গাজীপুর প্রতিনিধি: আনুষ্ঠানিকভাবে দলের বহিষ্কারাদেশ থেকে মুক্তি পেলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বহিষ্কৃত মেয়র এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর অনুসারীরা এখন আগের মতো চাঙা হয়ে উঠেছেন। এখন তাঁদের দাবি, ফিরিয়ে দেওয়া হোক জাহাঙ্গীরের মেয়র পদও।
আরো পড়ুন : অবশেষে আওয়ামী লীগের ‘ক্ষমা পেলেন’ জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলমকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে-এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ গত শনিবার রাত থেকে ভিড় করছেন জাহাঙ্গীরের বাসায়। এ ছাড়া তাঁকে অভিনন্দন ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট ও স্ট্যাটাস দিচ্ছেন সমর্থকেরা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য আফজাল হোসেন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমকে ছাড়া গাজীপুরের উন্নয়ন থেমে আছে। তিনি দলে ফিরেছেন, কিন্তু এখন আমরা তাঁকে মেয়র পদে ফিরে পেতে চাই গাজীপুরের উন্নয়নের স্বার্থে।’
ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গাজীপুরের জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা এক চিঠিতে এই ক্ষমা করার কথা জানানো হয়েছে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় দলের চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দল আমাকে ক্ষমা করে আবার দলে ফিরিয়ে আনায় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। আমি দলের জন্য ও দেশের জন্য কাজ করে যেতে চাই। গাজীপুরের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাব।’ মেয়র পদ ফিরে পাচ্ছেন কবে, জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এরিয়ে যান।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কথোপকথনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। এর জেরে গত বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর আলম। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে।
গতকাল রোববার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের ছয়দানা এলাকায় জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে গিয়ে দেখা যায় পুরোনো দৃশ্য। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ভিড় করছেন। প্রিয় নেতাকে দেখতে ও তাঁর মুখ থেকে কিছু শুনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন তাঁরা। কেউ বাড়ির ফটকে, কেউ নিচতলায়, কেউ ওপরতলায় অবস্থান নিয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা উৎসুক জনতা, তাঁরা এসেছেন ভেতরের পরিবেশ দেখতে। এ সময়ে নেতা–কর্মীদের জাহাঙ্গীরকে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতেও দেখা গেছে। অথচ জাহাঙ্গীর দলীয় পদ ও মেয়র পদে বরখাস্ত হওয়ার পর চিত্রটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘মেয়র জাহাঙ্গীরকে পছন্দ করতাম, কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছিল এ জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। তবে দল যেহেতু তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছে, এখন তাঁর সঙ্গে চলতে আর কোনো সমস্যা নেই। শুধু আমি নয়, আমার মতো মহানগরীর হাজার হাজার নেতা–কর্মী শুধু দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তাঁর থেকে দূরে ছিলেন।’
আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলম কবে ফিরছেন, তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অনেকে বলছেন, দলে ফেরানোর পাশাপাশি খুব শিগগির সিটি করপোরেশনকে ভারমুক্ত করা হবে, যার ইঙ্গিত এরই মধ্যে দিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী। জাহাঙ্গীর আলমও বলছেন, স্থানীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামীতে দল ও স্থানীয় মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন।
জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কারের পর প্যানেল মেয়র করা হয় ৪৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান ওরফে কিরণকে। দলীয় নেতা–কর্মীরা জানান, জাহাঙ্গীর আলমকে যখন মেয়র থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়, তখন গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ব্যাপক উন্নয়ন কাযক্রম চলছিল। বিশেষ করে রাস্তাঘাটের। কিন্তু তিনি বরখাস্ত হওয়ার পর বড় বড় প্রকল্পগুলোর কাজ থেমে আছে। জাহাঙ্গীর চলে যাওয়ার পর আজ পর্যন্ত নগরীতে মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি।
গাজীপুরের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কাশিমপুর এলাকা অনেক রাস্তার কাজ থেমে আছে। আমরা খুবই দুর্ভোগের মধ্যে আছি। তাই জাহাঙ্গীরকে আমার মেয়র হিসেবে চাই। তিনি দায়িত্ব পেলেই থেমে থাকা কাজগুলো শুরু হবে।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল জানালেন, জাহাঙ্গীর আলম দলে ফেরার খবর পেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর চিঠিও দেখেছেন। এখন জাহাঙ্গীরকে নিয়ে আপনারা কীভাবে কাজ করবেন জানতে চাইলে আতাউল্লাহ বলেন, ‘তাঁকে নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই, অন্যান্য নেতাদের মতোই তিনি দলের জন্য কাজ করবেন। দলের কর্মসূচিতেও থাকবেন।’