হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা স্টেডিয়ামে এসে এবার দুুটি শূন্যতায় ভুগবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। সেই শূন্যতা পুড়িয়েছে গতকাল এই মাঠে আসা পাঁচ বাংলাদেশি সংবাদকর্মীকেও। কী সেই শূন্যতা সবার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে। যারা সরাসরি বা টিভির পর্দায় এই স্টেডিয়ামকে দেখেছেন তারা জানেন ধর্মশালা স্টেডিয়ামকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে বরফের পাহাড়। হাজার ফুট উঁচু এই পাহাড়ের নাম ‘ধলাধার’। যার চূড়াতে বছরের বড় একটা অংশ জুড়েই থাকে ধবধবে সাদা বরফ। এখানে সেই সময়টাতে হয় তুষারপাতও। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় টাইগার সমর্থক ও সংবাদকর্মীরা যা এসেছিলেন তাদের হৃদয়ের বড় একটি জায়গা দখল করে নেয় বিশ্বের অন্যতম অপরূপ সুন্দর স্টেডিয়ামটি। যা অনেকের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু এবার একটু হতাশ হতে হবে।
অক্টোবর মাসে খেলা হওয়াতে এখানে সেই সাদা-শুভ্র বরফের ঝিলিক চোখে পড়বে না। আর চোখে পড়বে না সেই বিশ্বকাপে অসাধারণ সেঞ্চুরি হাঁকানো তামিম ইকবালকে। ওমানের বিপক্ষে ৬৪ বলে ১০৩ রানের সেই ইনিংসটি এখনো সবার চোখে ঝিলিক দেয় সুখস্মৃতি হয়ে। দিবে না কেন এটি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরি। কিন্তু ধলাধার পাহাড়ের বরফের মতো এবার খুঁজে পাওয়া যাবে না সেই তামিম ইকবালকেও। শেষ মুহূর্তে দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাকে। অথচ তিন মাস আগেও ছিলেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক!
ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ শুরু হচ্ছে আজ। গতবারের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের লড়াই দিয়ে পর্দা উঠছে আসরের। তামিম ইকবালকে মিস করবে এবার বিশ্বকাপ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মশালা মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভলান্টিয়ারের কাজ করতে আসা কুনাল ও সুনীল বাংলাদেশের সংবাদকর্মী শুনে জানতে চাইলেন- ‘তামিম ইকবাল খেলবে না! হঠাৎ কী হয়েছে দলের মধ্যে?’ প্রশ্নের উত্তর শুনে তারাও কিছুটা বিমর্ষ হলেন, যেতে যেতে বলে গেলেন ‘উই মিস তামিম।’ আইসিসি’র হয়ে মিডিয়াতে কাজ করা প্রকাশ বলেই ফেললেন- ‘তামিমের অভাব তোমাদের এইবার দারুণ ভোগাবে। তার সেই সেঞ্চুরিটি আমরা এখনো ভুলিনি। দেশের বাইরেও তামিমের বাদ পড়া নিয়ে প্রশ্নের যেন শেষ নেই। বিশেষ করে ধর্মশালাতে বাংলাদেশ দল তাদের সুখ স্মৃতি খুঁজতে গেলে তামিমের সেই সেঞ্চুরির কথা মনে করতেই হবে। এই মাঠে ব্যাটারদের যা দিবে দারুণ এক আত্মবিশ্বাস। কারণ ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেবার বাছাই পর্ব খেলতে গিয়েছিল দল। তার আগে দলের অবস্থাও ছিল দেয়ালে পিঠ ঠেকার মতো। সেবার খুব বড় অর্জন না হলেও বাছাই পর্ব উতরে মূল আসরেও খেলার সুযোগ করে নিয়েছিল টাইগাররা।
এই বিশ্বকাপে সেই সময়ের সেই প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবারো আছেন। দলে আছেন সাকিব আল হাসানও। যাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই দল থেকে তামিম বাদ এটাই এখন সর্বত্র আলোচনায়। তামিম যেভাবে বাদ পড়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তো থাকবেই। শুরুটা হয়েছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। আনফিট অবস্থায় প্রথম ম্যাচ খেলার পর বাংলাদেশ ক্রিকেটে শুরু হয় নজিরবিহীন নাটকীয়তা। দেশসেরা ওপেনার ও ওয়ানডে অধিনায়ক হঠাৎ করেই অবসরের ঘোষণা দেন। যদিও ২৯ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ান। ফিরে আসেন ক্রিকেটে। ইনজুরির চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে এশিয়া কাপের আগে নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন। এরপর সুস্থ হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে ফিরেন। ব্যাট হাতে করেন ৪৪ রান। কিন্তু তাতে কী! ততদিনে তাকে বাদ দেয়ার সব পরিকল্পনা হয়তো শেষ হয়েছে। তাই ইনজুরির কথা প্রচার করে তাকে বিশ্বকাপ দলের বাইরে রাখা হয়। যদিও পরে জানা যায়, তাকে ওপেনিং ছেড়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দেয়ার কারণে তিনি নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন।
তবে সিনিয়র তামিমের পরিবর্তে দলে জায়গা করে নিয়েছেন জুনিয়র তামিম। প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ ৮৪ রানের ইনিংস খেলে জানান দিয়েছেন হয়তো তিনি আসছেন তামিমেরই অভাব মেটাতে। এখন দেখার বিষয় ধর্মশালাতে তামিমের শূন্যতা পূরণ না হলেও জুনিয়র তামিম হয়তো আশার আলো হয়ে টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিতে পারেন।
আরো পড়ুন : বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি অব চান্সে হয় নাই