স্টাফ রিপোর্টার: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে পদযাত্রা করেছে বিএনপি। গতকাল সারা দেশে এ কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে ঢাকায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হলেও ঢাকার বাইরে বাধা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে বাধা দিলে এ সংর্ঘের ঘটনা ঘটে। এতে হবিগঞ্জ, বরগুনা, নাটোর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও নেত্রকোনায় কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিএনপি’র অভিযোগ, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এসব এলাকায় পদযাত্রাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দেয়। তাদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা পদযাত্রা মিছিলে হামলা চালায়। কোথাও কোথাও কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি নেতারা জানান, কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জে সাবেক মেয়র জি কে গউসের বাসা ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়লে নেতাকর্মীরা গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক দলীয় নেতাকর্মী।
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় জেলা বিএনপি’র পদযাত্রায় পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুড়েছে বলে অভিযোগ বিএনপি’র। এ সময় বিএনপি’র ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়েন।
এদিকে ঢাকার কর্মসূচিতে সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকালে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, পদযাত্রায় একটাই দাবি বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো একদফা দাবিতে একমত হয়েছি। সেখানেও পরিষ্কারভাবে বলা আছে, বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দিতে হবে। সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ। হাসপাতালে আছেন। তিনি জীবন মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম ও লড়াই করছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়ার বন্দি অবস্থায় যদি কোনোকিছু (আল্লাহ না করুক) ঘটে তার সকল দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে নিতে হবে।
খালেদা জিয়াকে এভাবে আটক করে রাখা সম্পূর্ণভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠানো হোক। কিন্তু সরকার তা করছে না। কারণ তারা (সরকার) জানে- বেগম খালেদা জিয়া বের হলে তাদের মসনদ ও সিংহাসন ঠিক থাকবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য পতাকা তুলে নিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৯ বছর তিনি পথে-প্রান্তরে, মাঠে-ঘাটে, বাজারে-গঞ্জে চারণ কবির মতো সমস্ত জাতিকে জাগ্রত করে এক গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে স্বৈরাচারকে সরিয়েছিলেন। সেই কারণেই তিনি হচ্ছেন আমাদের আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজকে কয়েক বছর ধরে তিনি অন্তরীণ। মিথ্যা মামলায়, সম্পূর্ণ সাজানো মামলা-সেই মামলায় আমাদের বিচার বিভাগের বিচারকরা তাকে ৫ বছরের পর ১০ বছর সাজা দিয়েছেন! যে মামলায় সাজা দিয়েছেন, সেই মামলায় ২ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। ওই দুই কোটি টাকা ব্যাংকে এখন আট কোটি টাকার উপরে চলে গিয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ৪ থেকে ৫ জন মন্ত্রী আছেন এবং ছিলেন- তাদেরকেও এ ধরনের মামলায় সাজা দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে শুধু মুক্তই করা হয়নি। তাদের মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। বেগম জিয়ার অপরাধ একটাই, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো রাস্তায় বের হলে রাস্তায় যখন হাঁটবেন তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ তার পেছনে এসে দাঁড়ায়। সেই কারণে খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়েছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে। এখনো তিনি বন্দি অবস্থায় আছেন। এই সরকার সম্পূর্ণ অবৈধ সরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সরকার অসাংবিধানিক সরকার। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে গত ১৫ বছর ক্ষমতায় বসে আছে। এখন কি করছে, আমরা তো গণতন্ত্রের জন্যই একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চাই।
আরও পরিস্কারভাবে বলতে চাই, এই গ্রেপ্তার বন্ধ করেন, বাড়িতে হানা দেয়া বন্ধ করেন। অন্যথায় আজকে জনগণ জেগে উঠেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে আপনারা (সরকার) বিঘ্ন করবেন না। আমরা জানি, এদেশে যে সরকার তারা বিদেশির ওপর টিকে আছে। যখন জনগণের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে তখন কোনো বিদেশি এগিয়ে আসবে না।
পদযাত্রাপূর্ব মিছিলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিদেশি প্রভুদের দয়ায় সরকারের শেষ রক্ষা হবে না, জনগণ জেগেছে, সরকারকে বিদায় করা হবে।’ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, জনগণের দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, শেখ হাসিনার কাছে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে লাভ নেই। শেখ হাসিনাকে বিদায় করে আমাদের নেত্রীর চিকিৎসা দিতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ‘একদফা দাবি, এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। আজ হোক, কাল হোক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বিচারিক আইন উপেক্ষা করে সাংবিধানিক আইন উপেক্ষা করে জেলে পাঠানো হয়েছে। শুধু মানুষের ভোটাধিকার লুটে নিয়ে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। আজ খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের বিচার হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আযম খান, আতাউর রহমান ঢালী, আব্দুল কুদ্দুস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, নাজিমউদ্দিন আলম, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, আশরাফ উদ্দিন বকুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, রকিবুল ইসলাম বকুল, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এসএম জিলানী, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুপুরের আগেই নয়াপল্টনে ভিড় করেন নেতাকর্মীরা। ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সেখানেই সরকারবিরোধী সেøাগান দেন নেতারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে পদযাত্রা শুরু হয়। খালেদা জিয়ার প্ল্যাকার্ড হাতে হাজার হাজার নেতাকর্মী নয়াপল্টন থেকে শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে পদযাত্রা শেষ করেন।
পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে হবিগঞ্জ রণক্ষেত্র, আহত অর্ধশতাধিক
স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে: হবিগঞ্জে বিএনপি’র পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে আত্মরক্ষা করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শায়েস্তানগর এলাকায় পুলিশ ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা যার যার অবস্থানে অনড় ছিল। এলাকায় চরম উত্তেজনা ও থমথমে ভাব বিরাজ করছিল। বিএনপি’র অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা আসার পথে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। অনেক নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে পুলিশ। পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আর পুলিশের বক্তব্য নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতে তাদের ওপর হামলা করেছে।
স্থানীয়রা জানান, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে গতকাল বিকালে শায়েস্তানগরস্থ বিএনপি কার্যালয়ে জড়ো হচ্ছিলেন নেতাকর্মীরা। এ সময় পাশেই অবস্থান নিচ্ছিলো পুলিশের কয়েকটি দল। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নেতাকর্মীদের পদযাত্রা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে সদর থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেবসহ ১০ পুলিশ সদস্য ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে গুরুতর আহতদের হবিগঞ্জ সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ৮ জনকে আটক করা হয়েছে।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সাবেক মেয়র জিকে গউছ জানান, শনিবার কেন্দ্রীয় নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। শান্তিপূর্ণভাবে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পৌঁছলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান সংঘর্ষটি বাধিয়েছেন। কোনো উত্তেজনা ছিল না। তিনি হঠাৎ পুলিশকে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ দফায় দফায় গুলি ছুড়তে থাকে। তিনি বলেন, তারা আমার বাসায় এসেও গুলি ছুড়েছে। আমাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অনেককেই আমার ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে। জুলুমবাজ সরকারের পুলিশ বাহিনী আমাদের নেতাকর্মীদের অমানুষিক নির্যাতন করছে। তিনি বলেন, যতই হামলা মামলা ও গ্রেপ্ততার করা হোক জিয়ার সৈনিকরা পিছু হটবে না। সরকারের পতনের ঘণ্টা বেজে গেছে। তাই তারা চোখে অন্ধকার দেখছে। জুলুম সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে না।
বরগুনায় পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত অর্ধশতাধিক
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, জেলা বিএনপি’র পদযাত্রায় লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। জানা গেছে, বরগুনা জেলা বিএনপি’র অফিসের সামনে থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পদযাত্রা বের করেন দলটির নেতাকর্মীরা। পদযাত্রাটি বরগুনা প্রেস ক্লাবের সামনে পৌঁছালে পুলিশ এতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা সামনে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ অহেতুক লাঠিচার্জ করেছে। এতে অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক তালিমুল ইসলাম পলাশ জানান, বরগুনা জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শুরু করে শহরের পৌর মার্কেটের সামনে পৌঁছালে পুলিশ অতর্কিত লাঠিচার্জ করে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বরগুনা জেলা বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এজেডএম সালেহ ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা আহ্বায়ক তালিমুল ইসলাম পলাশ, ফজলুল হক মাস্টার, জেলা যুবদলের সভাপতি জাহিদ হোসেন মোল্লাসহ ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হন। এদের মধ্যে ছাত্রদলের রিমন নামের এক কর্মী গুরুতর আহত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তবে লাঠিচার্জের বিষয়টি অস্বীকার করে বরগুনা সদর থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা কোনো লাঠিচার্জ করিনি। তাদের নিজেদের ধাক্কাধাক্কিতে হয়তো কেউ আহত হতে পারে। বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হালিম বলেন, বিএনপি’র নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগোচ্ছিলেন। তাদের অফিসের সামনে যেতে বলা হয়। তাদের পৌরসভার সামনে পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়া হয়। তারা তা মেনে শহরের দিকে চলে আসেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে সড়কে অনেক নেতাকর্মী পড়ে যান। তবে কোনো লাঠিপেটা হয়নি।
পটুয়াখালীতে বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশের বাধা
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীতে ১ দফাসহ বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে পদযাত্রা শুরু করে কলেজ রোডস্থ কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার পথে বিএনপি’র পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র নেতা কর্মীদের কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সেখানেই পদযাত্রা শেষ করে এক সমাবেশে সরকারের পদত্যাগ, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ পান্না, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জেলা বারের সাবেক সভাপতি এড. ওয়াহিদ সরোয়ার কালাম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা মহিলাদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপিকা লায়লা ইয়াসমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেসমিন জাফর, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এড. মোহসীন উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক এড. সালাউদ্দিন, ছাত্রদলের নেতা আল হেলাল নয়ন সহ শত শত নেতা- কর্মী।
এছাড়াও একই কর্মসূচিতে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আলহাজ আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে ও সদস্য মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপি’র সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান নান্নু, মো. কামাল হোসেন, কাজী মাহাবুব, জেলা যুবদলের সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম লিটন, সাধারণ সম্পাদক শিপলু খান প্রমুখ। পরে শহরে এক পদযাত্রা বের করে কলেজ রোড ঘুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদযাত্রা কর্মসূচি সম্পন্ন করেন নেতৃবৃন্দ।
পুলিশের লাঠিচার্জে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র পদযাত্রা পণ্ড
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকায় জেলা বিএনপি’র পদযাত্রা পুলিশের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটে পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় বিএনপি’র ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়েন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর সেতুর ঢালে।
পুলিশ জানায়, বিনা অনুমতিতে মহাসড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছিল বিএনপি। প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দ্রীয় পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কাঁচপুর সেতুর পূর্ব পাশের ঢালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জড়ো হতে শুরু করেন জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ মহাসড়ক থেকে সরে যেতে বললে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে তর্ক হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়লে বিএনপি কর্মীরা ইট-পাটকেল মারতে থাকেন। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পিছু হটে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, তারা শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং লাঠিচার্জ শুরু করে। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন জানান, ‘কাঁচপুর সেতুর ঢাল থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। পুলিশ বলছে, বিনা অনুমতিতে মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা বলেন, ‘পদযাত্রা করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি ছিল না। বিএনপি নেতাকর্মীরা মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন তৈরি করছিলেন। পুলিশ তাদের মহাসড়ক ছেড়ে দেয়ার কথা বললে উল্টো চড়াও হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অ্যাকশনে যায়। পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি আরও বলেন, পরবর্তী বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
নাটোরে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩ বিএনপি নেতার ওপর হামলা
নাটোর প্রতিনিধি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নাটোর জেলা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। এদিকে কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়ার পথে কাফুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ ৩ জন দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, সদর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক এসএম মোস্তফা আনাম, কাফুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি তুহিন। গতকাল সকালে দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় হাইস মাইক্রো গাড়িযোগে তাদের উপর হামলা করে চলে যায়। এতে কালামের হাত-পা ভেঙে গেছে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বেসরকারি কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ফেনীতে গলিতে সীমাবদ্ধ বিএনপি’র পদযাত্রা
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে বিএনপি’র পদযাত্রা বড় বাজারের গলিতে শেষ হয়েছে। শনিবার বিকালে ফেনী শহরের বড়বাজারের তাকিয়া রোডের গলি থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রাটি ইসলামপুর রোডের গলিতে এসে শেষ হয়েছে।
পদযাত্রায় শেষে ইসলামপুর সড়কে জেলা বিএনপি’র অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে সভায় মিলিত হয়। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারের সভাপতিত্বে অতিথি ছিলেন- বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার। পদযাত্রায় জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক এমএ খালেক, যুগ্ম-আহ্বায়ক গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আকবর হোসেন, ফেনী পৌর বিএনপি’র আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বাবুল, সদস্য সচিব এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম-আহ্বায়ক খুরশীদ আলম, সদর উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক বাবু তপন কর সহ বিএনপি ও এর সকল অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ফেনী পৌর বিএনপি’র সদস্য সচিব এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বড় বাজারে তাকিয়া রোড হয়ে বড় মসজিদের সামনে দিয়ে পদযাত্রাটি মূল সড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তাকিয়া রোডের গলি, জেবি রোডের গলি হয়ে ইসলামপুর রোডের গলিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদযাত্রা সীমাবদ্ধ ছিল। বাজারের প্রতিটি মুখে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান করায় তারা সংক্ষিপ্ত আকারে পদযাত্রা করেছেন।
ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বিএনপি’র পদযাত্রার বিষয়ে পুলিশকে আগে থেকে অবগত করা হয়নি। পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করেছে। বিএনপি’র কর্মসূচিতে পুলিশের কোনো হস্তক্ষেপ বা বাধার ঘটনা ঘটেনি।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারতের কোনো পদক্ষেপ হবে দুর্ভাগ্যজনক