নতুন নির্বাচন কমিশনকে এক ডজন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক নেতারা। এর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি; অদৃশ্য চাপমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান; সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; প্রশাসন পুনর্গঠন; প্রশাসনিক কারসাজি, পেশিশক্তি বা টাকার খেলা নিয়ন্ত্রণ; নতুন ভোটার তালিকা তৈরি; সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ; স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রিটার্নিং অফিসার নির্ধারণ; লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন; আগে সংসদ নির্বাচন নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং ইসিকে দলীয়মুক্তকরণকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসিতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মনে করছেন প্রশ্নে গতকাল নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আমরা কমিশন সমন্বিতভাবে মনে করি মোর দ্যান দ্য চ্যালেঞ্জ, আমরা মনে করি এটা অপরচুনিটি। চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্যই আমরা এখানে আছি। এটা অপরচুনিটি ভাবছি এ জন্য, জাতি একটা ক্রান্তিলগ্নে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে একটা ভালো নির্বাচন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক- সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষমতাসীন সরকার। ক্ষমতাসীন সরকার যদি নির্বাচকে প্রভাবিত করতে চায়, তাহলে আর কিছুই তাদের (ইসির) করার থাকে না। ওটাই তাদের করতে হয়। কিন্তু এখন তো ক্ষমতাসীন সরকার চাইবে একটা সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন; সেই দিক থেকে নতুন কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জটাই নেই। তিনি বলেন, তবুও ইসির কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এর মধ্যে হচ্ছে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা; সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ; ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা; প্রশাসনিক দক্ষতা তথা সেখানে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ হয়েছে। দলীয়করণ মুক্ত করাটাই বড় সমস্যা।
কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ কী? প্রশ্নে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে আর কেউ যাতে ভোটাধিকার কেড়ে নিতে না পারে; এই দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করবেন। জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় নির্বাচন কমিশন যাতে একটা ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারে, এই মর্যাদায় তারা নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, প্রশাসন পুনর্গঠন এবং একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ, ভোটার তালিকা স্বচ্ছভাবে তৈরি করা। সেই সঙ্গে নির্বাচনে যাতে কোনোভাবে কেউ প্রশাসনিক কারসাজি কিংবা পেশিশক্তি বা টাকার খেলা করতে না পারে, জনগণ যাতে অবাধে তার প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ পায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, আমরা তিনবার ভোট দিতে পারিনি। সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন হয়নি। আমরা এখন একটা ঝুলন্ত জায়গায় আছি। তাই আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া ক্ষমতায় যারা থাকবে বা অশুভ শক্তির প্রভাব মুক্ত একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করাটাকেই আসল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সব দলের অংশ। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে দেশ ও বিদেশে ওই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি বলেন, প্রথমে নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করতে হবে তাদের আশু করণীয় কী। ইসিকে সুদূরপ্রসারী কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকার চায়, তারা দীর্ঘদিন পরে নির্বাচন করবে। তার কোনো এজেন্ডা থাকতে পারে। তখন দেখা যাবে দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাজগুলোকে ফেলে দিতে পারে। দেখার বিষয় নির্বাচন কমিশন সেটাকে কীভাবে ডিল করে। এমন বিষয় ডিল করা কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে মাথায় রাখতে হবে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। শুধু বড় দলের জন্য নয়, শ্রেণিতে শ্রেণিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। একটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন আসন ভিত্তিক হবে না, নাকি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হবে। এই দুই মতামতের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। কমিউনিস্ট পার্টি দীর্ঘদিন থেকেই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইছে।
আরো পড়ুন : সরকার ও জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানালেন তারেক রহমান