পরে বাসা থেকে বের হই। মার কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়েছিলাম। বাসায় কেউ কিচ্ছু জানত না। পরে সবাই টিভিতে আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।’ প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রে পল্লব সম্মানী পেয়েছিলেন তিন হাজার টাকা। চার মাস ধরে খরচ করেছিলেন সেই অর্থ। জানালেন, জীবনে কোনো দিন শুটিংয়ের টাকা ঘরে নিতে পারেননি। সব টাকা বন্ধুবান্ধবের পেছনে খরচ করেছেন। আর কেউ বিপদে পড়ছে শুনলে দিয়ে দিতেন।

অভিনয়ে পল্লবের অভিষেক ঘটে ১৯৯৫ সালে। আরেফিন বাদলের ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ নাটকে অতিথি শিল্পী ছিলেন তিনি ও তানিয়া আহমেদ। এক যুগে কয়েক শ নাটকে অভিনয় করা হয়েছে তাঁর। চলচ্চিত্রেও অভিষেক হয় পল্লবের। শাহীন সুমন পরিচালিত ‌‌‘বিয়ে বাড়ি’ নামের সেই চলচ্চিত্রে পল্লব ছাড়াও ছিলেন শাকিব খান ও রোমানা।
দেশের নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে তাঁর উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও সমসাময়িকদের মতো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি পল্লব। পরিচালক ও প্রযোজকদের মতে, পল্লব এগোতে পারেনি তাঁর খামখেয়ালি স্বভাবের কারণে। আর প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নেন। পল্লবের ভাষায়, ‌‘আমি একটা সময় শিখে গেলাম, শোবিজে আবেগের মূল্য নেই। পুরোটাই মোহ। এদিকে ১০ বছরের প্রেম ভেঙে গেল। ইচ্ছে করেই নিজেকে সরিয়ে নিলাম। আমি কখনো মুখে এক আর অন্তরে আরেক—এ রকম নই। খোলা বইয়ের মতো ছিলাম।

সমসাময়িক অনেক তারকা আমার বাসায় আড্ডা দিত, খেত। বাইরে গিয়েই আমার নামে আজেবাজে কথা ছড়াত! এসব হিপোক্রেসি দেখে হাসি পেত। কোনো দিন কেউ বলতে পারবে না, আমি কারও কোনো ক্ষতি করেছি।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বাবা ও গৃহিণী মায়ের ছয় সন্তানের ভেতর পল্লব চতুর্থ। ১৯৮৮ সালে ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুল থেকে এসএসসি, সিটি কলেজে এইচএসসি শেষ করে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় ভাই হঠাৎ মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। এ ঘটনা বড় ধাক্কা হয়ে আসে মডেল ও অভিনয়শিল্পী পল্লবের জীবনে। ভাইয়ের মৃত্যুর দুই বছর পর চোখের সামনে বাবার মৃত্যুতে যেন একেবারে ভেঙে পড়লেন। পল্লব এখন মাকে নিয়ে থাকেন ঢাকার আদাবরের বাড়িতে।

একটা সময় ক্যামেরার সামনে ৫, ৪, ৩, ২, ১, ০ শুনে সময় কাটত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশক হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া অনাথ দুস্থ কল্যাণ সংস্থা নামের একটি এনজিও পরিচালনা করছেন বলেও জানালেন। কাজে গেলেও মনটা পড়ে থাকে ৮০ পেরোনো মায়ের কাছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব কাজ সেরে বাড়িতে চলে আসেন। মায়ের যাবতীয় দেখাশোনা তিনি নিজেই করছেন। একসময় শোবিজে কাজ করতে গিয়ে পরিবারের কারোরই খোঁজখবর রাখতে পারেননি। সে সময়টাকে ‘ইমম্যাচিরউড’ সময় হিসেবে মনে করছেন তিনি। পল্লব জানালেন, এখন বেশ পরিণত হয়েছেন। পল্লব বলেন, ‘নিজেকে নিয়ে আর ভাবি না। মা-ই আমার সব চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু। এদিকে বিয়েশাদি না করায় মা–ও আমায় নিয়ে অনেক চিন্তা করেন। একবারই প্রেম করেছিলাম, সেই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় আর বিয়ে করিনি।’

আরো পড়ুন : নওগাঁয় নদী থেকে এক বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *