রংপুর প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কারণে মানুষ একসময় ভালো ছিল না। এখন মানুষ ভালো আছে। নৌকা ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে, আপনারা ভালো থাকবেন। এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা, কারণ নৌকাই মহাপ্লাবন থেকে এ দেশকে বাঁচিয়েছে। আমি আপনাদের নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। গতকাল দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই আপনাদের সেবা করতে পারছি। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। সকলের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। চিকিৎসা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে এখানে এসেছিলাম।
আপনারা নৌকা মার্কাকে নির্বাচিত করেছেন। এতে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আর আমি সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে সার-বীজসহ বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা এখন কলের লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে। পঞ্চাশ থেকে সত্তর শতাংশ কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও চিকিৎসাসেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা দিয়েছিলাম, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবার হাতে হাতে মোবাইল। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেক এলাকায় মানুষের জন্য ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, একসময় রংপুর-নীলফামারীসহ এই অঞ্চলে মঙ্গা লেগেই থাকতো, রাস্তাঘাট ছিল না। কথা ছিল নির্বাচিত হলে এই অঞ্চলের মঙ্গা দূর করবো। এখন এই অঞ্চলে মঙ্গা নেই। সারা দেশে ৫৬২টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করা হয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের জন্য সমানভাবে উন্নয়ন করছি। যাদের বাড়ি নেই, তাদের জমি ও বাড়ি দেয়া হয়েছে। যদি কোনো ভূমিহীন থাকে তাহলে আমাকে খবর দেবেন। পরে তিনি মিঠাপুুকুরে আওয়ামী লীগের পথসভায় যোগ দিয়ে বিকালে রংপুর পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রংপুর-৬ আসনের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
পীরগঞ্জে বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত থেকেছে। স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দেশে দুর্ভোগ কেউ চায় না। কিন্তু যারা বিগত সময়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে তারা মানুষের শান্তি চায় না। সারা দেশের মতো তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, বাসে আগুন, ট্রেনে আগুন থেকে রংপুরও বাদ যায়নি। বিএনপি-জামায়াত ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলে মানুষ মারার ফাঁদ তৈরি করেছে। এ থেকে ঘৃণার আর কী হতে পারে। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও করাই আনন্দ। এটি তাদের আন্দোলন। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি, মানুষ হত্যা কিসের আন্দোলন এটাই আমার প্রশ্ন। তরুণ-ছাত্রদের বলবো- প্রত্যেকে সজাগ থাকতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস করতে যারা আসবে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধরতে হবে। উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি। দিন-রাত পরিশ্রম করি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। তারা আসে ধ্বংস করতে। প্রয়োজনে বাড়ির পাশে রেললাইন থাকলে পাহারা দিতে হবে। যারা অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কাজ করে মানুষ খুন করে তাদের প্রতি সকলকে সজাগ থাকার অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ। কি বাহে একখান ভোট মুই পামো না? হামাক একখান ভোট দিবেন। এই যে আমার মেয়ে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে দিয়ে গেলাম। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করা মানে আমাকে জয়ী করা, জয়-পুতুলকে জয়ী করা। আপনাদের হাত তুলে ওয়াদা করেন। নৌকা জিতলে আমি আবার আসবো। এখানে এসে সভা করে এ অঞ্চলের বাকি কাজ করে যাবো। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের পুল, ব্রিজ, কালভার্ট, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। অবহেলিত রংপুরের উন্নয়নে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করেছি। আজকের তরুণ ভোটারদের বলবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম, দেশ আজ ডিজিটাল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে কারও হাতে মোবাইল ছিল না। আজ দেখি সবাই মোবাইল দিয়ে ছবি তুলছে। ওয়াইফাই সুবিধা, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরে বসেই অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করা, ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে তরুণদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ শিক্ষিত জাতি ছাড়া দেশের দারিদ্র্যবিমোচন করা সম্ভব নয়। আজকের প্রার্থী শিরীন শারমিন চৌধুরী জীবনে কোথাও ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয় নাই। তিনি বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। অত্যন্ত মেধাবী মানুষ। আমরা চাই রংপুর বিভাগসহ সারা দেশের মানুষ এভাবে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। আমরা বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে বই দিচ্ছি, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিচ্ছি। মেয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলেছি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যবিমোচন একাডেমি করে দিচ্ছি। যাতে গোটা রংপুরবাসী এর সুফল পেতে পারে। নদীগুলো ড্রেজিং করা, খাল খনন করা, পুকুর খনন করে মাছ চাষ বৃদ্ধি করাসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে। ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সারা দেশের ছেলে-মেয়েরা কাজ করে পয়সা উপার্জন করছে ও জনগণকে সেবা দিচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করা হয়েছে। মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের দুই কাঠা জমিসহ বাড়ি করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া হরিজন, বেদে, তৃতীয় লিঙ্গ ও ভাসমান মানুষদেরও ঘর করে দেয়া হচ্ছে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনের নাগরিকের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। তাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। বিদেশে যেখানেই আমি যাই, সব জায়গায় এর প্রতিবাদ জানাই। আজ যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিয়েছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। এ থেকে দেশের জনগণকে রক্ষায় ভর্তুকি মূল্যে পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য দিচ্ছি। অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে যন্ত্রাংশ, সার, কীটনাশক, বীজ দেয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে কৃষকরা যেন ফসলের ন্যায্য মূল্য পান সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার আহ্বান থাকবে দেশের এক ইঞ্চি জায়গায়ও যেন অনাবাদি না থাকে। সব জায়গাকে চাষ করবেন, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন, মাছ উৎপাদন করবেন। আমরা পুষ্টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে দেশে মাছ-মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। আমি কথা দিয়ছিলাম দেশের সবপ্রান্তে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো। আমি সেই কথা রাখতে পেরেছি। দুর্গম এলাকায় সোলারের মাধ্যমে আলোকিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সব জায়গায় সোলারের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে কোনো সমস্যা হলে সোলারের আলো জ্বলে।
মিঠাপুকুরের নির্বাচনী সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। তাই সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, কোনো সংঘর্ষে জড়ানো যাবে না। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সহিংসতা যেন না হয়। নূহ নবীর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে বাঁচিয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বজায় রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভায় সফরসঙ্গী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাবেক ছাত্র নেতা আব্দুল মতিন, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, অভিনেত্রী তারিন জাহান, শামীমা তুষ্টি প্রমুখ।
আরো পড়ুন : ভোট বর্জন করতে সারা দেশে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেছে বিএনপি