জনপ্রতিনিধি থেকে ছাত্রনেতাদের চাঁদাবাজিতে দিশাহারা শিপিং এজেন্টরা

অর্থনীতি ক্রাইম নিউজ দুর্নীতি প্রচ্ছদ শিল্প প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত জাহাজের গার্বেজ ও তেল পরিষ্কার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের জন্য আগ্রাবাদে গড়ে উঠেছে শত শত শিপিং এজেন্সি। এ প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধরে জাহাজের প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের কাজে বাগড়া দিচ্ছে স্থানীয় ১০ প্রভাবশালী চক্র। নেতৃত্বে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ছাত্র নেতারাও। অভিযোগ রয়েছে এ বিষয়ে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করার পরও পরিত্রাণ পাচ্ছে না শিপিং এজেন্সিগুলো।

সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘শিপিং এজেন্সিগুলোকে চাপ প্রয়োগ করে চিঠি নেওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েছি। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’ আগ্রাবাদের ইউনিওশান শিপিং লাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন মজুমদার বলেন, ‘জাহাজের পণ্য সরবরাহের চিঠি দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়তই আমাদের হুমকিধমকি দেওয়া হয়। তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। কথামতো চিঠি না দিলে হুমকি ও নানাভাবে হয়রানি করে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। চিঠি না দেওয়ায় ১৭ জানুয়ারি আমার অফিসে হামলা চালায় এহসান নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্যবাহী জাহাজের মালামাল সরবরাহ, গার্বেজ পরিষ্কার এবং পরিত্যক্ত তেল পরিষ্কারের জন্য পাঁচশর অধিক শিপিং এজেন্সি রয়েছে। যার মধ্যে সিংহভাগের অবস্থানই নগরীর প্রাণকেন্দ্র আগ্রাবাদে। এজেন্সি অফিসগুলো বন্দরের পরিবহন বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিয়ে এ কাজ করে থাকে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলো জাহাজের ক্যাপ্টেনের চাহিদার ভিত্তিতে ভেণ্ডারের মাধ্যমে জাহাজে পণ্য সরবরাহের কাজ করে। জাহাজে পণ্য সরবরাহ, গার্বেজ ও তেল পরিষ্কার এবং মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ ‘চিঠি’ হিসেবে পরিচিত স্থানীয়দের কাছে। জাহাজের পণ্য সরবরাহের কার্যাদেশ ঘিরে গড়ে উঠেছে ১০টি চক্র। এ চক্রগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা টিপু, পিন্টু, জয়দেব, শহীদ, এহসান, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কয়েক নেতা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিও। তারা ভেণ্ডার প্রতিষ্ঠানের হয়ে অগ্রিম চুক্তি করতে শিপিং এজেন্সিগুলোতে চাপ প্রয়োগ করে। অনেকে আবার জোরপূর্বক চুক্তিও সম্পাদন করে। এ চক্রগুলো নিজেরা পণ্য সরবরাহ এবং পরিষ্কারের কাজ না করলেও অন্য ভেণ্ডার প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে। চাপ প্রয়োগ করে চিঠি নেওয়ার পর একেকটি চিঠি ২ থেকে ৫ লাখ টাকায় ভেণ্ডারদের কাছে বিক্রি করেন।

ব্যবসায়ীরা জানান- যারা চিঠির জন্য হুমকি-ধমকি দেয় তাদের কারোর জাহাজে পণ্য সরবারহ, গার্বেজ এবং তেল পরিষ্কারের কাজ করে না। তারা জোরপূর্বক চিঠি আদায় করার পর তা অন্যদের কাছে বিক্রি করে। তারা বড় জাহাজের চিঠি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা এবং ছোট জাহাজের চিঠিগুলো দেড় থেকে ২ লাখ টাকা বিক্রি করে।

আরো পড়ুন : চাকরি মেলায় ৪০টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন স্নাতক পাস শিক্ষার্থীরা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *