নতুন শিক্ষাক্রম দক্ষ, মানবিক মানুষ হতে শেখাবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি আরও বলেন, এবার যে বই গেছে সেখানে বলা আছে পরীক্ষামূলক সংস্করণ। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকদের সাথে বসেছি। এরপরও অনিচ্ছাকৃত ভুল থাকতে পারে। এছাড়াও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা রটানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে চাঁদপুর প্রেসক্লাব নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের অভিষেক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে একটি চক্র অপ্রপচার আর বিরোধিতা করছে বলেও জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানাই। চাঁদপুর নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানাই। আমার বাবা এই পেশার মানুষ। এই চাঁদপুরের অনেক সাংবাদিকের হাতে খড়ি আমার বাবার হাত ধরেই। আমি এই পরিবারের একজন। বঙ্গবন্ধু যেটিকে সোনার বাংলা বলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা এখন সেটিকে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে যাচ্ছেন। আমর অনেক দূর যেতে চাই। স্বাধীন করে দিয়েছেন জাতির পিতা, এগিয়ে নিচ্ছেন কন্যা। ডিজিটাল দেশ হয়েছে, এবার স্মার্ট হবো, অনেক দূর যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষতার নামে সত্য মিথ্যাকে পাশাপাশি জায়গা দিয়ে ফেলি। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেই হবে। ডেমো ট্রেন নিয়ে কথা বলেছেন, আমি কথা বলেছি রেলমন্ত্রীর সাথে। অনেকগুলো নষ্ট ঠিক হলে আমাদের এখানে চালু হবে।
মন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কথা হচ্ছে। এর দরকার আছে। কারণ হচ্ছে, যে পদ্ধতিতে পাঠদান করা হয় তার যদি রূপান্তর করা না যায় তাহলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মেলাতে পারবনা। আমরা শুধু মুখস্ত করেছি, কাজে লাগাতে পারি নাই। নতুন শিক্ষাক্রমে শেখানোর পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে। প্রতিটি শিক্ষার্থী করে করে শিখবে। শেখাটা যেন হয় আন্দময়, পরীক্ষা ভীতি যেন না থাকে সেই রূপান্তর হবে। পরীক্ষা থাকবে, অনেকেই বলেছেন পরীক্ষা নেই। প্রাক প্রাথমিক থেকে খেলতে খেলতে শিখবে বাচ্চারা। ইসলাম ধ্বংস করা হয়েছে বলে প্রচার হয়েছে। আমি বলবো আওয়ামী সরকার ইসলাম বিষয়ে বেশি কাজ করেছে।
মন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম দক্ষ, মানবিক মানুষ হতে শেখাবে। এবার যে বই গেছে সেখানে বলা আছে পরীক্ষামূলক সংস্করণ। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকদের সাথে বসেছি। এরপরও অনিচ্ছাকৃত ভুল থাকতে পারে। বিজ্ঞান বইয়ে যে ভুল হয়েছে সে বিষয়ে যৌথ্য বিবৃত্তি দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিষয়ে নজরে এলে আমাদের জানাবেন আমরা সংশোধন করবো। নবম দশম শ্রেণির বই নিয়ে কথা হয়েছে, এই বইগুলো কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের বই নয়। যে তিনটি বিষয় বলা হয়েছে ভুল আছে। এগুলো ২০১৩ সাল থেকেই আছে। তার মানে সবাই ভালো করে পড়ছেন এটি ভালো বিষয়। এ বছর সনাক্ত হয়েছে আমরা সংশোধন করে দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, কিছু অপ্রপচার চলছে। ইসলাম ধর্ম থেকে নবিজি (সা.) এর বিষয়ে সব সড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে এমন অপ্রপ্রচার চালানো হয়। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা রটানো হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপ্রপচার করছে, বিরোধিতা করছে। নতুন রূপান্তর ঘটানোর যে শিক্ষাক্রম সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষায় পরিবর্তন নিয়ে আসছি। আলেমরা এখানে কিছু বিষয়ে নজরে এনেছেন। আমরা কাজ করছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবন করবে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। উচ্চ শিক্ষায়ও পরিবর্তন আসবে। পড়াশোনা আর চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকবে না। নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু জানাতে ও শেখাতে, যা তাদের নতুন চিন্তাধারার পথ দেখাবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, চাঁদপুরের শিল্পপতি এম এন মুরাদ খানকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
সংবর্ধিত হতে পেরে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, নবনির্বাচিত চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানাই। তিনি বলেন, চাঁদপুর আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সাংবাদিকতায় চাঁদপুরের বর্ণাঢ্য ইতিহাস আছে। সাংবকদিকতা মানুষের জন্য পেশা, মানুষের সঙ্গে থাকার পেশা, তাদের জন্য কাজ করার পেশা। সাংবাদিকরা যারা কাজ করবেন অবশ্যই দায়িত্বশীলতার সাথে করবেন। আগামীর নির্বাচনের কথা এসেছে অনেকের বক্তব্যে। আগামীর নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নয়ন আজ বিশ্বের বিস্ময়। এই উন্নয়ন কারা এগিয়ে নিতে পারবে সে হিসাব করলে আপনারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন আজ এগিয়ে নিচ্ছেন তারই কন্যা। যে দেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে, রক্তের বিনিময়ে হয়েছে সেটি আমাদের মনে থাকলে আমরা কক্ষচ্যুত হবো না। সফলতার কোনো শর্টখাট রাস্তা নেই। সফল হতে হলে লক্ষ থাকতে হবে।
শ্যামল দত্ত বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় জনশক্তি তরুন। ৮১৭টি দৈনিক বের হয় দেশ থেকে অথচ ১৪ কোটি মোবাইল গ্রাহক। ইদানিং দেখছি অনেকেই টেলিভিশন দেখছে না, দেখছে ইউটিউব, রিল, ভিডিও ক্লিপ। সামনে কঠিন সময় নির্বাচন। নির্বাচন কঠিন, সহজ, সরল হোক সেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে জিততেই হবে এর বিকল্প নেই। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে ভালো কাজের প্রসংশা করবো, মেট্রোরেলের প্রশংসা করবো, পদ্মা সেতুর, রাস্তাঘাটের প্রশংসা করবো। আবার যেটি জনগণের পক্ষে যাচ্ছে না সেটির সমালোচনাও করবো এটিই গণমাধ্যমকর্মীদের কাজ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী, পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান। অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।
আরো পড়ুন : নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাও সন্দেহের তালিকায় রেখে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে র্যাবের অভিযান