কাওছার আহমদ, সিলেট: সিলেটের সীমান্তবর্তী ছয় উপজেলা-কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ হলো চোরাচালানের নিরাপদ রুট। সীমান্তবর্তী এ উপজেলাগুলোর অর্ধ শতাধিক স্থান দিয়ে অবৈধভাবে দেশে ঢুকছে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, গরু, মহিষ, চিনি, বিড়ি, পান, শাড়ী ও কসমেটিক্স সহ নানা চোরাই পণ্য। আবার বাংলাদেশ থেকেও পাচার হচ্ছে মটরশুঁটি, গৃহপালিত পশু হাঁস-মুরগি সহ দেশীয় নানা পণ্য। দেশের সীমানা পাহারায় নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়েই নিষিদ্ধ এ কারবার দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিলেট নগরীতে বড় দু’টি ইয়াবা ও চিনির চালান আটক করলে চোরাচালানের বিষয়টি সামনে আসে। সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর নগরীর বটেশ্বর এলাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান আটক করে পুলিশ। এ সময় রায়হান উদ্দিন নামের এক যুবককে আটক করা হয়। রায়হান জকিগঞ্জ উপজেলার খারিজা গ্রামের মৃত রইব আলীর ছেলে। রায়হানের কাছেই ইয়াবার চালান পাওয়া গেছে এবং জকিগঞ্জ থেকেই সে এগুলো নিয়ে আসছিল বলে নিশ্চিত করেছেন শাহপরান থানার ওসি খায়রুলল ইসলাম।
এর আগে ৩০ আগস্ট নগরীর আম্বরখানা পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে তিন মাদক কারবারিকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা। আটককৃতরা হলেন- জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মিল আলীর ছেলে মুহিবুর রহমান, বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর ছেলে আজির উদ্দিন ও সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে রাসেল আহমদ। মুহিব নগরীর পীরমহল্লার প্রভাতী ৪১/সি নম্বর বাসার বাসিন্দা। ওই চালানের মূলহোতা ছিলেন মুহিবুর রহমান। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুহিবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তার পীরমহল্লার বাসা প্রভাতী ৪১/সি নম্বরে অভিযান চালিয়ে আরও ৯ হাজার পিস ইয়াবা, মাদক বিক্রির ৫০ হাজার টাকা ও লেনদেনের রসিদ উদ্ধার করে।
এছাড়া ২ সেপ্টেম্বর শনিবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানার উমাইরগাঁও এলাকা থেকে ভারতীয় ৩০ বস্তা চিনি সহ ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। এর আগের দিন ১লা সেপ্টেম্বর শুক্রবার গোয়াইনঘাটে চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি মোটরসাইকেলসহ হাজীপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে মাহবুবুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। ওইদিন পশ্চিম জাফলংয়ের বুগইলকান্দি গ্রামের আকবর আলী ও আমির আলীর বসতঘর থেকে ১০০ বস্তা চিনি উদ্ধার করে পুলিশ। শনিবার ভোরে ওই এলাকার পাশ^বর্তী ইছামতি নদীর তীর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আরও ১২১ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করে পুলিশ।
এর তিনদিন আগে ২৮ আগস্ট সোমবার সিলেট নগরীর আম্বরখানার গোল্ডেন টাওয়ারের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ১৪০ বস্তা ভারতীয় চিনির চালান জব্দ করে পুলিশ। বিমানবন্দর থানার ওসি মইন উদ্দিন সিপন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে, গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের অভিযানে ২২ আগস্ট ভারতীয় ১০টি গরু আটক করা হয়। সকাল সাড়ে ৯ টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার এসআই এনামুল হাসান রুস্তুমপুর ইউনিয়নের লামাহাদারপার গ্রামের লাল টিকির পার নামক স্থানে অভিযান চালিয়ে পিয়াইন নদীর তীর থেকে গরুগুলো আটক করেন। অভিযান পরিচালনা করেন।
এছাড়াও কানাইঘাট উপজেলার সুরইঘাট, মঙ্গলপুর, আলুবাড়ি, লোভাছড়া, ভালুকমারা, ডনা, লোহাজুরি, কাড়াবাল্লা, জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা, শ্রীপুর,সারিঘাট ছাড়াও বিয়ানীবাজার ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থান দিয়ে চোরাকারবার চলছে।
সূত্র জানায় চোরাইপণ্যগুলো সীমান্ত থেকে সিলেট নগরীতে এসে হাতবদল হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে এসএমপি উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ ওকে নিউজ প্রতিনিধিকে জানান, নগরীর প্রবেশ পথগুলোতে সবসময় পুলিশের নজরদারি থাকে। কাউকে সন্দেহ হলেই তল্লাশি করা হয়। এছাড়া যখনই আদের কাছে চোরাকারবারিদের বিষয়ে তথ্য আসে, তখনই অভিযান চালানো হয়।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওকে নিউজ প্রতিনিধিকে শেখ মো. সেলিম জানান, পুলিশের সামনে কোনকিছু পড়লে অথবা কোন তথ্য আসলে সাথে সাথে অভিযান চালানো হয়।
বিজিবি সিলেট সেক্টর সদর দপ্তরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেনি। এতে সিলেটের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জি এইচ এম সেলিম হাসান বা অন্য দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কাওছার আহমদ, সিলেট
আরো পড়ুন : কালীগঞ্জের ১নং ওয়ার্ড দূর্বাটি গ্রামে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত।