স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকায় দিন দিন বাড়ছে নিত্যনতুন অপরাধ। আবার প্রযুক্তির উন্নতি সাধনের ফলে বেড়ে গেছে সাইবার ক্রাইম। অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ঢাকা মহানগর পুলিশ সিডিএমসি (ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) বিস্তারিত করে নতুনভাবে হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে। হালনাগাদের বিষয়টির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ঢাকার ৫০টি থানার ২৫৩টি বিট পুলিশের প্রধানদের।
আগামী জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আপডেট হালনাগাদের নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। এতে ব্যক্তির নাম- ঠিকানা, পেশা, আগে কোন পেশায় ছিলেন, তার রাজনৈতিক অবস্থান, পূর্বে ও বর্তমানে কী মামলা আছে, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা, পূর্বের ও বর্তমানের পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে। ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও জননিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) একেএম হাফিজ আক্তার মানবজমিনকে জানান, ‘বিভিন্ন তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সিডিএমএস একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাকে আরও বিস্তারিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের কিছুু ইতিবাচক উদ্যোগের কারণে অপরাধপ্রবণতা আগের চেয়ে অনেকটা কমে এসেছে। অপরাধ যাতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে সেজন্য ডিএমপি’র ৮টি জোনের ডিসি, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ৮টি বিভাগের ডিসি ও ৫০টি থানার ওসিদের ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সিডিএমসি’র ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এ নিয়ে কয়েকদিন আগে সিডিএমসির ব্যাপারে ডিএমপিতে একটি সভা হয়েছে।
সেখানে সভাপতিত্ব করেন একেএম হাফিজ আক্তার।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে ৫০টি থানা এবং ৮টি উপ-পুলিশ কমিশনারের অফিসে সিডিএমসি (ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) বিস্তারিত নথিপত্র আছে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পুলিশ কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য নিয়ে কাজ করে থাকেন। এতে মামলা এবং অভিযোগ দায়ের করার ক্ষেত্রে তারা কিছুটা সুবিধা পান। আইনের ধারাগুলো শক্তভাবে সংযোজন করেন। এই তালিকায় সংশ্লিষ্ট এলাকার দুর্বৃত্ত, টেন্ডারবাজ, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে সমাজে বিশৃঙ্খলাকারীদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, আগে এবং পরের পেশা, তাদের নামে কতোটি মামলা রয়েছে এবং মামলাটি সর্বশেষ কী অবস্থায় আছে তার বিস্তারিত তথ্য সেখানে রয়েছে।
কিন্তু, পুলিশের থানাকেন্দ্রিক বিভিন্ন ব্যবস্থার কারণে গত দেড় বছর ধরে সেই নথিপত্রগুলোতে আপডেট তথ্য সংযোজন হয়নি। এতে সাম্প্রতিক সময়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে পুলিশকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। গত দেড় বছরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অপরাধীর সংখ্যা বেড়েছে। ঘটছে নিত্যনতুন অপরাধ। এতে মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। সমাজে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এজন্য ডিএমপি’র পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সিডিএমসি হালনাগাদ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ৫০টি থানার ২৫৩টি বিট পুলিশের প্রধানদের। এর প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের। বিট পুলিশের প্রধানেরা তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। এক্ষেত্রে সে এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয়দের সহযোগিতা নেয়ার জন্য ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, সামনের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ডাটাবেজ অ্যাপডেট করার জন্য জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। কারণ নির্বাচন আসলেই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যায়। দুর্বৃত্তদের আনাগোনা বাড়ে। দুর্বৃত্তরা এক স্থান থেকে আরেক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে অপরাধ করে পালিয়ে যায়। আবার পুরনো দুর্বৃত্তরা আগের অপকর্মে ফিরে আসে। এই বিষয়টি সামনে রেখে এই ক্রিমিনাল ডাটাবেজ অ্যাপডেট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, যারা তালিকা করবেন তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, কোনো অপরাধী যদি তার স্থানে না থাকেন তাহলে তারা কোথায় আছে তা যেন পুলিশ প্রথাগত সোর্স ও ম্যানুয়ালিভাবে ওই অপরাধীর অবস্থান চিহ্নিত করেন। এতে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশের জন্য সহজ হবে বলে জানা গেছে। এই ক্ষেত্রে যাতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, বাড়ির মালিক ও প্রাইভেট সিকিউরিটিদের সহযোগিতার জন্য বলা হয়েছে।