ডেঙ্গুর সঙ্গে পাঁচদিনের লড়াই করেও বাঁচতে পারল না রিফা

জাতীয় প্রচ্ছদ শিক্ষা শিশু/কিশোর স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

ডেঙ্গুর সঙ্গে পাঁচদিনের লড়াই। প্রতিটি রাত নির্ঘুম কেটেছে বাবা-মার। প্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে সাধ্যের সবটুকুই করেছেন। কিন্তু মৃত্যুর কাছে হার মেনে দূর আকাশের বাসিন্দা হয়ে গেল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রিফা নানজিবা (১০)। বাবা-মার কোল খালি করে সে এখন না ফেরার দেশে। সন্তান হারানোর শোক কিছুতেই যেন ভুলতে পারছেন না রায়হানুল হক কামাল ও মুন দম্পতি। সন্তানের কথা ভেবে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তারা।

রিফা নানজিবার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা শহরের মহুরিপাড়ায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে পিনপতন নীরবতার মাঝে মৃদু কান্নার শব্দ। শোকে কাতর পুরো পরিবার।

পরিবার জানায়, গত ২২ নভেম্বর (শুক্রবার) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় রিফা। সেদিন সকাল থেকেই ১০৩-১০৪ ডিগ্রি জ্বর ছিল। পরদিন শনিবার মিরপুরের আলোক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডেঙ্গু শনাক্ত করেন। এরপর রোববার সন্ধ্যায় নানজিবাকে চিকিৎসকের পরামর্শে শ্যামলী শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পরদিন সোমবার সকাল থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সেখানে আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় ধানমন্ডির আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে মারা যায় নানজিবা।

রায়হানুল হক কামাল ও মুন দম্পতির দুই মেয়ের মধ্যে বড় নানজিবা। সে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের (ধানমন্ডি শাখার) তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ছোট থেকেই তীক্ষ্ণ মেধাবী ছিল নানজিবা। সে নিয়মিত নামাজ ও কোরআন শরীফ তেলওয়াত করতো। নানজিবার আচার- আচরণে পরিবারের সবাই খুব সন্তুষ্ট ছিল। হটাৎ নানজিবার মৃত্যু পরিবারের কেউই মেনে নিতে পারছে না।

দুই সন্তান নিয়ে রায়হানুল হক কামাল ও মুন দম্পতি মিরপুর-১ নাম্বারের নিজস্ব বাসায় থাকতেন। সন্তানকে হারানো রায়হানুল হক কামাল নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।

সরকারি এ টু আই প্রকল্পে কাজ করা নানজিবার বাবা রায়হানুল হক কামাল বলেন, আমার টাকাপয়সা খুব বেশি নেই। যেটুকু আছে, সামর্থ্য অনুযায়ী মেয়েদের নিয়ে সবসময় সুখে থাকতে চাইতাম।

তিনি আরও বলেন, মেয়ের ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ার পর চিকিৎসার কোনো ত্রুটি করিনি। কিন্তু প্রথম যে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম, সেখানে শিশুদের আইসিইউ বেড ফাঁকা ছিল না। পরে অন্য হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করেছি। চিকিৎসকেরা যখন যা লাগবে বলেছেন, তা-ই করেছি, কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না। মঙ্গলবার এশার নামাজের পর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পৌর গোরস্থানে দাফন করা হয়।

নানজিবার মা শাহারিয়ার আক্তার মুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগে আমাদের কোনো অভাব ছিল না। দুঃখ ছিল না। মেয়েকে হারিয়ে এখন আমাদের মতো অভাবী আর দুঃখী কেউ নেই। আমাদের মনের যে কষ্ট, তা এই পৃথিবীর কেউ বুঝতে পারবে না- একথা বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।

অঅরো পড়ুন : চলুন জেনে নেই বিশৃৃঙ্খলা তৈরির পরি কল্পনায় কে এই মোস্তফা আমীন

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *