২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয় ক্রিকেট। তখন গুয়াংজুর মাঠ তৈরি থেকে পুরো আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ইনচন এশিয়ান গেমসেও ভেন্যু তৈরি থেকে শুরু করে পুরো আয়োজনের তদারকি করতে দেখা গেছে তাকে। ইন্দোনেশিয়ায় ক্রিকেট ছিল না। এক আসর বিরতি দিয়ে হাংজুতে ফিরেছে খেলাটি। সেখানেও জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে এবার বুলবুল নয়, এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট ফেরায় বড় অবদান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল ইসলাম পাপনের। তিনি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়েই ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হয় হাংজু এশিয়াডে। আর এখানকার স্টেডিয়াম তৈরিতে বিসিবি’র সঙ্গে বড় অবদান রাখেন বাংলাদেশের কিউরেটর জসিমউদ্দিন।
জিজিয়াং ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির এক কোণে ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
যার একপাশে গ্যালারি, বাকি তিন পাশ নেট দিয়ে ঘেরা। স্টেডিয়ামটির ভেতরে ঢুকতে যে কারোরই চোখ জুড়িয়ে যাবে। এই সুন্দর মাঠটি তৈরি করতে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ। তাইতো চীন ক্রিকেট বোর্ড এবং গেমস আয়োজক কমিটি উভয় বাংলাদেশকে এজন্য বিশেষভাবে স্মরণ করছে এই আয়োজনে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন ঢাকা থেকে হাংজুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ডস সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের সভাপতির একটা কমিটমেন্ট ছিল গ্রাউন্ডস করে দেয়ার। তাই বিসিবি’র পক্ষ থেকে গামিনি (প্রধান কিউরেটর) একবার গিয়েছে এবং গামিনি কিউরেটরদের পাঠিয়ে তত্ত্বাবধায়ন করেছে।’ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি ছিলেন। তিনি সভাপতি থাকাবস্থায় অলিম্পিক কাউন্সিল অফ এশিয়া ২০২২ হাংজু এশিয়ান গেমসে ক্রিকেটকে অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনা প্রকোপ শুরু হয়। অনেক দিন বাংলাদেশ-চীন যাতায়াত স্থগিত ছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে কিউরেটর চীনে পাঠানো কঠিন ছিল। সেই সময় হংকংয়ের চিফ কিউরেটর বাংলাদেশের জসিমউদ্দিন হাংজুর এই ক্রিকেট গ্রাউন্ডসে সম্পৃক্ত হন।
বাংলাদেশের অন্যতম দক্ষ কিউরেটর জসিমউদ্দিন। দেশের অনেক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচ তার হাতে গড়া। গত এক যুগের বেশি সময় ক্রিকেটে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পিচ তৈরি করছেন। হাংজু এশিয়ান গেমসের পিচ ও গ্রাউন্ডস সম্পর্কে ম্যাকাও থেকে মুঠোফোনে তিনি বলেন,‘ করোনার সময় বাংলাদেশ থেকে চীনে আসা সম্ভব ছিল না। আমি হংকং থাকায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও চীন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমি দু’জন কিউরেটরকে নির্দেশনা দিয়ে হাংজু পাঠাই এবং পরবর্তীতে আমিও গিয়েছি একাধিকবার। এক বছরের বেশি সময় লেগেছে মাঠ ও পিচ তৈরিতে।’ এশিয়ান গেমসের আগে হাংজুর জিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হয়েছিল ইস্ট এশিয়া ক্রিকেট কাপ। সেই টুর্নামেন্টের আগে এসেছিলেন বিসিবি’র প্রধান কিউরেটর গামিনি সিলভা। যদিও এর আগেই মাঠ ক্রিকেট উপযোগী হয়। এশিয়ান গেমসে সর্বশেষ দুই ক্রিকেট আসরের সঙ্গেও ছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে কোরিয়ার ইনচোনে পিচ তৈরি করেছিলেন খোকন আর ২০১০ চীনের গুয়াংজুতে এশিয়ান গেমসের পিচ ও সামগ্রিক মাঠ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জসিম। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গুয়াংজু গেমসের পিচ তৈরি, মাঠের সকল কিছুতেই আমি ছিলাম। হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশেই অসংখ্য পিচ তৈরি করেছি। বুলবুল ভাই এসিসিতে থাকাকালীন এসব কাজ হয়েছে।’
১৯৮৪ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে কাজ করা শুরু করেন জসিম। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন তিনি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামও জসিমের হাতেই তৈরি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার ছেলেও হংকংয়ে কিউরেটর হিসেবে কাজ করছেন।
আরো পড়ুন : খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে