জীবনযুদ্ধে হার নামানা ভোলাহাটের চার জয়িতার সাবলম্বী হওয়ার গল্প

ওকে নিউজ স্পেশাল নারী নারী অন্যান্য প্রচ্ছদ সফলতার গল্প হ্যালোআড্ডা

ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে সমাজের ও পরিবারের নানা অসংগতি, নির্যাতন এবং আর্থিক অনটনের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবনযুদ্ধে হার মানেননি চার নারী। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের চার জয়িতার ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম স্থানীয় নারীদের কাছে অনুপ্রেরণার স্মারক হয়ে আছে। উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শোনালেন চার নারী। সফলতার কথা বিবেচনা করে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র দিয়ে পুরস্কৃত করেছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।
জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার গল্প শোনালেন উপজেলা খাড়বাটরা গ্রামের মো. ইলিয়াস আলীর মেয়ে মোসা. উম্মে কুলসুম। তিনি বলেন, তাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস ছিলেন দরিদ্র বাবা। সামান্য আয়ে কুলিয়ে উঠতে না পেরে বাল্যবিয়ে দিয়ে দায় সারেন। শ্বশুরবাড়িতে যৌতুক দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় শ্বশুরবাড়ির লোকরা। তার নেশাগ্রস্ত স্বামীও বাদ যায় না। তিনি আরো জানান, নির্যাতন সইতে না পেরে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আবার বাবার দরিদ্র পরিবারে চলে আসেন। পরে উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ নেন। এদিকে একটি এনজিওতে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে ছাগল, হাঁস,মুরগী কিনে এখন স্বাবলম্বী হয়ে সফল ভাবে জীবন যাপন করছেন উম্মে কুলসুম।
অপরজন গোপিনাথপুর গ্রামের মো. বেলাল উদ্দিনের স্ত্রী সারমিন ফেরদৌস। তিনিও অসচ্ছল পরিবারের সন্তান, লেখাপড়া করেছেন ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত। ওই বয়সেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। অভাবের সংসারে বড় হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। এরই মধ্যে কোলজুড়ে আসে দুই সন্তান। কিন্তু সামনে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই থামাননি মাহবুবা। প্রতিবেশীর কাছ থেকে শুনে উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেন। সেলাই মেশিনের কাজ শেখেন। দুই সন্তানকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে সক্ষম হন। তারা এখন সরকারি চাকরি করেন। মাহবুবা জানান, তিনি এখন খুব সুখী মানুষ।

অন্যদিকে, জামবাড়ীয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মোঃ নয়নের স্ত্রী মোসা. মাহামুদা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি খুব মেধাবী ছিলাম। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে ১ম স্থান হতাম। পঞ্চম শ্রেণীত পড়া অবস্থায় দিনমজুর ছেলের সাথে বিয়ে হয় আমার । সংসারের টানাপড়েনের কারণে অভাবের কারণে খাওয়ার জুটতোনা। হতাশায় দিন কাটতে শুরু করে। স্বামীর অনুমতি নিয়ে শুরু করি পড়া শুনা। এইচএসসি পাশ করি। আমাদের একটি শিশু কন্যার জন্ম হয়। আমি একটি কেজি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি। দর্জির কাজ করি। প্রাইভেট পড়ায়। এরপর বাল্যবিয়ে রোধসহ বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিচ্ছি। এখন বেশ ভালোই আছি।

ভোলাহাট সদর ইউনিয়নের তেলীপাড়া গ্রামের দিনমজুর মো. কাশেম আলীর মেয়ে মনিষা খাতুন। তারা ৩ বোন-১বোন। দারিদ্র্যতার অকূল দরিয়ার মধ্যেই লালন পালন করেন দিনমজুর বাবা। হঠাৎ বাবা মারা যান। বাবার বড় মেয়ে হিসেবে সংসারের সকল দায়িত্ব আমার উপর আঝড়ে পড়ে। এসময় উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে সেলাই মেশিনের কাজ শিখে সেলাইয়ের কাজ শুরু করি এবং পড়া শুনা চালিয়ে যায়। সংসারো চালাই পড়া শুনাও করি। এখন আমি ডিগ্রী ২য় বর্ষে পড়ি। এছাড়াও নক্সি কাঁথা সেলাই করে মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করে বেশ সফল।

এই চার জয়িতার জীবন সংগ্রাম সবাইকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। এমনটাই দাবি করলেন ভোলাহাট উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা।

গোলাম কবির-ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আরো পড়ুন : আজ ২২ আগস্ট: আজকের দিনে জন্ম-মৃত্যুসহ যত ঘটনা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *