কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: দেশে প্রথমবারের মতো সমাজের অবহেলিত হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আবাসস্থল হিসেবে নির্মিত হয়েছে হরিজন পল্লি। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর অনন্য উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেড় শতাধিক হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে আগামী ৯ আগস্ট প্রধানমন্তী শেখ হাসিনা ৫০৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঘর বিতরণের উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যেই রয়েছে চিলমারী উপজেলার ৩০টি হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারের ঠাঁই মিলছে হরিজন পল্লিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের সবুজপাড়া এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন হরিজন পল্লি আবাসন। আবাসনের ঘিরে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সারিবদ্ধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে লাল-হলুদ রংয়ের সেমিপাকা ঘরগুলো। এখানে হরিজন সম্প্রদায়ের ৩০টি পরিবারের প্রায় দেড় শতাধিক সমাজের অবহেলিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট ঘুচে স্থায়ী ঠিকানা পাওয়ায় আনন্দ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় চতুর্থ পর্যায়ের হরিজন পল্লি গড়ে তোলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে হরিজন সম্প্রদায়ের ৩০টি পরিবারকে আবাসন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে প্রতিটি পরিবারের এক লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি ঘরে সাড়ে ১৯ ফুট দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ৫ ফুট বারান্দাসহ দুটি কক্ষ, রান্না ঘর, বাথরুম এবং পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। হরিজন পল্লিতে প্রবেশের জন্য ১০ ফুট প্রশস্তের একটি রাস্তা রয়েছে। থাকবে চারপাশে।
এ ছাড়াও শিশুদের খেলাধুলার মাঠ, শিশু ও বড়দের জন্য পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা, কমিউনিটি সেন্টার, শ্মশান এবং মন্দির নির্মাণ চলমান রয়েছে।
হরিজন পল্লির সুবিধাভোগী সুমি রাণী, পারুলসহ আরও অনেকে জানান, সমাজে আমাদের একটু ভিন্ন চোখে দেখায় ছোট ছোট সন্তান নিয়ে বিভিন্ন অফিসের বারান্দা কিংবা বাজারের দোকানের বারান্দার নিচে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিন রাত পার করতে হয়েছে। কেউ কোনো দিন আমাদের জন্য ভাবেনি বা খোঁজও রাখেনি। কী অসহনীয় কষ্টে আমাদের সুইপারদের জীবন কাটে তা বলে বোঝানো যাবে না। সরকার যে আমাদের মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে স্থায়ী ঘরের ব্যবস্থা করেছে এতে আমরা অনেক খুশি। একবেলা কম খেলেও নিশ্চিন্তে রাতে পরিবার নিয়ে ঘুমাতে পারবো।
সুবিধাভোগী মনি লাল জানান, টিনশেড আধাপাকা ঘরের মধ্যে রয়েছে বারান্দাসহ ২টি কক্ষ, রান্না ঘর, লেট্রিন, নিরাপদ পানিসহ বিদ্যুতের ব্যবস্থা, ঘরের সামনে উঠান, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ, শশ্মান, মন্দির। এমন হরিজন পল্লি পেয়ে এখন আর আমাদের যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে হবে না। এখানে নিজেদের মতো করে আমরা বাঁচতে পারবো।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য হরিজন পল্লি দেশে একটি ইউনিক মডেল হিসেবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর অনন্য উদ্যোগের কারণে চিলমারীতে এক একর জমিতে ৩০টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এই পল্লিতে নাগরিক সুবিধার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও এখানে বসবাসরত হরিজন সম্প্রদায়কে উন্নয়নের মূলধারায় আনতে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। শিশুদের পড়াশোনা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশে প্রথম হরিজন পল্লি সেই প্রেক্ষিতে দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো পড়ুন : আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ সাইবার নিরাপত্তা আইন চায় অ্যামনেস্টি