ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি : ঢাকার ধামরাইয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের পর শিল্পী আক্তার (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাসহ নানা অভিযোগে বৃহস্পতিবার হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভুল অপারেশনের অভিযোগ ওঠায় গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
সূত্র জানায়, ১৪ মার্চ পেটের ব্যথা জনিত কারণে উপজেলার বেলীশ্বর গ্রামের দিনমজুর আবদুল মজিদের স্ত্রী শিল্পী আক্তার ভর্তি হন ধামরাইয়ের কালামপুর হলি জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়ে। তাই দ্রুত অপারেশন করানো বাবদ সাড়ে ১৪ হাজার টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয় রোগীর স্বজনদের সঙ্গে। নগদ পাঁচ হাজার টাকা জমাও দেন তারা। এরপর ওইদিনই অপারেশনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের ব্যবস্থা করেন।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, কোনো চিকিৎসক বা সার্জন না থাকায় একজন নার্সকে দিয়ে শিল্পী আক্তারের অপারেশন করানো হয়।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ডা. সুজিত দত্তকে অপারেশনের জন্য আনা হয়। তিনিই ওই রোগীর অপারেশন করেন।
এদিকে অপারেশনের পর থেকে শিল্পীর পেট ফুলে যায়, নাক-মুখ দিয়ে খাবার বেড়িয়ে আসে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে স্বজনদের পীড়াপীড়িতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে) ভর্তির পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে সরাসরি চলে যান হলি জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হলে কালামপুর বাজার বনিক সমিতির সভাপতির মোহাম্মদ রবিউল করিম এক সমঝোতা বৈঠকে বসে। পরে রোগীর স্বজনদের চাপে ফেলে ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়। ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও রোগীর স্বজনদের দেওয়া হয় মাত্র ৫০ হাজার টাকা।
অপর দিকে হাসপাতালের ভেতরে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ, অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) অব্যবস্থাপনা, হাসপাতাল পরিচালনা নিবন্ধনকৃত ডিউটি ডাক্তার না থাকার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বৃহস্পতিবার হাসপাতালটি বন্ধ করে দেন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা। একইসঙ্গে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
হলি জেনারেল হাসপাতালের মালিক মো. বদরুল আলম বলেন, রোগীর অপারেশন নার্স করেনি। সুজিত দত্ত নামে একজন ডাক্তারই রোগীর অপারেশন করেন। অপারেশনের পর রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। হায়াত মউত একমাত্র মহান আল্লাহর কাছে। এক্ষেত্রে কারো কোনো হাত নেই। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।
এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা .নুর রিফফাত আরা বলেন, হাসপাতালটির নিবন্ধনকৃত ডিউটি ডাক্তার নেই। পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা। এছাড়া রোগী মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়ায় এ হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন : শর্টফিল্মটির মাধ্যমে মানুষের জন্য নতুন বার্তা দিবেন সাকিব