আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসনে আরও বড় পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার। উপসচিব পদে এই পদোন্নতি দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগেই ডিসেম্বরের মধ্যে সাতজন সচিব অবসরে যাবেন। এক্ষেত্রে নতুন করে চুক্তিতে নিয়োগ না দিলে সচিব পদেও আসবে নতুন মুখ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। উপসচিবদের পদোন্নতির বিষয়টি কয়েকদিনের মধ্যেই হতে যাওয়া সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলেও জানা গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিসিএস ২৯ ব্যাচে মোট ২০৯ জন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ১৭৭ এবং বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডার থেকে একীভূত হয়েছে আরও ৩২ জন। ২৯ ব্যাচের সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডার ও লেফট আউট হিসেবে পূর্বের বাদ পড়া তালিকা থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তা মিলিয়ে উপসচিব হওয়ার জন্য ৫ শতাধিকের বেশি কর্মকর্তার তালিকা করেছে মন্ত্রণালয়। বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বিদেশে আছেন। সিনিয়র সচিব দেশে ফিরলে আগামী এসএসবি বোর্ডে এটি উপস্থাপন হতে পারে। ২০২১ সালে তারা উপসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। ২০১১ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তারা। চাকরির ক্ষেত্রে ১০ বছর বিবেচনায় নেওয়া হয় উপসচিব হিসেবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পদোন্নতি পাবেন কি না সেটি নিয়ে অপেক্ষমাণ অনেক কর্মকর্তা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদে কর্মরত এক সিনিয়র সহকারী সচিব বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি, যেহেতু সিনিয়র স্যারদের পদোন্নতি হয়ে গেছে। আমাদেরটা নির্বাচনের আগে না হলে অনেক পিছিয়ে যাব। ইতোমধ্যে যোগ্যতা অর্জন করেছি দুই বছর। সরকারি চাকরিতে নিয়মিত পদোন্নতি পাব এটাই তো প্রত্যাশা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বিশ্বাস আমরা নিরাশ হব না। সময় কম থাকলেও দ্রুতই আমরা সুখবর পাব। জনপ্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের আগে পদোন্নতি দিলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি কাজ করবে। সরকার বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচনের আগে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিচ্ছে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন পদ সৃষ্টি এবং পদোন্নতির সঙ্গে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ থাকে। কাজেই এ প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত হতে হবে যেন নাগরিক সেবার গুণগত ও পরিমাণগত মান বৃদ্ধি পায়। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পর্যাপ্ত পদ না থাকলেও তিন দফায় জনপ্রশাসনে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের সচিব (সংযুক্ত) মো. আবদুস সবুর মন্ডল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কয়েকটি এসএসবি সভা হবে। হয়তো আগামী অক্টোবরের মধ্যে এটি হতে পারে। আমাদের কাজ চলছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এরই মধ্যে পদোন্নতি দিয়েছি। সামনে উপসচিবদের বিষয়ে আলোচনা আছে। আমরা যে পদোন্নতি দিয়েছি বা দিচ্ছি এখানে নির্বাচনের কোনো বিষয়ই নেই। এগুলো আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ। পদোন্নতিতে আমাদের কোনো তড়িঘড়ি নেই। অক্টোবরের মধ্যে করতে না পারলে এটি জানুয়ারিতে চলে যাবে। তবে ভোটের কারণে পদোন্নতি দেওয়ার কোনো চাপ নেই।
সচিব পদেও তাকিয়ে অনেকে : নির্বাচনের আগে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাতজন অবসরে যাবেন। যদিও নির্বাচনের আগে অনেকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন। তবে আগামীতে সচিবের পদ খালি হওয়া শূন্যস্থানে নতুন কেউ এলে বিসিএস ১৩ ব্যাচ থেকে সচিব করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তাকে ১৩ ব্যাচ থেকে সচিব করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামনে সচিবের পদ খালি হবে এটা ঠিক, তবে সেখানে নতুন এলে ১৩ ব্যাচ থেকেই আসবে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, ভূমি আপিল বোর্ডের সচিব, ইআরডি সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, কারিগরি মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব, ট্যারিফ কমিশন এবং পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য (সচিব) অবসরে যাবেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এই পদে যেতেও মুখিয়ে আছেন অনেক কর্মকর্তা। চলছে নানা রকম তদবির।
আরো পড়ুন : মানুষ সিনেমাটির মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো জুটি বেঁধে প্রেক্ষাগৃহে আসছেন জিত্ ও মীম