নিজস্ব প্রতিবেদক: শিশুর প্রতি যৌন শোষণ ও নিপীড়ন নিরসনে আন্তঃসীমান্ত পরামর্শ সভায় শিশু অধিকার সুরক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তদারকি ও নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সভায় আন্তঃসীমান্ত পর্যায়ে সার্ক শিশু সুরক্ষা নীতির প্রয়োগ নিশ্চিত এবং এ সম্পর্কিত আইন ও নীতি শক্তিশালী করতে সবার সমন্বিত পদক্ষেপ শিশুর প্রতি যৌন শোষণ ও নিপীড়ন এবং নির্যাতন মোকাবেলায় কার্যকর প্রভাব ফেলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
আজ সোমববার (১৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ইনসিডিন-বাংলাদেশ আয়োজিত ওই পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেহের আফরোজ বলেন, দারিদ্রতা ও সচেতনতার অভাবে দালালদের খপ্পরে পড়ে শিশু ও নারীরা পাচারের শিকার হচ্ছে।
এমনকি অনেক সময় পুরুষরাও পাচারের শিকার হয়। তবে পাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি বেশকিছু হটলাইন চালু রয়েছে। সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ণ করেছে। আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও মনিটারিং জোরদার করতে পারলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, করোনাকালে অনেক বাল্যবিয়ে হয়েছে। এমনকি বাল্যবিয়ের মাধ্যমে অনেকে পাচারের শিকার হয়েছে। অনলাইনে সাইবার অপরাধীদের শিকার হয়ে বিদেশে গিয়ে তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু জটিল প্রক্রিয়ার কারণে উদ্ধার হলেও অনেককে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পিতা-মাতাকে সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণাসহ সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানান তিনি।
অতিরিক্ত সচিব শিবনাথ রায় বলেন, শিশু শ্রম, শিশু পাচার ও শিশুর উপর বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন বন্ধে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্ত এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে হবে। আইন কার্যকর করার মাধ্যমে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সার্ক-এর কনভেনশন ও ঘোষণা কার্যকর করতে হবে। এ সকল কাজে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
যুগ্ম সচিব জান্নাতুলে ফেরদৌস বলেন, শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বেশকিছু আইন প্রণয়ন করেছে। এই আইনগুলো কার্যকর করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরী। নারী ও শিশু পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ দমনে সরকারের কাজে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ মানবপাচার দমন ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের শিশু শ্রম নিরসন জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আলোকে শিশুর উপর যৌন নির্যাতনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন এ কে এম মাসুদ আলী। মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, নারী ও শিশু পাচার নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সার্কের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেই। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে সার্কভূক্ত দেশগুলোতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। অনলাইনের ফাঁদে পড়ে শিশুরা যাতে যৌন নির্যাতনের শিকার না হয়, সে বিষয়ে প্রতিরোধে ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় ভারতের অধিকারকর্মী মানবেন্দ্র নাথ মণ্ডল বলেন, সার্ক কনভেনশনে পতিতাবৃত্তির জন্য পাচারের বিষয়ে বলা হয়েছে। সেখানে পাচার সংশ্লিষ্ট অন্তর্ভক্ত করা প্রয়োজন। কনভেনশনের ঘোষণা বাস্তবায়নে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচলনা করতে হবে। শিশু পাচার ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোয় কর্মরত সংস্থাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় শিশু সুরক্ষার সব অনুসঙ্গ পালনে সদস্য দেশ সমূহের অঙ্গীকার পূনর্ব্যক্ত করা হয়। এ অনুষ্ঠানে ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের ৭০ জন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
ইনসিডিনি-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলীর সভাপতিত্বে ওই আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শিবনাথ রায়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জান্নাতুলে ফেরদৌস, ভারত ও নেপালের দায়িত্বপ্রাপ্ত টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডস প্রতিনিধি থাঙ্গাপেরুমাল পোনপান্ডি, টেরে ডেস হোমস নেদারল্যাণ্ডস-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির, এটিএসইসি সাউথ এশিয়ার চেয়ারম্যান মানবেন্দ্র নাথ মণ্ডল, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী, রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি শাহ আলম, বিএলএফ’র জিএম কামরুল আনাম, আইএলও’র এ্যানি ড্রং, আইওএম’র আসমা খাতুন, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক প্রমূখ।
আরো পড়ুন : ডিপিএল এর উদ্বোধনী জুটিতে ৯৭ রান তুলেন বিজয় এবং দিপু