♦ ডলার সংকটে এলসি খুলতে সমস্যা ♦ গ্যাস স্বল্পতায় উৎপাদন ব্যাহত ♦ বিভাগীয় কমিশনারদের একগুচ্ছ নির্দেশনা ♦ বাণিজ্যে ভোজ্য তেল ও চিনি ব্যবসায়ীদের জরুরি বৈঠক
রুকনুজ্জামান অঞ্জন ও ওয়াজেদ হীরা
আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে নির্বাচিত সরকার। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মেনে বাজার ব্যবস্থাপনা ও পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোও কাজ শুরু করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন সরকার গঠন হলেও পুরনো সমস্যাগুলো রয়েই গেছে। এখনো পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে গিয়ে ডলার পাচ্ছেন না তারা। গ্যাস সংকটের কারণে কারখানাগুলো পুরো চালু রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রমজানে পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সচিবালয়ে ভোজ্য তেল ও চিনি ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যপ্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। সভা শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসায়ীরা পুরনো সমস্যার কথাই তুলে ধরেছেন। তারা গ্যাস ও ডলার সংকটের কথা বলেছেন। উচ্চ রেটে এলসি মার্জিন রাখার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, ৮টি নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন প্রত্যাহারের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে গ্যাস সংকটের কারণে যদি কারখানা পুরোপুরি চালু না থাকে তবে রোজায় পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সিনিয়র সচিব বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্চের মধ্যে গ্যাস সংকট কেটে যাবে। কিন্তু রমজানে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে কারখানাগুলোতে ফেব্রুয়ারি মাসেই পুরোদমে গ্যাস দিতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থ, বাণিজ্য, কৃষিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে আগামী ২১ জানুয়ারি সমন্বয় সভা হবে বলেও জানান তিনি। সূত্র জানায়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসনকেও যুক্ত করছে সরকার। বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছে বার্তা যাচ্ছে। সেই বার্তার নির্দেশনা স্পষ্ট- রোজায় কোনোভাবেই যেন বাজার অস্থিতিশীল না হয়, মানুষের দুর্ভোগ না বাড়ে সে বিষয়ে কড়া নজর রাখতে হবে। মজুদদারির বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা।
বিভাগীয় কমিশনারদের মন্ত্রিসভার নির্দেশনা : আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখতে এবং কৃষিতে উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখতে দেশের সব বিভাগীয় কমিশনারকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিশনারদের মাসিক সমন্বয় সভায় এসব নির্দেশ দেওয়া হয়। আট বিভাগের কমিশনার ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন সচিব সভায় অংশ নেন। প্রতি মাসেই সব বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়ে এ সমন্বয় সভাটি অনুষ্ঠিত হলেও আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে এটিই প্রথম সভা। জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামনে রোজা, তাই দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণসহ এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিভাগীয় কমিশনারদের। মজুদদারি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনা আছে- সেটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সামনে রোজাকে সামনে রেখে বাজার যেন কোনোভাবেই অস্থিতিশীল না হয়- সে বিষয়েও তীক্ষè দৃষ্টি রাখা এবং যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় আইনগতভাবে সেগুলো গ্রহণ করতে বলা হয়েছে বিভাগীয় কমিশনারদের। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, সে লক্ষ্যে বোরো মৌসুমে সেচ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার এই সভায় কৃষি, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাঁরাও বেশ কিছু নির্দেশনা দেন বিভাগীয় কমিশনারদের। সভায় বাণিজ্য সচিব জানান, রোজায় বেশকিছু পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে খেজুর, তেল, ডালসহ বেশ কিছু পণ্যেও দাম সহনীয় রাখতে ট্যাক্স কমানো বা মওকুফ করতে বলা হয়েছে এনবিআরকে। সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ ছাড়া উৎপাদনকারী কৃষক যাতে কোনোভাবেই পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়- সে বিষয়েও স্থানীয় প্রশাসনকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
সভা সূত্র জানায়, সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে বোরো উৎপাদনের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা জানিয়েছেন, বোরো মৌসুমে সেচ এবং সার কোনোটাই সমস্যা হবে না, সার পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এ ছাড়া বোরো আবাদে সেচ নিশ্চিত করতে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশের দেশের তুলনায় দাম কম হওয়ায় ডিজেল পাচার বন্ধেও বিভাগীয় কমিশনারদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের যে নির্বাচনি ইশতেহারটি অর্থাৎ কোনো রাজনৈতিক দল যখন নির্বাচিত হয় তার যে নির্বাচনি ইশতেহার থাকে তখন সেটি সরকারি ইশতেহার হয়ে যায় সেই ইশতেহারটির আলোকে কর্মপরিকল্পনা যেন মাঠ প্রশাসন করে সেটি বলা হয়েছে। এ ছাড়া আসন্ন যে ইস্যুগুলো আছে সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম যেন সহনশীল মাত্রায় থাকে; মজুদদাররা যেন কোনো অনাকাক্সিক্ষত ব্যবস্থা নিতে না পারে- সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে মজুদদারি আর সিন্ডেকেট প্রতিরোধের এ বার্তা প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছেও পৌঁছানো হচ্ছে। গতকাল ভোজ্য তেল ও চিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভায় বাণিজ্যপ্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, কেউ যদি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তার কোনো কষ্ট বা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চেষ্টা করে-তার বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের শক্ত পদক্ষেপ নিতে একটুও পিছপা’ হবে না সরকার। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে আমরা এমন একটি বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করব যেখানে মজুদদারি কিংবা সিন্ডিকেটের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
আরো পড়ুন : জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতল শ্রীলঙ্কা