নিজস্ব প্রতিবেদক : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি কমছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত সাত দিনে ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার প্রায় ৬০ একর জমি, অসংখ্য গাছপালা বিলীন হয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি ভাঙনের সম্মুখীন। নদী তীরবর্তী অনেক মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন।
এদিকে গত দুই সপ্তাহ আগে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় শুকনা তিস্তা নদীতে পানি ছিল না। সেই নদীতে পানি এসেছে। উজান থেকে পাহাড়ি ঢল আবারও নেমে আসার আশঙ্কা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে নদী পারের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইবান্ধা কার্যালয় সূত্র জানায়, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া, ঘাঘটসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজলার তিস্তামুখ পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালি পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার কমেছে।
পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের অন্তত ৩০ একর জমি ও অসংখ্য গাছপালা এবং সদর উপজেলার কামারজান ইউনিয়নের খারজানি ও কুন্দেরপাড়া গ্রামের প্রায় ২০ একর এবং ফুলছড়ি উপজেলার রতনপুর গ্রামের ১০ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে।
রতনপুর গ্রামের আমিনুল মিয়া (৪৯) বলেন, ‘গত দুই বছরে তিনবার ভাঙনের শিকার হয়েছি। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী এলাকায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। পানি বাড়লেও নদী ভাঙে, কমলেও ভাঙে।’ একই গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘আমি ১২ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস লাগিয়েছিলাম। প্রায় সবটাই নদীগর্ভে।’
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভাঙন রোধে কিছু কিছু এলাকায় নদীর তীরে জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ স্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা
পাউবোর রংপুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল বেলা একটায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ বুধ ও কাল বৃহস্পতিবার নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। এতে তিস্তা নদী তীরবর্তী গঙ্গাচড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম ইছলি গ্রামের দুদু মিয়া (৪৫) বন্যা এবং নদীভাঙনের আশঙ্কায় গত পাঁচদিন আগে পার্শ্ববর্তী বাঁধের মধ্যে নতুন করে টিনের চালাঘর নির্মাণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নদী এলাকা চরের মধ্যে থাকতে থাকতে আমাদের বুঝতে দেরি হয় না যে নদীর পানি কখন বাড়বে–কমবে। আকাশের ধরন দেখে আমরা বুঝতে পারি উজানের ঢল আসবে।’
কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরের মানুষজন অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিরাপদে যাওয়ার জন্য। এই চরবাসী গ্রামের মজিবর রহমান বলেন, ‘হামার ফির ঈদ। ঈদের চিন্তা না করিয়া নদীর পানি বাড়ার চিন্তা করিছি।’
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসার আশঙ্কা করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই অনুযায়ী চরের মানুষদের জানিয়ে রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহায়তা করার জন্য প্রস্তুতিও আছে।
আরো পড়ুন : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবার জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করল