বাগেরহাট প্রতিনিধি : পাওনাদারের ৬ লাখ টাকা চাওয়ায় পণ্ড হয়ে যায় পিতার নামাজে জানাজা। সেই সুযোগে পাওনাদারের ভয়ে জানাজা না পড়ে পালিয়ে যান পুত্র সন্তানেরা। পরে ৫ ঘণ্টা পর জানাজা পড়ানো হয় উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ তাফালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও তাফালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মাস্টার আজিজুর রহমানের। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল উপজেলা সদর রায়েন্দা ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে। পরিবার ও পাওনাদার সূত্রে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ তাফালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও তাফালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুর রহমান মৃধা স্বাধীনতা পরবর্তী সময় শিক্ষকতা শুরু করেন। গত ২০ বছর পূর্বে প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানদের ফেলে রায়েন্দা বাজারস্থ পাঁচরাস্তা এলাকায় নতুন বাড়ি করে ২য় স্ত্রী নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
প্রথম স্ত্রীর খোঁজখবর রাখা বন্ধ করে দেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তার ২ পুত্র ও ৩ কন্যা রয়েছে। ২য় স্ত্রীর সংসারে ২ পুত্র ও ১ কন্যা নিয়ে তার সংসার। তার সম্পত্তির বেশিরভাগ অংশ বিক্রি করে প্রায় কোটি টাকার মতো ২য় স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা দেন। এমনকি চাকরি থেকে অবসর নেয়া অর্থও দ্বিতীয় স্ত্রী ভোগ দখল করেন।
বঞ্চিত হয় প্রথম ঘরের স্ত্রী ও সন্তানরা। গত দুই বছর পূর্বে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে মাস্টার আজিজুর রহমান। ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। গত মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় রায়েন্দা বাজারস্থ পাঁচরাস্তা এলাকার বাসায় মৃত্যুবরণ করেন আজিজুর রহমান। মৃত্যুর পর বড় স্ত্রী ও সন্তানেরা তাদের বাড়িতে বাবার মৃত দেহ দাফন করার দাবি করলে দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানেরা তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেয়। পরে গতকাল সকাল ১০টায় নামাজে জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়।
জানাজা শুরু করবে ঠিক সেই মুহূর্তে উপজেলার চাল রায়েন্দা গ্রামের অপু ১ লাখ ৫০ হাজার, জামিনি কান্ত ৬৫ হাজার টাকা, অমলচন্দ্র ২৭৫০০ টাকা, বিকাশ ৬৫০০০ টাকাসহ রায়েন্দা বাজারের ৫-৬ জন ব্যবসায়ী প্রায় ৬ লাখ টাকা পাওনা দাবি করেন। পাওনা টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত জানাজা পড়ানো যাবে না বলে তারা বলেন। এ কথা শোনার পরে তার পুত্র সন্তানেরা বাবার মরদেহ জানাজা মাঠে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর-ই আলম সিদ্দিকীকে অবহিত করলে তিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, প্রথমিক শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সমাজ সচেতন ব্যক্তিদের দায়িত্ব প্রদান করেন।
ঘটনার ৫ ঘণ্টা পর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে তারা কিছু টাকা দেয়ার সম্মতি দেয়ায় ও বাকি টাকা ভাইস চেয়ারম্যান আদায় করে দেবেন এই আশ্বাসে পাওনাদাররা জানাজা পড়ার অনুমতি দেয়। জোহর নামাজ বাদ দুপুর ২টায় তার জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে তাকে প্রথম স্ত্রীর বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ তাফালবাড়ী পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ব্যপারে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে ও সকলের সহযোগিতায় তিনি এ কাজটি সমাধান করতে পেরেছেন।