২৪ অক্টোবরের আগে কোনো কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। দলটি দুর্গাপূজার কথা বললেও বাস্তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরো পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত কর্মসূচি দিতে চায় তারা। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোন বিতর্কিত পরিস্থিতির দায় নিতে চায় না দলটি।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ১৭ দিনের কর্মসূচি কয়েকটি জেলায় রোড মার্চ ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এরপর বিএনপি ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত নতুন কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে ৭ অক্টোবর ঢাকায় শিক্ষক সমাবেশ, ৯ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরে সমাবেশ ও মিছিল, ১২ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগের এক দফার দাবিতে ঢাকায় ছাত্র কনভেনশন, ১৪ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরে অনশন, ১৬ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় যুব সমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় জন সমাবেশ। এই কর্মসূচি বিএনপির সঙ্গে যে ৩৭টি দল আছে তারাও যুগপৎভাবে পালন করবে।
২০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পাঁচদিন দুর্গাপূজার কারণে ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির কোনো কর্মসূচি থাকবে না।
কিন্তু বিএনপি গত ১৭ দিনের কর্মসূচি শেষে বৃহস্পতিবার অবরোধ, ঘেরাও ও হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে আগে জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল অক্টোবর মাসেই তারা সরকারের পতন ঘটাতে চায়। কারণ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে আন্দোলন জমানো কঠিন হয়ে পড়বে। সবাই তখন নির্বাচনমূখী হবে। তাই অক্টোবরেই যা করার করতে হবে। তবে এখন বিএনপি নেতারা বলছেন, তফসিল ঘোষণা হলেই নির্বাচন হয়ে যাবে তা নয়। অতীতে তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচন না হওয়া বা পেছানোর নজির আছে। আর সরকারের পতনের জন্য সাত-আট দিনের কঠোর আন্দোলনই যথেষ্ট।
সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়েই বেশি কথা হয়েছে। আর আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করার ব্যাপারে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চাপের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। দুর্গাপূজায় যাতে কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করে সরকার বিএনপির ওপর দায় চাপাতে না পারে সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পূজার পাঁচদিন কর্মসূচি দেয়া হয়নি। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়েছে। একজন দায়িত্বশীল বিএনপি নেতা জানান, বাইরের ওই চাপ বাংলাদেশের জন্য খারাপ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তার দায় যাতে বিএনপির ওপর না পড়ে সেজন্য বিএনপি সতর্কভাবে কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশররফ হোসেন বলেন,”আমরা সরকারের ওপর বিদেশি চাপের দিকে তাকিয়ে আন্দোলন করছি না। আমরা বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিরাও বাংলাদেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি করেছে এখন। আর আমরা আন্দোলন করছি দীর্ঘ সময় ধরে। আমরা জনগণের শক্তিতে আন্দোলন করছি।”
তিনি জানান,”তফসিল দিলে আন্দোলন জমবে না একথা ঠিক না। অতীতে তফসিল দেয়ার পরও নির্বাচন স্থগিত বা পিছিয়ে যাওয়ার নজির আছে।”
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন,”বিএনপি আন্দোলন থেকে পিঠটান দেয়নি। একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসবের কারণে পাঁচ দিন আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হয়নি। বিএনপি ১৭ দিন টানা যে কর্মসূচি পালন করেছে তার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই। আবার নতুন কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। পূজার পর আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না।”
এদিকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ( এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন,”সরকারের পতন ঘটানোর জন্য সাত-আট দিনের আন্দোলনই যথেষ্ট। এটা পূজা শেষ হলে ২৪ তারিখের পর থেকে দেখতে পাবেন। হরতাল, অবরোধ ঘেরাও সবই থাকবে। এই ধরনের আন্দোলন বেশি দিন ধরে করা যায় না। তাই পূজার পরই কঠোর আন্দোলন করা হবে। পূজার সময় সরকার যাতে কোনো ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধীদের ওপর দায় চাপাতে না পারে সেই জন্যই আমরা ওই সময়ে কোনো কর্মসূচি রাখিনি। আর তাদের উৎসবকে আমরা সম্মান দেখিয়েছি।”
তিনি বলেন,”নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার পরও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। সরকারের পতন তফসিল ঘোষণা করা না করার ওপর নির্ভর করে না।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,”আমাদের একটা সমস্যা হয়ে গেছে। যখন আমরা অক্টোবরে চূড়ান্ত সরকার পতনের কর্মসূচির কথা বলছিলাম তখন দুর্গাপূজার কথা কেউ খেয়ালই করিনি। এখন পূজার পরে বড় কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। তবে হরতালের ব্যাপারে বিএনপি দ্বিধায় আছে। আমরা অবশ্য হরতাল চাই। কারণ হরতাল করার সুবিধা আছে। হরতালে হাইড অ্যান্ড সিক-এর সুবিধা আছে। ঘেরাও, অবরোধে দেখা গেলো ৫০ জনকে গুলি করে মারা হয়েছে। তারপর আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব কী না সেটা ভাববার বিষয় আছে।”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,”আন্তর্জাতিক চাপকে আমরা রাজনৈতিকভাবে ছোটোখাটো কাজে লাগাতে পেরেছি। সরকার পতন বা বড় কোনো বিষয়ে কাজে লাগাতে পারছি না।”
(এই প্রতিবেদনের সকল দায়ভার জার্মানি সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের। ডয়চে ভেলে বাংলার পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন হারুন উর রশীদ স্বপন)
আরো পড়ুন : মহানবীর রওজা জিয়ারতে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব