মেঝে করিডোর বা টয়লেটের পাশেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। প্রতিকারে উদ্যোগ নেই
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে স্থান সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠার পাঁচ দশকেও বাড়েনি কোনো অবকাঠামো। ধারণক্ষমতার ৩-৪ গুণ রোগী থাকায় শয্যা, মেঝে, বারান্দা ছাড়িয়ে করিডোরে নোংরা পরিবেশে শুয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগী। এতে রোগীর সেবা দিতে সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন সেবিকারা। স্থান সংকটের কথা স্বীকার করে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩৬০ শয্যার শেবাচিম হাসপাতালের পাঁচ তলা ভবনটি পুব থেকে পশ্চিমে ৯৬০ ফিট দীর্ঘ। আয়তন সাড়ে ৪ লাখ স্কয়ার ফিট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করেন। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটি ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। শয্যা ৩ গুণ করা হলেও পাঁচ দশকেও বাড়েনি অবকাঠামো। ফলে ধারণক্ষমতার ৩-৪ গুণ রোগীতে ঠাসাঠাসি বিভিন্ন ওয়ার্ড। স্থান সংকটের কারণে সেবা দিতে সমস্যা হয় সেবিকাদের। মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিকস, গাইনি ও প্রসূতি, শিশু বিভাগ ও নবজাতক ইউনিটে হাটবাজার কিংবা লঞ্চের ডেকের মতো অবস্থা। মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন তৈয়বুর রহমান জানান, হাসপাতালে একটি শয্যা পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। প্রথমে ভর্তি হয়ে মেঝেতে বিছানা পেয়েছেন। দুই দিন পর মেঝে ছেড়ে একটি শয্যা পেয়েছেন। কখনো টাকায় শয্যা মেলে বলে তিনি জানান। মহিলা মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন রাবেয়া বেগম জানান, প্রচুর শীত পড়ছে। এর মাঝে ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিতে সমস্যা হচ্ছে। রোগীর চাপ বেশি থাকলে টয়লেটের পাশে শুয়েও চিকিৎসা নিতে হয় বলে তিনি জানান। মহিলা মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র স্টাফনার্স মণি মিত্র জানান, সব সময় ধারণক্ষমতার ৩-৪ গুণ রোগী থাকে। বাধ্য হয়ে মেঝেতে এবং করিডোরে বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগী চলে গেলে খালি শয্যা অন্য রোগীদের দেওয়া হয়। মেঝেতে গাদাগাদি থাকায় রোগীর সেবা দিতে সমস্যা হয় বলে জানান একই ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফনার্স আসমা বেগম।
বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সমন্বয়ক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, শেরেবাংলা হাসপাতালে স্থান সংকটের কারণে রোগীদের মেঝেতে, করিডোরে, কখনো টয়লেটের পাশেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলে এলেও প্রতিকারে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেই। রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে হাসপাতাল ভবন সম্প্রসারণ করে শয্যা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, স্থান সংকটের কারণে টয়লেটের পাশেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। এতে সেবা দিতেও চিকিৎসক-নার্সদের সমস্যায় পড়তে হয়। এ সমস্যা সমাধানে মেডিকেলের বর্ধিত ভবনটি (মেডিসিন) ছয় তলা থেকে ১০ তলায় উন্নীত করা প্রয়োজন। হাসপাতালটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায় পুরনো আদল ঠিক রেখে একই স্থানে ২০ তলা মেডিকেল ভবন নির্মাণ করা হবে। হাসপাতাল ভবনের পুর্বপাশে পরিবার পরিকল্পনা ভবনের স্থানে একটি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। পশ্চিম পাশে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জন্য একটি ভবনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে অদূর ভবিষ্যতে ৫ হাজার রোগীকে একসঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান পরিচালক।
আরো পড়ুন : ঢাকার সড়কে সড়কে ময়লার স্তূপ