চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: মো. নূর নবী ও মো. হোসেন দুই বন্ধু। বয়স বড়জোর ১৪ বা ১৫ বছর। বাসা ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকায়। গত সোমবার হোসেনের জন্মদিন উদ্যাপন করতে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম আসে দুই বন্ধু। কিন্তু জন্মদিন আর উদ্যাপন করা হলো না। শুক্রবার লাশ হয়ে ঢাকায় ফিরল নূর নবী। আর হোসেনের কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকার একটি সড়কের পাশ থেকে নূর নবীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথায় ও বুকে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার নূর নবীর পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক। মুঠোফোনে আর্থিক সেবার একটি নম্বরে ওই দিন পাঁচ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু অপহরণকারীরা সেই টাকা দোকান থেকে নিয়ে যায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে নূর নবীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান হোসেন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
রমজান বলেন, গত সোমবার তাঁর ছোট ভাই নূর নবী ও তার বন্ধু হোসেন বাসা থেকে বের হয়। পরে তারা জানতে পারেন হোসেনের জন্মদিন উদ্যাপন করার জন্য বন্ধুকে নিয়ে হোসেন চট্টগ্রামে গেছে। তাঁরা ভেবেছিলেন, দু–এক দিন পর ছোট ভাই বাসায় ফিরে আসবে। চার দিন পর লাশ হয়ে ফিরেছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রমজানের বাবার মুঠোফোনে একটি কল আসে। বলা হয়, নূর নবীকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। নইলে মেরে ফেলা হবে।
রমজান হোসেন বলেন, তাদের কাছে এত টাকা নেই। ভাইকে বাঁচাতে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে পাঁচ হাজার টাকা পাঠানো হয়। এরপর আর কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পরে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারেন, ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে।
মুক্তিপণ পাঠাতে নগরের ২ নম্বর গেট মেয়র গলি এলাকার একটি দোকানের নম্বর দেওয়া হয় নূর নবীর বাবার কাছে। ওই দোকানের মালিক মো. সুজন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে এক যুবক দোকানে এসে মুঠোফোনে লেনদেনের নম্বর চান। পরে তাঁকে নম্বরটা দেওয়া হয়। বেলা দুইটার দিকে ওই নম্বরে পাঁচ হাজার টাকা আসে। কিন্তু ওই যুবক সেই টাকা নিতে দোকানে আর আসেননি। তাঁকে আগে কখনো এলাকায় দেখা যায়নি। তাঁর গায়ের রং শ্যামলা, মুখে মাস্ক ছিল।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। দুই কিশোর চট্টগ্রামে এসে অপহরণের শিকার হয়েছে। তাদের পরিচিত কেউ এই কাজে জড়িত, নাকি পেশাদার অপহরণকারীরা এই কাজ করেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
সন্তোষ কুমার চাকমা আরও বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে নামার পর নূর নবী ও হোসেনকে হাসিখুশি দেখা গেছে। তাঁরা ঢাকা থেকে অপহৃত হয়ে এলে হাসিখুশি থাকত না। ধারণা করা হচ্ছে, দুই কিশোর চট্টগ্রামে ঘোরাঘুরির সময় কেউ বুঝতে পারে, তারা এই শহরে একা এসেছে। পরে তাদের পরিবারের নম্বর নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। চাহিদামতো মুক্তিপণ না পাওয়ায় ছুরিকাঘাতে একজনকে খুন করে।
অপর কিশোর কোথায় আছে তা তার পরিবার জানে না জানিয়ে ওসি সন্তোষ চাকমা বলেন, তাকে খুঁজে পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
নূর নবীর বাবা গোলাম রসুল জানান, রান্নাবান্না (বাবুর্চি) করে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। ৫০ হাজার টাকা কোথা থেকে দেবেন। ছেলে বন্ধুর সঙ্গে চট্টগ্রাম এসে লাশ হলো। আর কোনো বাবার ছেলে যাতে লাশ না হয়।
আরো পড়ুন : শোকের মাসে কালো ব্যাচ পরিধান করেননি ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা