এবার ডেঙ্গুর ভয়াবহতার শিকার হলেন মিরপুরের ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ আনিকা তাবাসসুম (২৮)। চারটি হাসপাতালে ঘুরেও পাননি সুচিকিৎসা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে তার সাজানো সুখের সংসার।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর স্বামী রাজিবুল হাসান রাতুলকে আনিকা বলেছিলেন, আমার কন্যা সন্তান জন্মের পর আমরা প্রথমে সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাব। পরে আরও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাব। এজন্য স্বামী-স্ত্রী পাসপোর্ট করারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। হাসপাতালে স্ত্রীর মৃতদেহ জড়িয়ে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে রাতুল বলছিলেন, ‘আনিকা সব শেষ। তুমি আমাকে নিয়ে গেলে না সঙ্গে। আমি এখন একা কী করব। আল্লাহ আমাকে কেন তোমার সঙ্গে নিয়ে গেল না।’ এ সময় তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘তোমাকে সুচিকিৎসা দিতে পারলাম না। আমার স্ত্রী-সন্তান চিকিৎসার অভাবেই মারা গেল।’ তার এ আহজারিতে গ্রিন রোডের ধানমন্ডি ক্লিনিকের চিকিৎসক, নার্সরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
এর আগে বিয়ের পর কয়েক দফা আনিকার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। সর্বশেষ অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন তার গর্ভে কন্যা সন্তান আসছে। চিকিৎসক চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে তার ডেলিভারির জন্য সময় বেঁধে দেন। এই সন্তান আসার সংবাদে পুরো পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। গত সপ্তাহে জ্বর হলে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়ে। গত শুক্রবার তার শরীরে জ্বর কমে যায়। এ অবস্থায় চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা শেষ করে এক দিন পর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। কারণ ডেঙ্গুর চরিত্রই শুরুর ৭২ ঘণ্টার পরই জ্বর চলে যায়। তবে এর মানে সে সুস্থ নয়। কারণ তখনো স্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি থাকে বলে চিকিৎসকরা মনে করেন। ঐ অবস্থায়ই আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয়।
এক পর্যায়ে গত সোমবার ভোর থেকে শুরু হয় আনিকার রক্তক্ষরণ। সঙ্গে পেট ব্যথা। শরীর ফুলে যায়। এ অবস্থায় মিরপুরে বাসার অদূরে প্রথমে ইবনেসিনা ও পরে আজমল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুটি হাসপাতালেই কোনো সিট খালি ছিল না। সেখান থেকে বলা হয়, রোগীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে দ্রুত যে কোনো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো হাসপাতালেই যোগাযোগ করে তাকে ভর্তি করা যায়নি। অবশেষে এক আত্মীয়-চিকিৎসকের সহযোগিতায় সেগুনবাগিচায় মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখেন আনিকার পেটের সন্তানটি মৃত এবং তার রক্তক্ষরণ অব্যাহত আছে। তাকে দ্রুত আইসিউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় তাকে গ্রিন রোডের ধানমন্ডি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয় এবং তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরে চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্ট দেন। কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে হার মানেন আনিকা।
আনিকার মতো সারা দেশে প্রতিদিন অনেক ডেঙ্গু রোগী সময়মতো চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মারা যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে সারা দেশে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ৯৫৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৫২ জন।
আরো পড়ুন : তাহলে কি ফেঁসে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্টের এপিএস