ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যা মামলার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও হইলনা কোন বিচার!

আইন-আদালত ওকে নিউজ স্পেশাল ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ পুরুষ পুরুষ অধিকার প্রচ্ছদ রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা ও শাহ মখদুম হলের সভাপতি খলিলুর রহমান মামুন হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর আজ। ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর স্থানীয় ডোমেরহাট বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে ধারাল ছুরি ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই মারা যান মামুন। তাকে নৃশংসভাবে কুপিয় হত্যা করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় উচ্চ আদালতের বিচারকার্য স্থগিতাদেশ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। আসামি পক্ষের করা উচ্চ আদালতের রিট পিটিশন দায়ের করার প্রেক্ষিতে মামলার চার্জ শুনানি স্থগিতাদেশ দেন। ফলে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। আর চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিজ দলের নেতাকর্মীরা। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আজও বিচার পায়নি স্বজনরা। উল্টো আসামিদের অব্যাহত হুমকি-ধমকি আর মামলা তুলে নেওয়ার চাপে শঙ্কিত পরিবার।

নিহত খলিলুর রহমান মামুন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের ডোমেরহাট গ্রামের মো. খায়রুজ্জামান সরকারের ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোকলোর বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করেন।

এরপর নিজ এলাকা রামজীবন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পারিবারিকভাবে আ. লীগ পরিবারের হওয়ায় স্থানীয় জামায়াত-শিবির কর্মীদের রোষানলে পড়তে হয় তাকে। ছাত্রলীগের এ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই-নিরস্ত্র) পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। চাকরিতে যোগ দিতে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বিধিবাম! প্রশিক্ষণে যাওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে জামায়াত-শিবির কর্মীদের হামলায় নিহত হন ছাত্রলীগের এই নেতা।

হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই খালেদ রেজা বাবুল। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে জামায়াত-শিবিরের এজাহার নামীয় ২২ জন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এরপর চার্জ গঠনের শুনানির জন্য মামলাটি প্রক্রিয়াধীন ছিল। কিন্তু ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এই মামলার বিচারকার্য শুরু হয়নি। ফলে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন মামলার আসামিরা। মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন আসামিরা।

ভুক্তভোগী মামুনের পরিবার বলছেন, দীর্ঘ ৯ বছরেও তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার পাননি। উল্টো মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আসামিরা। এতে শঙ্কা আর ভয় নিয়ে এখনো বিচার পাওয়ার আশায় স্বজনরা। চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচারকার্য শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন পরিবার।

অন্যদিকে, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারকার্য স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন তিন আসামি। তাদের রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতের রিভিশন পেন্ডিং আদেশ দেন বিচারক। ফলে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশের কারণে মামলাটির যাবতীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে, আসামিদের করা রিট পিটিশনের বিরুদ্ধে আপিল করেন মামলার বাদি খালেদ রেজা। কিন্তু ২০১৯ সালে করা সেই আপিল শুনানি না হওয়ায় এখনো কোনো আদেশ দেননি উচ্চ আদালত। এতে সকল বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

মামলার বাদী ও নিহত মামুনের বড় ভাই মো. খালেদ রেজা বাবুল বলেন, আমার ভাই বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালেও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে। তখন এলাকায় কেউ ছাত্রলীগ করার সাহসই পেত না। বিএনপি শাসনামলে সে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ছাত্রলীগ ও আমাদের ইউনিয়ন ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করেছে। সে ১/১১ এর সময় সেনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যে মিছিল হয়, সেখানেও অংশগ্রহণ করেছেন। ২০০৯ সালের শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবিরমুক্ত করার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আমার ভাই। ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে সে একবার গুরুতর আহতও হয়েছিলেন। তখন থেকেই সে শিবিরের টার্গেটে পরিণত হন। আর সেই কারণে আমার ভাইকে জীবন দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তারপরও আমি ভাই হত্যার বিচার এখনো পাইনি!

এদিকে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধা সফরে আসেন। ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে নিহত মামুনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। নিহত মামুনের বাবা-মাকে ডেকে সান্ত্বনা দেন শেখ হাসিনা। দ্রুত চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচার শেষ করার আশ্বাস দেন। কিন্তু আজও বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় হতাশ স্বজনরা।

নিহত মামুনের ছোট ভাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক উপ সম্পাদক খালিদ উর রহমান বাদল বলেন, আমার ভাইকে নৃশংসভাবে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ৯ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতদিনেও বিচার হয়নি। হত্যা, গুম ও খুনের রাজনীতি আমরা চাই না। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই নেতা আরো বলেন, একজন ছাত্রলীগ নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। কিন্তু সরকার ক্ষমতায় থাকতেও বিচার পাব না এটা দুঃখজনক। মামলাটি দ্রুত ত্বরান্বিত করতে প্রধামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে দুঃখের কথা বলতে চাই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হোসাইন বিপু বলেন, মামুন সংগঠনের জন্য নিবেদিত কর্মী ছিল। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় আমি তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাত্রলীগের সভাপতি বানিয়েছিলাম। তার হত্যাকাণ্ড খুবই নৃশংস এক ঘটনা ছিল। অথচ যারা দোষী তাদের বিচার আজও হয়নি। প্রকৃত অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা কোনোভাবে মানা যায় না।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাইবান্ধা জজ কোর্টের (পি.পি) অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ প্রিন্স বলেন, মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্টে রিভিশন পেন্ডিং আছে। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টের স্টে অর্ডারের কারণে চার্জ হেয়ারিং শুনানি বন্ধ আছে। উচ্চ আদালতের রিভিশন কেস নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে না।

আরো পড়ুন : ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতার মোহে অন্ধ, বেপরোয়া ও মানবিকবোধশূন্য হয়ে পড়েছে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *