স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) এক শিক্ষকের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় বিলকিস তানিয়া নামের এক তরুণীর। ওই শিক্ষক বাউবিতে চাকরি করেন জানার পর তানিয়া তার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায়। কারণে-অকারণে তানিয়া ওই শিক্ষকের কাছে বাউবিতে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে নানা তথ্য জানতে চায়। যখন তখন মেসেঞ্জারে কথা বলতো। বিভিন্ন সহযোগিতার কথা বলে শিক্ষকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে। গত ৫ই অক্টোবর ওই শিক্ষক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য রামপুরা বনশ্রী এলাকায় যান। বিষয়টি আগে থেকে জানতো তানিয়া। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে ভর্তির বিষয়ে কথা বলার অজুহাতে শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করে। শিক্ষককে দক্ষিণ বনশ্রীর ১০ তলা মার্কেটের সামনে আসার কথা বলে। শিক্ষক সেখানে গেলে তানিয়া তাকে তার বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ করে।
কিন্তু তিনি অনীহা প্রকাশ করেন। তানিয়া অনেক অনুরোধ করার পরও তিনি রাজি হননি। শিক্ষক তখনো কিছু আন্দাজ করতে পারেননি। তানিয়াকে তিনি ভর্তিচ্ছু এক সাধারণ শিক্ষার্থীর বাইরে চিন্তা করছিলেন না। কিন্তু তার জীবনে একটু পর ভয়ঙ্কর কী মুহূর্ত আসছে সেটি একবারও চিন্তা করেননি। আর তানিয়ার কথাবার্তা শুনে সেটিও বুঝার উপায় ছিল না।
তানিয়া যখন বুঝতে পারে শিক্ষক তার বাসায় যাবেন না। তখন সে দ্বিতীয় প্ল্যান প্রয়োগ করে। আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা তার সহযোগীদের ইশারা করে। সঙ্গে সঙ্গে তার কয়েকজন সহযোগী হাজির হয়। শিক্ষক কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নেয়া হয় দক্ষিণ বনশ্রী কাজীবাড়ী টিএন্ডটি টাওয়ার এলাকার একটি বাসার ৬ষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে। সেখানে নিয়ে দরজা বন্ধ করে মারধর করা হয় শিক্ষককে। তখন তিনি তানিয়ার আসল পরিচয় কিছুটা হলেও বুঝতে পারেন। তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে হাত-পা বেঁধে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। তার সঙ্গে থাকা নগদ ৩ হাজার ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা ২০ হাজার টাকা তুলে নেয় তানিয়ার সহযোগীরা। পরে শিক্ষককে নগ্ন করে তানিয়াকে পাশে দাঁড় করিয়ে এবং জড়িয়ে ধরে একাধিক নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। তারপর চক্রের সদস্যরা তার কাছে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। শিক্ষক তখন তার বোন জামাইকে ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলে ১ লাখ টাকা বিকাশের বিভিন্ন নম্বরে এনে চক্রের হাতে তুলে দেন। কিন্তু এতেই থামেনি তানিয়া চক্র। মুক্তিপণ পাওয়ার পরও তারা শিক্ষককে ছেড়ে দেয়নি। তারা আরও ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে দুই দফায় তাকে আরও ৪৫ হাজার টাকা দেয়া হয়।
ওদিকে টাকা দেয়ার পরও শিক্ষক কেন বাড়ি ফিরছেন না সেটি নিয়ে চিন্তিত ছিল তার পরিবার। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার কলাবাগান থানায় একটি জিডি করেন। শিক্ষকের পরিবার থেকে বিষয়টি জানানো হয় এন্টি টেররিজম ইউনিটকে (এটিইউ)। পরে ঘটনার তদন্তে নামে এটিইউ’র একটি চৌকস দল। তদন্তের একপর্যায়ে ভুক্তভোগী ও অপহরণ চক্রের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ভুক্তভোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয় অপহরণ চক্রের ৫ সদস্যকে। খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রী কাজীবাড়ী টিএন্ডটি টাওয়ার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বিলকিস তানিয়া (৩০), মো. বিপ্লব (৩০), ইব্রাহিম হোসেন রাজু (২৯), লিংকন খলিফা (২৪) ও আমির শেখ (৩০)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, লাঠি, হাতুড়ি ও রশি উদ্ধার করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পেশাদার এই চক্রটি বিত্তবান মানুষদের টার্গেট করতো। তাদের ফেসবুক আইডি ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে দেয়া হতো তানিয়াকে। তানিয়া তাদেরকে বন্ধু হওয়ার আমন্ত্রণ জানাতো। টার্গেট ব্যক্তিদের সম্পর্কে আগে থেকেই তথ্য থাকতো তাদের কাছে। তানিয়া সুকৌশলে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতো। বিভিন্ন ধরনের কথা বলে খুব সহজেই তার প্রতি দুর্বল করে নিতো টার্গেট ব্যক্তিদের। পরে দেখা করার সুযোগ এলেই তার আসল পরিচয় প্রকাশ করতো। এভাবে অনেক মানুষের কাছ থেকে তারা ব্ল্যাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এটিইউ পুলিশ সুপার (অপারেশন) ছানোয়ার হোসেন বলেন, চক্রের সদস্য তানিয়া বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচিত হয়ে বিভিন্ন অজুহাতে সখ্যতা গড়ে তুলতো। পরিচয় হলেই সুযোগ খুঁজতো দেখা করার। দেখা হলেই কৌশলে তার বাসায় নিয়ে আটকে রাখতো। কেউ বাসায় যেতে রাজি না হলে অপহরণ করে নিয়ে নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করতো। ভুক্তভোগীর সঙ্গে যা থাকতো সব ছিনিয়ে নিতো। এ ছাড়া মারধর করে আরও টাকা আদায় করাই তাদের মূল কাজ।
আরো পড়ুন : এশিয়ান গেমসে দ্বিতীয় পদক বাংলাদেশের