স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৩৬তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন হাবিবুর রহমান। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ডিএমপি’র বিভিন্ন সেবার মান বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর গতকালই হাবিব সাংবাদিকদের সামনে আসেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পাশাপাশি ডিএমপিকে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে কমিশনার বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই আমরা থানা পুলিশের সেবার মান বাড়াতে চাই। ঢাকা শহরকে পুলিশের মডেল হিসেবে যেকোনো সেবা প্রদান ও জবাব দিতে যাতে থানা পুলিশ প্রস্তুত থাকে, সেটি নিশ্চিত করা হবে। আমি মনে করি অচিরেই দেশের মানুষ সেটা দেখতে পারবেন। আমি ঢাকা রেঞ্জে থাকার সময় থানা পুলিশের কার্যক্রম যেভাবে মনিটরিং করা হয়েছে, গারদখানায়ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে মনিটরিং করা হয়েছে, ডিএমপিতে থানা পুলিশের কার্যক্রমও একইভাবে মনিটরিং করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নগরবাসীকে সেবা দিতে এর চেয়েও যদি আরও বেশি কিছু লাগে সেটা করা হবে। কারণ নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে প্রথম ধাপ হচ্ছে থানা। নগরবাসী একটি লোকও যেন কখনোই বলতে না পারেন, সমস্যার সমাধান চেয়েও পাইনি।
কোনো নাগরিককে যেন তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে থানা থেকে বের হতে না হয় সেজন্য থানা পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, মোটিভেশন করা হবে এবং তাদের আচরণগত দিক পরিবর্তনের জন্য যা যা করার সব করা হবে। তারপরও থানা পুলিশের সেবা নিয়ে কখনো কখনো অভিযোগ পেয়ে থাকি। সেসব অভিযোগের যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না তা কিন্তু নয়। থানায় যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই জোনাল অফিসার আছে, এডিসি আছে ডিসি আছে, জয়েন কমিশনার আছে। কমিশনার পর্যন্ত যেন কোনো অভিযোগ না আসে সেজন্য আমি নির্দেশনা দিয়েছি। প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন হচ্ছে এবং সর্বশেষ তেজগাঁওয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।
এই পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, জামিন একটি বিচারিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় একজন অপরাধী আদালত থেকে বিচার পেতে পারে। কিন্তু পুলিশের তখনই করার থাকে যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধে জড়িয়ে পড়ে বা অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করে বা অপরাধ সংগঠন করে। সেই ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, একজন অপরাধী সে ছোট হোক বা বড় হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। যারা জামিনে বেরিয়ে আসছে তাদেরকেও কঠোর মনিটরিংয়ে রাখার জন্য পুলিশের সব ইউনিটে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য ট্রেডিশনাল ক্রাইম থেকে একটু আলাদা ডিএমপি। পুলিশের নৈমিত্তিক কাজ চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ও রাহাজানি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা, জনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু গতানুগতিক ক্রাইমের ধারা বদলে সেটি নতুন দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হলো দেশে ও সারা বিশ্বে প্রযুক্তির উন্নয়ন। সেই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ছাপিয়ে আমাদের নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে সাইবার ক্রাইম। এই সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অনুমতি ছাড়া কোনো সভা-সমাবেশ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজকেও (গতকাল) বিরোধী দলের একটি প্রোগ্রাম রয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে। আমরা যেভাবে অনুমতি দিয়েছি। সেই অনুমতি মেনে নিয়েই তারা কাজ করছে। কোনো সংগঠন যদি অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করতে চায়, ডিএমপি’র অধ্যাদেশে যেই নিয়ম-কানুন রয়েছে সেই নিয়ম-কানুন ভঙ্গ যদি করতে চায় এবং করে, নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ডিএমপি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া বিএনপি এর আগেও অবরোধ করেছে। সামনে যদি আবারো অবরোধে আসে তাহলে আমরা ডিএমপি’র অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।
ভিসা নীতি নিয়ে কমিশনার বলেন, একটি দেশ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, এটি তাদের নিজস্ব বিষয়। সেটি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের চিন্তার কিছু নেই। আমি পুলিশের ভেতর এ ধরনের নীতিতে কোনো চিন্তা দেখিনি। এটি ব্যক্তি পর্যায়ের বিষয়। এটি সংগঠন পর্যায়ের কোনো ব্যবস্থা নয়। সংগঠন হিসেবে ডিএমপি নিরাপদ ঢাকা গড়ার জন্য যতকিছু দরকার তা করছে। মোহাম্মদপুরের গণছিনতাই নিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্য আছে। মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটার পরপরই জড়িত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। সাধারণ মানুষকে তল্লাশির নামে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয়া, মামলা ছাড়া ধরে এনে টাকা-পয়সা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ডিএমপি’র কোনো সদস্য অপরাধে জড়ালে আপনি কী উদ্যোগ নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, অপরাধী পুলিশ হোক আর পুলিশের বাবা হোক, তার পরিচয় সে অপরাধী। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নিয়ে কমিশনার বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। আমি কমিশনার হিসেবে যোগদান করার পরে প্রথমেই মিটিং করেছি ট্রাফিকের সঙ্গে। ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে সবার সহযোগিতা চাই। যেসব এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়, সেসব এলাকা ধরে ধরে আমরা গবেষণা করবো। কী সমস্যা সেটি চিহ্নিত করে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনেক সময় দেখা যায়, স্টপে এসে বাসগুলো রাস্তার মাঝে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। এজন্য চালকদের ট্রেনিং দেয়া হবে, তাদের নিয়ে কর্মশালা করা হবে। সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। এ ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে এবং কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন হয়েছে। খুব অল্প দিনের ভেতরে ট্রাফিক বাতি চালু করা হবে। যেন সিগন্যাল বাতি অনুযায়ী ট্রাফিক কার্যক্রম করা যায়।
সম্প্রতি এডিসি হারুনকাণ্ডের বিষয়ে নবনিযুক্ত কমিশনার বলেন, যার যতটুকু অপরাধ, ঠিক ততটুকু শাস্তি দেয়া হবে। আমি মনে করি, জড়িত দু’জন সরকারি ডিপার্টমেন্টের ও দু’জনই ক্যাডার কর্মকর্তা। সেখানে দু’জনের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। যার যার দায়িত্ব সে সে পালন করবে আমি মনে করি। আমাদের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো পড়ুন : সিলেটে বালু লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নেমেছে পুলিশ