পাকিস্তানে সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। ওই সরকারে যোগ দেবে আরও চার রাজনৈতিক দল। দলগুলো হচ্ছে- এমকিউএমপি, পিএমএল-কিউ, আইপিপি ও বিএপি। নতুন এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরীফের ভাই শেহবাজ শরীফ। এমনটাই জানিয়েছে পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো। এতে বলা হয়েছে, নওয়াজ নিজেই শেহবাজকে এই জোট সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।
এর আগে তাকে সমর্থন দিয়েছেন পিপিপি প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো। মঙ্গলবার তিনি ঘোষণা করেন যে, তার দল পিএমএল-এন দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে সমর্থন দেবে। তবে তিনি একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পিতা আসিফ আলী জারদারির নাম প্রস্তাব করেছেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন তিনি।
জিও টিভি জানিয়েছে, মঙ্গলবার কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এক হয়েছে পাকিস্তানের ছয় রাজনৈতিক দল। দেশটির সাবেক সরকার পিডিএম-এর আদলেই নতুন সরকার গঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পিএমএল-কিউ সভাপতি চৌধুরী সুজাত হুসেনের বাসভবনে দলীয় প্রধানদের বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী জোট সরকারের জন্য ছয়দলীয় জোটের ঘোষণা দেন আসিফ আলী জারদারি। তিনি বলেন, একসঙ্গে সরকার পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে কেন্দ্রে সরকার গঠনে অংশ নেবে না তারা। এতদিন বিলাওয়ালের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ্রহের বিষয়ে যেসব খবর বেরিয়েছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হলো তার ওই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পিতার নাম প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, আমি চাই আসিফ আলী জারদারিকে প্রেসিডেন্ট করা হোক। কারণ পাকিস্তান যখন জ্বলছে, তখন একমাত্র তিনিই এই আগুন থামানোর ক্ষমতা রাখেন।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়াও বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রীর পদের দিকেও নজর রয়েছে পিপিপি’র। দলটিকে এসব দাবিতে সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে পিএমএল-এন। তাই বড় কোনো পরিবর্তন না হলে পাকিস্তান পিএমএল-এন দলের প্রধানমন্ত্রী ও পিপিপি দলের প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী না হলেও রাজনীতি থেকে দূরে সরছেন না নওয়াজ। বুধবার তার মেয়ে ও পিএমএল-এন ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ জানান, রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবেন তার পিতা। এক এক্স পোস্টে তিনি বলেন, নওয়াজ আগামী পাঁচ বছর শুধু সক্রিয়ভাবে রাজনীতিই করবেন না, তিনি পাঞ্জাব ও কেন্দ্রে পিএমএল-এন সরকারের সব ইস্যু দেখবেন। মরিয়ম আরও বলেন, শেহবাজ শরীফ ও আমি নওয়াজেরই সৈনিক। আমরা তার আদেশ, নেতৃত্বে এবং তত্ত্বাবধানে কাজ করবো। আল্লাহ আমাদের সফলতা দান করুন। আমিন।
এদিকে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন জেইউআই-এফ প্রধান ফজলুর রেহমান। তিনি বলেছেন, প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার বিষয়টি এখন স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। তিনি নওয়াজ শরীফের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, পিএমএল-এন যেনো জেইউআই-এফের সঙ্গে বিরোধীদের কাতারে বসে। মাওলানা ফজলুর আরও বলেন, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রথম দিন থেকেই সন্দেহজনক ছিল। ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার দলের প্রার্থীদের দায়ের করা আবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আগামী ২২শে ফেব্রুয়ারি আমরা স্থানীয় সাধারণ পরিষদের সঙ্গে একটি সভা করবো। এরপর ২৫শে ফেব্রুয়ারি আমরা বেলুচিস্তানে একটি সভা করবো, ২৭শে ফেব্রুয়ারি আমরা কেপিতে সভা করবো। এরপর করাচি ও লাহোরে ৩রা মার্চ এবং ৫ই মার্চ সভা হবে।
এদিকে খাইবার পাখতুনখোয়ায় জোট সরকার গঠনের জন্য পিটিআই’র আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াত-ই-ইসলামী। প্রথমে রাজি হলেও শেষ মুহূর্তে এসে অবস্থান পরিবর্তন করে দলটি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম এক্সে দেয়া এক পোস্টে জামায়াত-ই-ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর লিয়াকত বালুচ বলেন, তার দল ৮ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর পিটিআই-এর সঙ্গে একটি বৈঠক করেছিল। জামায়াত ভোটের ফলাফলে তার অসন্তোষ প্রকাশ করলেও জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে জয়ী পিটিআই-সমর্থিত এমএনএদের স্বাগত জানিয়েছিল। তাই জামায়াত এই এমএনএদের সঙ্গে দলীয়, সাংবিধানিক ও সংসদীয় সুরক্ষার শর্তে এক হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পিটিআই শেষ পর্যায়ে জানায় যে, তারা শুধুমাত্র খাইবার পাখতুনখাওয়াতেই সরকারের জন্য একটি জোট চায়। জামায়াত যেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা জাতীয় স্তরে পিটিআইয়ের সঙ্গে জোট করবে, সেখানে পিটিআইর অবস্থান যদি এরকম হয় তাহলে তারা খাইবার পাখতুনখাওয়াতেও যার সঙ্গে ইচ্ছা জোট করে নিক।
আরো পড়ুন : ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে পিছু হটলে গুপ্তহত্যার শিকার হতে পারেন পুতিন