চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে হামাস-ইসরাইলের যুদ্ধ। ইসরাইলে হামাসের হামলার পেছনে মূল কারিগর বিবেচনা করা হচ্ছে গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দায়েফকে। ফিলিস্তিনি পঙ্গু এই সমর নেতা গাজার একটি শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যোগ দেন ইসরাইলবিরোধী লড়াইয়ে। একপর্যায়ে এসে পরিণত হন আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ দায়েফ ২০০২ সালে আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান নিযুক্ত হন। ফিলিস্তিনি এই যোদ্ধা ইসরাইলি বাহিনীর জন্য মূর্তিমান ত্রাস ছিলেন। ইসরাইলি বাহিনী দায়েফের ওপর অন্তত ৭ দফা অতর্কিত হামলা চালায়। এসব হামলায় তার দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রী মারা যায়। গুরুতর আহত হন তিনি। তার এক চোখ, এক পা এবং এক হাত হারাতে হয় এসব হামলায়।
হামাসের প্রয়াত আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন মোহাম্মদও ইসরাইলি হামলায় পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন। তারপরও তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করে হামাসের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে ২০০৪ সালে শেখ ইয়াসিন ইসরাইলি হামলায় নিহত হন। মোহাম্মদ দায়েফও শেখ ইয়াসিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে হুইল চেয়ারে বসেই আল-ক্বাসাম ব্রিগেডকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা গাজী হামাদ মোহাম্মদ দায়েফের বিষয়ে বলেন, ‘তিনি খুবই দয়ালু।’ তিনি আরও জানান, দায়েফের নামের অর্থ হলো- যাযাবর সম্প্রদায় যারা জীবন ধারণের জন্য ক্রমাগত জায়গা পরিবর্তন করে। মোহাম্মদ দায়েফও ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করেন।
গাজী হামাদ বলেন, মোহাম্মদ দায়েফ খুবই সুরসিক কিন্তু তিনি তার লক্ষ্যে অটল। তিনি তার হামাসের শুরুর জীবন থেকে সামরিক দিকে মনোযোগী ছিলেন।
দায়েফ ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে লড়েছেন ফিলিস্তিনের হয়ে। সেই সময় থেকেই তিনি তার লক্ষ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যান। নিজের লক্ষ্যের বিষয়ে আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের এই নেতা বলেন, আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপরাধ, দখলদারদের বেলেল্লাপনা ও আন্তর্জাতিক আইন-বিধি অস্বীকার, দখলদারদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এসব বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে শত্রু উপলব্ধি করতে পারে যে, তারা আর হিসাব না করে আনন্দ করতে পারবে না।
মোহাম্মদ দায়েফ ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংলাপ-রাজনীতির পরিবর্তে তেল আবিবের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতেই বেশি আগ্রহী। সেই ধারাবাহিকতায় দায়েফ ২০১০ সালে একটি নিবন্ধ লিখেন। সেখানে তিনি চলমান সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে, কিভাবে ইসরাইলের সঙ্গে লড়তে চান তা তুলে ধরেন।
সেই নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘আল কুদস (জেরুজালেম), আল আকসা (মসজিদ), ভূমধ্যসাগর তীর থেকে জর্ডান নদী পর্যন্ত সব শহর ও গ্রাম এবং এর উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত সব এলাকাই আমাদের থাকবে। আপনাদের এখানে (ইসরাইল) এর এক ইঞ্চিরও অধিকার নেই।