স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকান গোয়েন্দাদের সাক্ষীতেই তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে। তবে এদের লজ্জা নেই। এরা একজনকে এমন করবে, আবার কখন কাকে পছন্দ করে ক্ষমতায় নিয়ে আসে তার ঠিক নেই। বিএনপি’র যেহেতু কোনো নেতা নেই তারা ইলেকশন করবে না। কিন্তু ইলেকশন বানচাল করতে চেয়েছে। গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত নির্বাচন পরবর্তী শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা তাকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করায় কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার সর্বস্তরের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চক্রান্ত আছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। আর একটি মুসলিম দেশে পাঁচ-পাঁচ বারের মতো একজন নারী প্রধানমন্ত্রী, সেটাও অনেকের পছন্দ না।
আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটা এ রকম যে আমাদের দেশটার ওপর অনেকের নজর আছে। কাজেই এখানে বসে কেউ অন্য দেশের ওপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, এখান থেকে অন্য দেশে অ্যাটাক করবে সেটা তো আমি মেনে নেবো না। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমরা স্বাধীনভাবে চলবো। দেশ ছোট হতে পারে কিন্তু আমাদের জনগণ আছে, জনগণই আমাদের বড় শক্তি। তিনি বলেন, একটা চক্রান্ত ছিল যে, আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। তাদের হুকুমের দাস এমন কাউকে বসাবে এবং এ দেশটাকে নিয়ে খেলতে পারবে। বাংলাদেশের জনগণ এটার জবাব দিয়েছে। যখন আমরা ভোটটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। উদ্দেশ্য ছিল ভোটার যেন আসে এবং নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হয়। কারণ বিএনপি নির্বাচন করবে না। ওরা নির্বাচন করবে যে তাদের নেতা কোথায়? কারণ যে পার্টি নির্বাচন করবে তার সামনে একজন থাকে যে প্রধানমন্ত্রী হবে, দেশ চালাবে। ওদের তো সে রকম যোগ্য কেউ নেই। একজন দুর্নীতি আর এতিমের টাকা আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আরেকজন গ্রেনেড হামলা, মানি লন্ডারিং, অস্ত্র চোরাকারবারি যেটা আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই খুঁজে বের করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগলো, তার ওপর স্যাংশন, পরিবহন-পরিচালন খরচ, জিনিসের দাম বাড়লো, ফিলিস্তিনে ইসরাইল হামলা করলো, এ নিয়ে আমরা নিন্দা জানাই। সবসময় আমরা ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছি। এ অবস্থায় জিনিসের দাম আরও বাড়বে। এরমধ্যে আমেরিকা হুতিদের আক্রমণ করলো। এটা যখন শুরু হয়ে গেল তখন তো অর্থনীতিতে আরেকটা ধাক্কা আসবেই। তিনি বলেন, দ্রুত সরকার গঠন করা হয়েছে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখন মূল কাজ হচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং জিনিসপত্রের দাম যা বেড়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করা। গ্রামে-গঞ্জে তেমন অসুবিধা নেই, ঢাকা শহরে একটু সমস্যা, মানুষের কষ্ট হচ্ছে, সেখানে জীবনযাত্রার মান একটু বেশি। বাজারে কিন্তু পণ্যের ঘাটতি নেই। কিন্তু মনে হয় যে, কেউ জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষকে হয়রানি করে। আমাদের সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, আমার বেশি আকাক্সক্ষা নেই। আমি টুঙ্গিপাড়া আসবো আর ভ্যানে করে ঘুরে বেড়াবো। আমার গাড়িও লাগবে না। এক এক বাড়ি যাবো আর খেয়ে বেড়াবো। এ জন্য ঢাকা শহরে আমার কোনো বাড়িঘর নেই। আমার যা আছে টুঙ্গিপাড়ায়। কাজেই আমি এখানে থাকবো। আমি আর রেহানা (শেখ রেহানা) এটাই ঠিক করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সে দোয়া করবেন আপনারা। জাতির পিতার ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়া। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এখন আমাদের টার্গেট স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া। কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না এবং কোনো মানুষ যেন না খেয়ে না থাকে।
এর আগে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নবগঠিত মন্ত্রিসভা। এ সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের নিয়ে আরও একবার বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় সূরা ফাতেহা পাঠ এবং বিশেষ মোনাজাতে যোগ দেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নিজ বাসভবনে নবগঠিত মন্ত্রিসভার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, পবিত্র রমজান ঘনিয়ে আসছে, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। কারণ এই মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানো উচিত নয়। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, এটি একটি অনানুষ্ঠানিক মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। প্রধানমন্ত্রী রমজানের সময় বিশেষ করে বড় মজুতদাররা যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য জরুরি পণ্য মজুত করতে না পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন। মন্ত্রীদের এই বিষয়ে নিয়মিত মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখুন যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের প্রথমে তাদের মন্ত্রণালয়ের সার্বিক বিষয়ে তথ্য জানার জন্য নির্দেশ দেন। সালাউদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণকর যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের সময় মন্ত্রীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন।
আরো পড়ুন : নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় সাবেক এমপির গাড়ি বহরে হামলা