চমৎকার সাজানো গোছানো শহর। মক্কা থেকে তায়েফের রাস্তাগুলো পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করা। এক পাশে উঁচু পাহাড় অন্য পাশে শরীর হিম করা গভীর খাদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ এ শহর দেখতে হাজিরা কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখেন
পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থান বায়তুল্লাহ শরীফ বা মসজিদ-আল হারাম। যেটি সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত। সারা পৃথিবী থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হজ কিংবা ওমরাহ পালনের জন্য সেখানে যান। পবিত্র মক্কা নগরী এমনটি অলৌকিক শহর সেখানে কেউ একবার গেলে বারবারই যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। ২০১৮ সালে প্রথমবার ওমরাহ হজ পালনের সুযোগ পেয়েছিলাম। সেবার ছিল পবিত্র মাহে রমজান। তখন সাতদিন অবস্থান করে মক্কানগরী ও মদিনায় মহানবীর রওজা শরীফ জিয়ারত করে দেশে ফিরেছিলাম।
পরের প্রতি বছর রমজান এলেই ওমরাহ হজ পালনের প্রবল ইচ্ছা জেগে উঠে। মাঝখানের কটি বছর কোভিডের বিধিনিষেধের কারণে ইচ্ছাশক্তিতে ভাটা পড়ে। এবার রমজানের বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই ওমরাহ হজ পালনের কথা জানান আমার মা। নারীদের ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী হজ কিংবা ওমরাহ পালনের জন্য মাহরাম পুরুষ (স্বামী, ভাই, ছেলে) সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেজন্য আম্মা আমার সঙ্গে ওমরাহ পালনের ইচ্ছা পোষণ করেন। সেভাবেই প্রস্তুতি নিলাম। চলতি বছর থেকে ওমরাহ হজযাত্রীদের জন্য সৌদি সরকার নতুন নিয়ম চালু করেছে। ভিসার আবেদনের আগে সৌদি-বায়ো অ্যাপস ডাউনলোড করে দুই হাতের ১০ আঙ্গুলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট হয়ে গেলেই মূলত ভিসা অনেকটা কনফার্ম হয়ে যায়। ওমরাহ হজে দুভাবে যাওয়া যায়। সরকার স্বীকৃত কোনো হজ এজেন্সির মাধ্যমে যেতে পারবেন কিংবা নিজ উদ্যোগে ভিসা করে যেতে পারবেন। হজ এজেন্সির মাধ্যমে গেলে তাদের নির্ধারিত প্যাকেজ বাছাই করতে হবে। সেক্ষেত্রে সব খরচ এজেন্সি বহন করবে। তাদের খরচের মধ্যে রয়েছে- ভিসা ফি, আসা-যাওয়ার বিমান টিকিট, হোটেলে থাকা-খাওয়া, মক্কার দর্শনীয় জায়গায় ঘুরে দেখানো। এজেন্সিগুলো প্রতিটি প্যাকেজে ৩০-৪০ জনের একটি গ্রুপ করে। সেই গ্রুপের সদস্যদের গাইড করার জন্য একজন মোয়াল্লেম নিয়োগ দেয় তারা। ফলে কোনো হজ যাত্রীর কোনো সমস্যা হলে মোয়াল্লেম তার দেখভাল করেন। আর নিজ উদ্যোগে গেলে সব কিছু হজ যাত্রীকেই ম্যানেজ করতে হয়।
আমাদের সঙ্গে আমার বড়খালা, খালাতো ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও ছোটভাইয়ের শাশুড়ি যাবেন। তাই আমরা এলাকার পরিচিত এক হজ এজেন্সির প্যাকেজ চূড়ান্ত করি। তারাই আমাদের ভিসা করিয়েছে। ২৫শে মার্চ দ্বিতীয় রমজানে ফ্লাইট। সকাল সোয়া ১০টায় ছাড়ে এয়ার এরাবিয়ার বোয়িং বিমানটি। ৪৯৫টি সিটের ডাউস আকৃতির উড়োজাহাজটি কানায় কানায় পূর্ণ। শারজায় ট্রানজিট। সাড়ে চার ঘণ্টায় পৌঁছে যায় বিমান। শারজাহ বিমানবন্দরে ইহরাম (শেলাই বিহীন সাদা কাপড়) বাঁধি। ৫০ মিনিট বিরতি নিয়ে এয়ার এরাবিয়ার জেদ্দাগামী নতুন বিমানে তোলা হয় আমাদের। আড়াই ঘণ্টায় পৃথিবীর বৃহত্তম বিমানবন্দর জেদ্দায় অবতরণ করে ফ্লাইটটি। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য তিন ঘণ্টা। জেদ্দা এয়ারপোর্টের নতুন টার্মিনালে যখন আমরা পৌছি তখন ইফতারের সময় হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে আমরা যখন ইফতার করি তখন ঢাকায় বাজে ৯টা ৩৫ মিনিট। তাই প্রায় ১৮ ঘণ্টা আমাদের রোজা রাখতে হয়েছে। জেদ্দা এয়ারপোর্টে নামার পরপরই সব ওমরাহ হজ যাত্রীকে সৌদি সরকারের তরফ থেকে দেয়া ইফতারের একটি প্যাকেট সরবরাহ করা হয়। এতে ছিল ২৫০ মিলি একটি ঠান্ডা পানির বোতল, ৫-৬ পিসের একটি খেজুরের প্যাকেট, একটি ইউগার্ড (টক দই), একটি সুস্বাধু বিস্কিট। ইতিমধ্যে আমাদের নেয়ার জন্য চলে আসে হজ এজেন্সির ভাড়া করা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস। বাসে বসেই আমরা ইফতার সারি। ইফতার শেষে বাস মক্কার উদ্দেশে রওনা দেয়। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই বাস গন্তব্যে পৌঁছে যায়। হারাম শরীফের ৫ মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্বেই হোটেল। ইব্রাহিম খলিলি স্ট্রিটের হিজারা রোডে আবদুর রহমান হোটেল। রুমে ঢুকেই দীর্ঘ জার্নিতে ক্লান্ত সবাই বিশ্রাম নিই। ফজরের নামাজ শেষে ওমরাহ হজ সম্পন্ন করি। পরদিন কাবা চত্বরে আসর নামাজ আদায় করি এবং সবাই একসঙ্গে ইফতার করি। কাবা চত্বরের ইফতার এক অপূর্ব দৃশ্য। পৃথিবীর সব মুসলিম দেশের মানুষ এককাতারে বসে একই ধরনের ইফতার করেন তৃপ্তিসহকারে। যেখানে ধনী-গরিবের নেই ভেদাভেদ। তৃতীয় দিন সকালে মক্কা জিয়ারায় (আশপাশের দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন) বের হলাম। প্রথমে মক্কার উম্মুল কোরা ইউনির্ভাসিটি, তারপর জাবালে সুর পাহাড়, আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফা, মিনা, মসজিদে নামিরা, ইসমাঈল (আঃ)-এর কোরবানির স্থান, জাবালে নূর পাহাড়। ইসলামে এই স্থানগুলোর গুরুত্ব অনেক। মক্কা শহর থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যেই সবগুলো দর্শনীয় স্থানের অবস্থান। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এজেন্সির ভাড়াকরা বাসের করে আমাদের নেয়া হয়। মিনিট বিশেকের মধ্যেই জাবালে সুর পাহাড়ে পৌঁছে যাই। যে পাহাড়ে মক্কার কাফেরদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচতে মহানবী (সাঃ) হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) সঙ্গে নিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। মজার বিষয় হলো- জাবালে সূর পাহাড়টি মক্কা শহরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। নবী করীম (সা.) মক্কার উত্তরে মদিনার দিকে না গিয়ে কৌশল হিসেবে দক্ষিণ দিকে জাবালে সূর পাহাড়ে আত্মগোপন করেছিলেন। জাবালে সূর পাহাড়ে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর যাই আরাফাতের ময়দানে। হজের কার্যকলাপ সম্পন্ন করতে আরাফাত, মিনা ও মুজদালিফায় ৫ দিন ধারাবাহিকভাবে অবস্থান করতে হয়। আরাফাতের ময়দানে এখনো ছায়া দিচ্ছে বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাগানো নিমগাছ। আরাফাতের ময়দান দৈর্ঘ ও প্রস্থে ৪ কিলোমিটার। পুরো এরিয়া জুড়ে নিম গাছের সঙ্গে সৌদি সরকারের লাগানো আরও কিছু ছায়াযুক্ত গাছ চোখে পড়লো। আরাফাতের ময়দানের পাশেই মসজিদে নামিরা। মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেয়া হয়।
প্রায় ৮ লাখ মুসল্লির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই মসজিদটির দরজা সারা বছর একদিনই খোলা হয়। যেদিন হজের খুতবা দেয়া হয়। আর জাবালে নূর পাহাড়ের হেরা গুহায় মহানবী (সাঃ) ধ্যান করতেন এবং সেখানেই পবিত্র কোরআন শরীফ প্রথম নাজিল হয়েছিল। মক্কা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের এই পাহাড়ে নবীজী যখন ধ্যান করতেন তখন তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী হজরত খাদিজা (রাঃ) প্রতিদিন এই পাহাড়ি দুর্গম পথ হেঁটে খাবার দিয়ে যেতেন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো- দিনের বেলায় প্রখর রোধে এই পাহাড়ে উঠা অনেক কষ্টকর। তাই দর্শনার্থীরা রাতে জাবালে নূর পাহাড়ে উঠেন। তাও প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। একজন নারী কিভাবে এতদূরের পাহাড়ি দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে উঠতেন ভাবতেই আশ্চর্য লাগে। দিনের বেলায় প্রচ- রোদ থাকায় আমরাও জাবালে নূর পাহাড়ে উঠার সাহস করিনি। রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে নবীজীর স্মৃতিবিজরিত পাহাড় দেখলাম। দুপুরের মধ্যেই সবগুলো স্থান আমাদের দেখা শেষ হয়ে যায়। বেলা ২টার আগেই হোটেলে ফিরে পরদিন তায়েফ শহরে যাওয়ার প্ল্যান করলাম। ১৫ জনের সিটের একটি হাইয়েস গাড়ি ভাড়া করলাম। জনপ্রতি ভাড়া ৫০ রিয়াল করে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫০০ টাকা। সকাল ১০টায় রওনা হলাম তায়েফের উদ্দেশে। হোটেল থেকে কিছুটা পথ হেঁটে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি চললো ১৩০-১৪০ কিলোমিটার গতিতে। মক্কা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত শহর তায়েফ। এ শহর ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। চমৎকার সাজানো গোছানো শহর। মক্কা থেকে তায়েফের রাস্তাগুলো পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করা। এক পাশে উঁচু পাহাড় অন্য পাশে শরীর হিম করা গভীর খাদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ এ শহর দেখতে হাজিরা কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখেন।
পাহাড় কেটে বানানো রাস্তাটি একমুখী। অনেক উপরে ওঠার প্রতিক্রিয়ায় গাড়ির ভেতরে নিঃশ্বাস নিতে কিছুটা কষ্ট হওয়ার পাশাপাশি, কান বন্ধ হয়ে যায় আপনা-আপনি। তায়েফের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায়, ঝকঝকে নীল আকাশ। মরুর দেশে এমন নীল আকাশের কথা চিন্তা করা যায়? পাহাড় দেখে মানুষ কেন আপ্লুত হয়, সেটা তায়েফের পাহাড় না দেখলে জানতাম না। খুব বেশি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেই। তারপরও আমার মনে হয়, পাহাড়ের সৌন্দর্য আর আকাশের সত্যিকারের নীল দেখতে হলে তায়েফের আকাশ দেখতে হবে।
তায়েফবাসীর নির্মম নির্যাতনে রক্তাক্ত নবী এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, পরে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত শহর তায়েফের সৌন্দর্য পর্যটকরা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখেছেন। মক্কায় এসে সেই তায়েফ না দেখা অনেকটা বোকামি। তবে তায়েফের পূর্ণ সৌন্দর্য দেখতে হলে পুরো একটি দিন থাকতে হবে সেখানে, কারণ তায়েফের আকাশ আর সৌর্ন্দয ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। রাতের তায়েফ নাকি অনেক বেশি মোহনীয়। সেটা অবশ্য দেখা হয়নি।
নবুওয়তপ্রাপ্তির পর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে তায়েফ এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তায়েফবাসী ইসলাম গ্রহণের পরিবর্তে নবীকে অত্যাচার ও নির্যাতন করে রক্তাক্ত করে। ইসলাম প্রচার করতে এসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তায়েফে প্রায় ১০ দিন অবস্থান করেছিলেন। তারপর ফিরে গেছেন তায়েফবাসীর নানা নির্যাতন সহ্য করে। তায়েফ থেকে ফেরার পথে নবীজীকে ‘পাগল’ আখ্যায়িত করে ছোটো ছোটো শিশুদের লেলিয়ে দিয়েছিল পাথর নিক্ষেপের জন্য। রক্তাক্ত অবস্থায় নবী করিম (সা.) একটি আঙ্গুর বাগানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যেখানে নবী করিম (সা.) আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের নাম মসজিদে আদ্দাস। এত অত্যাচার নির্যাতনের পরও ফিরে যাওয়ার সময় তায়েফবাসীর জন্য দোয়া করেছিলেন নবী করীম (সা.)। নবীজীর দোয়ার বদৌলতেই তায়েফে সুমিষ্ট ফল-ফলাদিতে ভরে যায়।
তায়েফ নগরের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৩৩২ ফুট। পুরো শহরটিই গড়ে উঠেছে পাহাড়ের ওপর। প্রখর রোদের মধ্যেও তায়েফে প্রচ- শীত অনুভূত হয়। তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রি থাকে সব সময়। যেখানে দাঁড়াবেন ঝড়ো বাতাস আছড়ে পড়বে গায়ে। পথে উট-দুম্বা ও ছাগলের পাল দেখা যায়। বাদশা ফয়সাল ও বাদশা খালেদের আমলে শীতকালীন রাজধানী হিসেবে গণ্য করা হতো তায়েফকে। বাদশা খালেদের শাসনামলে এখানে একবার ওআইসি’র শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। রবিশস্য ও নানান ফল-ফলাদির জন্য তায়েফ বিখ্যাত। তায়েফে উৎপন্ন আঙুর, কমলা, আনার ইত্যাদি অতি দামী ফলফলাদি মিষ্টি ও পুষ্টিতে ভরপুর। বিশেষ করে তায়েফের আঙুর খুব বিখ্যাত। তায়েফের উৎপাদিত সবজি সৌদি আরবের চাহিদার প্রায় ৩০ ভাগ পূরণ করে।
মসজিদে ইবনে আব্বাস
প্রাচীনকাল থেকে মক্কা ও তায়েফবাসীর মাঝে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আব্বাস (রা.) তায়েফের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। পরে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তায়েফের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যান। তায়েফের প্রধান মসজিদকে ইবনে আব্বাস মসজিদ বলা হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কবর মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে। এ কবরস্থানে আরও অনেক সাহাবির কবর রয়েছে। মসজিদ সংলগ্ন একটি লাইব্রেরি আছে। সেটা অবশ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। তবে সেখানে প্রাচীন অনেক কিতাবের সংগ্রহ আছে। রয়েছে হজরত আব্বাস (রা.)-এর হাতের লেখা কোরআনের কপিসহ বিভিন্ন সময়ে পাথর ও কাগজে লিখিত কোরআনের প্রাচীন কপি।
কথিত সেই বুড়ির বাড়ি
তায়েফ শহরের উপকণ্ঠে রাস্তার পাশেই কথিত সেই বুড়ির বাড়ির অবস্থান। যেই বুড়ি মহানবী (সাঃ) আসা-যাওয়ার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন। কয়েকদিন পথে কাঁটা না পেয়ে নবীজী বুড়ির বাড়িতে যান। দেখেন- বুড়ি অসুস্থ। মহানবীর এই মহানুভবতা দেখে লজ্জা পড়েন যান সেই বুড়ি। বুড়ির একতলা বাড়িটি চারপাশ দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বাড়িটিতে রয়েছে একটি দরজা। পর্যটক বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেন।
খাবারের সন্ধানে রাস্তায় নেমে আসা বানর
তায়েফ শহরে রয়েছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে তৈরি করা চমৎকার সব রিসোর্ট, পার্ক আর অবকাশ যাপনকেন্দ্র। দিনের বেলা আর হজের মৌসুম বলে মানুষজনের দেখা মিলল না। পর্যটকদের আনন্দ দিতে রয়েছে পাহাড়ে ক্যাবল কারের ব্যবস্থা। তায়েফের প্রবেশপথে ওকাজ নামক স্থানে রয়েছে ফলমূলের বিশাল বিশাল দোকান, বাচ্চাদের খেলার মাঠ। এখানে ভাড়ায় মরুভূমির জাহাজ উটে সওয়ার করা যায়। কিন্তু এর সবই হয় বিকেলে! অগত্যা অনেকটা খালি মাঠে আমাদের তায়েফ দেখতে হলো। তবে একেবারে হাতাশা নয়, আমাদের আনন্দ দিলো পাহাড় থেকে নেমে রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো বানরের দল। রাস্তার পাশের বাশি ফল নিয়ে বানরের দলের কাড়াকাড়ি আমরা উপভোগ করলাম।
মিকাত কারনুল মানাযিল
ফেরার পথে তায়েফ শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত মিকাত কারনুল মানাযিল মসজিদ। বিস্তৃত আয়তন নিয়ে তৈরি মসজিদটিতে রয়েছে নারী-পুরুষের আলাদা গোসলের ব্যবস্থা। মসজিদের গোসলখানায় গোসল সেরে ওমরার নিয়ত করে ইহরাম পরিধান করলাম। এরপর মসজিদে দুই রাকাত নামায় আদায় করলাম। ফের মক্কার পথে রওনা হলাম।
আরো পড়ুন : ঢালিউড নায়িকাদের মধ্যে কে কাকে ছাড়িয়ে!