নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত-মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৯০০ ছাড়িয়েছে। গতকালও ডেঙ্গুতে সারা দেশে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু ৯০৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩ হাজার আটজনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮১২ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১৯৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা সাতজন এবং ঢাকার বাইরের ৯ জন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৮ হাজার ৯১৫ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৮১০ জন। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৪ হাজার ৫১৮ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ লাখ ১ হাজার ৮২৮ জন।
ডেঙ্গুতে এ বছর মধ্যবয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। একই সঙ্গে শিশুদের ডেঙ্গু নিয়ে ভয় না পাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। অধিদফতর বলছে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ২০-৫০ বছর বয়সী মানুষ। পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৮ শতাংশের মতো। গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার।
তিনি বলেন, এ বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় জুলাই, আগস্ট এবং চলতি সেপ্টেম্বর মাসে। জুলাই মাসে ছিল ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন, মৃত্যু হয়েছিল ২০৪ জনের। আগস্ট মাসে রোগী ছিল ৭১ হাজার ৯৭৬ জন, মৃত্যু ছিল ৩৪২ জনের এবং সেপ্টেম্বর মাসের আজ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৬০ হাজার ৯০৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩০০ জনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক বলেন, এ বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৭ জন। আমরা জানি যে, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আউটব্রেক হয়েছিল। সেই বছর মোট আক্রান্ত ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন, কিন্তু এই বছর শেষ হওয়ার আগেই যে সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তা ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক বেশি। ডা. হাবিবুল আহসান বলেন, আমাদের ঢাকা সিটি এলাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী। ঢাকা সিটির বাইরে সারা দেশে আমাদের আটটি বিভাগীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বরিশাল বিভাগে। ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী এসব জেলায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম এবং লক্ষ্মীপুর জেলা এবং বরিশাল বিভাগের বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় বেশি আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক বেশ কম। চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও একই প্রটোকল এবং গাইডলাইন অনুসরণ করে ডেঙ্গুর চিকিৎসা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের সব চিকিৎসককে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু চিকিৎসা এবং পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন সংকট প্রসঙ্গে অধিদফতরের এই পরিচালক আরও বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য সব জায়গাতেই পর্যাপ্ত পরিমাণ এনএস-১ কিট মজুদ রয়েছে। ডেঙ্গু পেশেন্ট ম্যানেজমেন্টে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন সেটি হলো আইভি ফ্লুইড স্যালাইন। এই স্যালাইন নিয়ে সাময়িক একটা সমস্যা হয়েছিল আপনারা জানেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জরুরিভাবে আমরা ভারত থেকে ৩ লাখ প্যাক স্যালাইন আমদানি করেছি। এর মধ্যে ৪৪ হাজার প্যাক স্যালাইন আমরা হাতে পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা ইডিসিএলের (এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড) মাধ্যমে এসব স্যালাইন চাহিদা অনুযায়ী পাঠিয়ে দিয়েছি। বাকি স্যালাইনগুলো পর্যায়ক্রমে দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সেগুলো সারা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সুতরাং বলা যায়, এ মুহূর্তে আমাদের কোনো স্যালাইনের সমস্যা হচ্ছে না। এই ৩ লাখ ছাড়াও আরও কিছু স্যালাইন আমদানির প্রক্রিয়া চলছে, সেগুলো অনুমোদনের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। সব মিলিয়ে স্যালাইন নিয়ে আর কোনো সংকটের মুখোমুখি আমাদের আর হতে হবে না।
আরো পড়ুন : ১০০ দিনের মতো বাকি জাতীয় নির্বাচনের; যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত ইসি