হামাসের সঙ্গে সংঘাত সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ইসরাইলকে সামলাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহবন জানিয়েছে ইরান। শুক্রবার বৈরুতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহ এ আহবান জানানোর পাশাপাশি বলেছেন, তেহরান লেবাননের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে।
এদিকে ইসরাইলের সম্ভাব্য স্থল অভিযান নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যদি গাজায় স্থল অভিযান পরিচালনা করে, তবে বেসামরিক নিহতের সংখ্যা ‘অগ্রহণযোগ্য’ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। খবর এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরার।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে গাজা ধ্বংস করার সুযোগ করে দিতে চাইছে। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ হবে চরম ভুল। যুক্তরাষ্ট্র যদি এ অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে চায়, তাহলে ইসরাইলকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।
দীর্ঘদিন ধরে হামাসকে তেহরান সমর্থন দিয়ে এলেও শনিবারের ইসরাইলে রকেট নিক্ষেপের সঙ্গে ইরানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। হামাস-ইসরাইলের সংঘাত যাতে লেবাননেও ছড়িয়ে না পড়তে পারে, সেটা নিশ্চিত করতেই বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈরুত পৌঁছেছেন। এর আগে তিনি বাগদাদেও যাত্রাবিরতি করেছেন।
লেবাননে প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির সঙ্গে বৈঠকের পর আমির আবদুল্লাহ বলেছেন, লেবাননের নিরাপত্তা এবং শান্তির বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে লেবাননের নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া।
পরে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইহুদি রাষ্ট্র এ ‘সিস্টেমেটিক’ যুদ্ধাপরাধ যদি অবিলম্বে বন্ধ না করে তাহলে সম্ভাব্য যে কোনো পরিণতিই ঘটতে পারে।
ইসরাইল-হামাস পরিস্থিতি নিয়ে তেহরান ৫৭ সদস্যের ওআইসির জরুরি বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ করা হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহ সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গেও শুক্রবার বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে হামাসের লড়াইয়ের সম্ভাব্য ফলাফল এবং কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির সঙ্গে এক বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা হামাসসহ মধ্যপ্রাচ্যে অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছি। এছাড়া পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে ইরান ইসরাইলের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খোলার ব্যাপারে জানতে চেয়ে অনেক দেশের সরকার ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, সবকিছু নির্ভর করবে গাজায় ইসরাইলিরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন তার ওপর।
এদিকে শুক্রবার কিরগিজিস্তানের রাজধানী বিশকেকে এক আলোচনা সভায় ইসরাইলের সম্ভাব্য স্থল অভিযান সম্পর্কে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আবাসিক এলাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার খুবই জটিল একটি ব্যাপার এবং তার পরিণতিও হবে মারাত্মক। কারণ এই পরিস্থিতিতে (গাজায়) স্থল অভিযান চালানো হলে সাধারণ বেসামরিক নিহতদের সংখ্যা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছাবে এবং তা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’
গাজাবাসীদের তাদের ভূখণ্ডে থাকতে হবে : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের অবশ্যই তাদের ভূখণ্ডে থাকতে হবে বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। বৃহস্পতিবার এক সামরিক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, গাজাবাসীদের অবশ্যই ‘অবিচল থাকতে হবে এবং তাদের ভূখণ্ডে থাকতে হবে।’
সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলার মুখে গাজায় আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার আহবানের মধ্যে সিসি এই মন্তব্য করেন।
ব্যাপক হামলায় গাজা ইতোমধ্যেই পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। এমনকি ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভ‚খণ্ডের লাখ লাখ মানুষের ঘুমানোর কোনো জায়গা নেই বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। এই পরিস্থিতিতে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে মিসরকে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছিল।
জবাবে মিসরের প্রেসিডেন্ট জানিয়ে দিলেন, গাজাবাসীদের অবশ্যই তাদের ভ‚খণ্ডেই থাকতে হবে।
ফিলিস্তিনিদের ‘বৈধ অধিকার’ নিশ্চিত করার বিষয়ে কায়রোর ‘দৃঢ় অবস্থান’ নিশ্চিত করে প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, মিসর এই কঠিন সময়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ‘চিকিৎসা ও মানবিক উভয় ধরনের সহায়তা প্রদান’ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সিসি মনে করেন, গাজাবাসীদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার অর্থ হবে ‘ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করা’।
তিনি বলেন, মিসর ইতোমধ্যেই ‘সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ৯০ লাখ অতিথিকে (শরণার্থী) আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু গাজাবাসীদের বিষয়টি ‘অন্যরকম’। কারণ তাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার অর্থ হবে (ফিলিস্তিনিদের) নির্মূল করা।
আরো পড়ুন : ইসরায়েলের হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে গাজা উপত্যকা