জাতীয় সংসদের-৬, দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত একবার জাতীয় পার্টি ও একবার জামায়াত ছাড়া বাকি সময় আওয়ামী লীগের দখলে ছিল আসনটি। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীতে একজন করে প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল, বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম ও সাবেক ছাত্রনেতা আবু হুসেইন বিপু।
বিএনপি’র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী, মো. জাকির হোসেন ধলু ও মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু। আর জাতীয় পার্টির মো. শাহিনুর ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী রয়েছেন প্রভাষক মাওলানা খোদা বক্স।
মনোরঞ্জন শীল গোপাল: এ আসনে বর্তমান এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল ২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামীর এমপি আবদুল্লাহ আল কাফীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগে। গোপাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে। গোপাল এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির ৯০ ভাগ পূরণ করেছেন দাবি করে মানবজমিনকে বলেন, বাকি ১০ ভাগও মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ হয়ে যাবে। তিনি মনে করেন, এ এলাকার মানুষ উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে তার পাশে থাকবে এবং তাকেই ভোট দেবেন।
মো. আমিনুল ইসলাম: ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত সাবেক এমপি মো. আমিনুল ইসলাম ২০০১ সালে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন।
পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান।
আবু হুসেইন বিপু: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু হুসেইন বিপু। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি দিনাজপুর-১ আসনে কাজ করছেন।
মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী: আগামী নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী হতে গণসংযোগ করছেন কাহারোল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী। ২০০৯ সালে কাহারোল উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০১৪ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও তিনি সব সময় দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করেছেন এবং এখনো আন্দোলন-সংগ্রামসহ সর্বক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন। মামুনুর রশীদ মানবজমিনকে বলেন, আমি জনপ্রতিনিধি ছিলাম বলে এলাকায় আমার গণভিত্তি আছে।
মো. জাকির হোসেন ধলু: বীরগঞ্জ থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ধলু ১৯৯০ সালে বীরগঞ্জ উপজেলার ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হন। জাকির হোসেন ধলু মানবজমিনকে জানান, আমাকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলে আমি বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু: বীরগঞ্জ থানা বিএনপি’র সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুও দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বেশির ভাগ সময়ে দেশের ও নির্বাচনী এলাকার বাইরে অবস্থান করেন। তবে মাঝে মধ্যেই এলাকায় এসে দান-অনুদান, ঈদবস্ত্র ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।
মো. শাহিনুর ইসলাম: বীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুর জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহিনুর ইসলাম জাপার প্রার্থী হিসেবে মোটামুটি চূড়ান্ত। ২০০৪ সালে জাপার ক্রান্তিকালে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে অদ্যাবধি জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জাপার মনোনয়ন পেলে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
প্রভাষক মাওলানা খোদা বক্স: এই নির্বাচনী এলাকার সাবেক এমপি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল কাফীর মৃত্যুর পর সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। সম্প্রতি মাওলানা হানিফ ইন্তেকাল করলে দলীয় মনোনয়ন পান প্রভাষক মাওলানা খোদা বক্স। তিনি নীরবে পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক দাঁড়িপাল্লা না পেলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
অোরো পড়ুন : লক্ষ্মীপুর-৩: দুর্গ পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় বিএনপি, মাঠ দখলে মরিয়া আওয়ামী লীগ