তৈরি হচ্ছে ইউএনওদের বদলির প্রস্তাব, ওসিদের বদলি চায় ইসি; তিন দিনের মধ্যে প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ, ময়মনসিংহের ডিসি প্রত্যাহার ও সুনামগঞ্জে নতুন ডিসি
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশ-প্রশাসনে ব্যাপক রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার; আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশের কোনো কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ উঠলেই তাকে তাৎক্ষণিক বদলি পরিকল্পনা নিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। আগামী তিন দিনের মধ্যে তথা ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইউএনও এবং ওসিদের বদলির তালিকা ইসি পাঠাতে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে গতকাল ইসির নির্দেশে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসককে বদলি করে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচনকে অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের পদক্ষেপ আন্তরিকভাবে নেবে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, ভোটকে সামনে রেখে এক বছরের বেশি সময় ধরে বর্তমান কর্মস্থলে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অন্য জেলায় বা নিজ জেলায় অন্য নির্বাচনি এলাকায় বদলির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে যেসব ওসি বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করছেন, তাদেরকেও বদলির জন্য জননিরাপত্তা বিভাগকে প্রস্তাব প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। এ প্রস্তাব পর্যায়ক্রমে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসিতে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া ডিসি-এসপি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কোনো কর্মকর্তা দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করলেই তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে জিরো টলারেন্স নীতিতে অনড়। এ ছাড়া প্রার্থীরাও নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসির বদলির প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, মাঠপর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বদলির কারণে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। গতকাল দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সব প্রার্থীর নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ওসি ও ইউএনওদের বদলি সরকার চেয়েছে না কি আপনারা চেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নির্বাচন কমিশন চেয়েছে। আমাদের কমিশনাররা গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং অঞ্চল পর্যায়ে সফর করেছেন, তাদের যে ফাইন্ডিংস, তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন বসে ৩০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন অনুভব করেছে, এ বদলি দরকার। সব তথ্য তো ওপেনলি বলা হয় না। নির্বাচন কমিশনাররা মাঠপর্যায় থেকে যেসব তথ্য পেয়েছেন, বিভিন্ন প্রার্থী কিংবা বিভিন্ন কোয়াটার থেকে যে তথ্য এসেছে, তার ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত।
তৈরি হচ্ছে ইউএনওদের বদলির প্রস্তাব : এক বছরের বেশি সময় ধরে বর্তমান কর্মস্থলে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভোট সামনে রেখে অন্য জেলায় বদলি চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে নির্বাচন ভবনে ইসির বৈঠকের পর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় ইসি সচিবালয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়ে কমিশনের সায় দেওয়ার বিধান রয়েছে। এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের নিমিত্ত সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য মাননীয় নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যে সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বর্তমান কর্মস্থলে ১ বছরের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাদেরকে অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা প্রয়োজন।’ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইসি।
ওসিদের বদলি চায় ইসি; তিন দিনের মধ্যে প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ : ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো থানায় ছয় মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করছেন, এমন ওসিদের অন্য থানা বা জেলায় বদলি করাতে চায় নির্বাচন কমিশন। কোনো ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখে তাকে বদলির নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের নিমিত্ত সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থলে ৬ মাসের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে তাদের অন্য জেলায়/অন্যত্র বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসি বদ্ধপরিকর। একটা ক্যাটাগরি নির্ধারণের সুবিধার্থে এ উদ্যোগ। যখনই দরকার হবে তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহের ডিসি প্রত্যাহার ও সুনামগঞ্জে নতুন ডিসি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির নির্দেশে দুই জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে আর সুনামগঞ্জের ডিসিকে বদলি করে ময়মনসিংহের ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে। গতকাল এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ময়মনসিংহের ডিসি মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে বদলি করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে উপসচিব করা হয়েছে। সুনামগঞ্জে দায়িত্বরত ডিসি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীকে ময়মনসিংহের নতুন ডিসি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উপ-সচিব রাশেদ ইকবাল চৌধুরীকে। এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ আমরা না চাইলে এখন কোনো বদলি হবে না। এ ছাড়া ময়মনসিংহের ডিসির প্রত্যাহার চেয়েছিলাম আমরা। এর আগে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) পর্যায়ক্রমে বদলি করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইউএনওদের বদলির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন : স্বতন্ত্র শঙ্কায় ঝুঁকির মুখে হেভিওয়েট দুই ডজন প্রার্থী, আছেন কয়েকজন মন্ত্রীও