গাজীপুর প্রতিনিধি : জেল কোড অনুযায়ী প্যারোলে মুক্তি পাওয়া বিএনপি নেতা আলী আজমকে হাতকড়া ও ডাণ্ডা-বেড়ি পরানো হয়েছে, তিনি কোনো দলীয়, না সাধারণ মানুষ—এসব বিবেচনা করা হয়নি। বুধবার ইত্তেফাককে এ কথা বলেছেন গাজীপুর জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার বজলুর রশিদ। উল্লেখ্য, ডাণ্ডা-বেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়ার খবরটি বুধবার দেশে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
জেল সুপার আরও বলেন, প্যারোলে মুক্তির আদেশের আবেদনপত্রের পাশে পুলিশ স্কটের দায়িত্বরত এসআই কামাল হোসেন ‘ডাণ্ডা-বেড়ি প্রয়োজন’ উল্লেখ করে আবেদন করেন। তবে পুলিশ আবেদন না করলেও জেল কোড অনুযায়ী তিনি ডাণ্ডা-বেড়ি লাগাতেন। কারণ জানাজার নামাজ থেকে আসামি উধাও হয়ে গেলে দায়দায়িত্ব জেল কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তাতো। এটি বিবেচনা করে তিনি ঐ সিদ্ধান্ত নেন। তাছাড়া প্যারোলে মুক্তি পাওয়া কোনো আসামিকে এ পর্যন্ত তিনি ডাণ্ডা-বেড়ি ছাড়া মুক্তি দেননি।
আরো পড়ুন : হাতকড়া আর ডাণ্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়ালেন আলী আজম
এ প্রসঙ্গে গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, পুলিশ শুধু নিরাপত্তা প্রহরায় আসামিকে কারাগার থেকে বাড়িতে নিয়ে এবং জানাজা শেষে ফেরত দিয়ে গেছে। ডাণ্ডা-বেড়ি বা হাতকড়া লাগানো না লাগানো জেল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। এ জন্য পুলিশের কোনো দায় নেই।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, যথাযথ নিয়ম মেনে প্যারোলের মুক্তির আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজমের মা সাহেরা বেগম (৬৭) বার্ধক্যের কারণে গত রবিবার বিকালে মারা যান। শেষ বারের মতো মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে গত সোমবার বিকালে জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেন জেলা প্রশাসক। মুক্তি পেয়ে সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজাস্থলে উপস্থিত হন তিনি। বেলা ১১টায় জানাজা শুরু হয়। মায়ের দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডান্ডা-বেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন আলী আজম।
আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান বলেন, জানাজা পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডাণ্ডা-বেড়ি খুলে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ খুলে দেয়নি। এ সময় উপস্থিত লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে মায়ের জানাজায় আলী আজমের ডাণ্ডা-বেড়ি ও হাতকড়া পরিহিত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
আতাউর আরও জানান, আধাঘণ্টার মতো তার ভাইকে সেখানে অবস্থান করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার আবেদন করলেও পুলিশ তা গ্রাহ্য করেনি। এমনকি তাকে পানি পানেরও সুযোগ দেয়নি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বলেন, মায়ের মৃত্যুর খবরে আলী আজমকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু দুঃখের বিষয় জানাজার সময়ও তার হাতকড়া ও ডাণ্ডা-বেড়ি খুলে দেওয়া হয়নি। একটি মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে একজন রাজনৈতিক নেতাকে এভাবে উপস্থাপন সঠিক হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের আগে গত ২৯ নভেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ককটেল হামলা বিস্ফোরণের অভিযোগে একটি মামলা হয়। মামলায় আলী আজমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করেন বাদী আওয়ামী লীগের অফিস সহকারী আবদুল মান্নান শেখ। ঐ মামলায় গত ২ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন আলী আজম। এর পর থেকেই তিনি কারাগারে বন্দি আছেন। তবে মামলার পরদিন বাদী আবদুল মান্নান শেখ কসম খেয়ে বলেছিলেন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। মামলাও করেননি।
আরো পড়ুন : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর প্রথম বিদেশ সফরে জেলেনস্কি