নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। ভোটার আইডি কার্ড দেখে দলীয় সমর্থকদের দিয়ে প্রতি ভোটারকে ১ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে প্রমাণ মিলেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ভূঁইয়া নির্বাচিত হবেন। এমন ভয়ে ভোটের দুই দিন আগেই টাকা দিয়ে ভোট কেনা শুরু করেছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। তারা বলেন, গত ১৫ বছরে সংসদ সদস্য থাকাকালীন গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার ছেলেরা কারখানা ও আবাসন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার মানুষের চাষের জমি দখল করেন। এ কারণে দীর্ঘদিন এমপি থাকার পরও জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে। সুষ্ঠু ভোট হলে হেরে যাবেন নিশ্চিত হয়ে কাউকে হুমকি, কাউকে টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতির নির্মাণাধীন বাড়ির নিচতলায় ভোটার আইডি কার্ড দেখে টাকা দেওয়া হচ্ছে ভোটারদের। ভিডিওতে দেখা যায়, টাকা নেওয়ার জন্য অনেক মানুষ জড়ো হয়েছেন। ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুলজার, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা রতন মিয়া ও খোরশেদসহ বেশ কয়েকজন একত্রিত হয়ে টাকা বিতরণ করছেন। ভিডিও দেখে স্থানীয়দের কাছ থেকে তাদের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে সভাপতি মুলজারের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও অন্যরা কোন পদে রয়েছেন তা জানা যায়নি। টাকা বিতরণের বেশ কয়েকটি ভিডিও বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সন্ধ্যার সময়ে একটি ঘরের মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে টাকা বিতরণ করছেন। ভিডিওতে শোনা যায়, এক নারী বলছেন আমি কখন নিছি? এ সময় ওই ঘরের মেঝেতে বসা আরেকজন বলেন, তোর কথা কয়নি (বলেনি), তোর মায়েরটা লইয়া গেছে। আব্বারটা নিছে।
৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুলজারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় কথা হয় স্থানীয় এক নারী ভোটারের সঙ্গে। নাম জানতে চাইলে তিনি মুমিনের মা বলে পরিচয় দেন। কীসের টাকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনেই দিছে। তখন পরিচয় গোপন করে প্রতিবেদক বলেন, আমাকে দিবে না? তিনি বলেন, ভোটার হইলে দিব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, মুলজার সাহেব মন্ত্রী সাহেবের কাছের লোক। তারাবোর ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ এলাকার নির্বাচনের দায়িত্বেও তিনি আছেন। তাই কাছের লোকদের আগে আগেই টাকা দিচ্ছেন। ভোট দেওয়ার জন্য টাকা দিচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা টাকা পাচ্ছে তারা এই এলাকারই ভোটার। বাড়তি কিছু বললে সমস্যা আছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ শুনেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা বলছেন, রূপগঞ্জের আওয়ামী লীগ দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে গত ১৫ বছরে সুবিধাভোগীরা বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে থাকলেও সুবিধাবঞ্চিত প্রায় ৭৫ ভাগ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা মো. শাহাজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করছে। তারা বলেন, শেষ হাসিটা শাহজাহান ভূঁইয়াই হাসবেন। কারণ, তার নামে কোনো কালি নেই। আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে রাজনীতি করেছেন। কারও ক্ষতি করেন নাই। জমি দখল করেন নাই। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও তার আঁতাত নাই।
সুত্র- বাংলাদেশ প্রতিদিন
আরো পড়ুন : বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ল ৪ জন