পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বিসিসি পরিচালিত মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা

অনুসন্ধানী জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য কথা

বরিশাল ব্যুরো: বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) পরিচালিত মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। নগরীর কাউনিয়ায় ২০ শয্যার নগর হাসপাতালসহ পাঁচটি সেবাকেন্দ্রে ১ এপ্রিল তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষরা এসব প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে স্বাস্থ্যসেবা পেতেন। বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্বাস্থ্যসেবাপ্রত্যাশীরা। চাকরি নিয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন ১২ চিকিৎসকসহ ১০১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

তবে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু হওয়া নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে বিসিসি এবং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সীমান্তিক’। প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু বলেছেন, সিটি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বিসিসি নিজেরাই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করবে। অন্যদিকে সীমান্তিকের দাবি, বিসিসির সঙ্গে তাদের চুক্তির মেয়াদ আরও ১৫ মাস বৃদ্ধির আবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আরবান হেলথ কেয়ার প্রকল্পের আওতায় বিসিসির মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করত সীমান্তিক। মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য কাউনিয়া বাঁশেরহাট এলাকায় রয়েছে ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল এবং রূপাতলী হাউজিং, আলেকান্দা জমির খান সড়ক, কাউনিয়া প্রধান সড়কের পানির ট্যাঙ্কির পাশে ও আমানতগঞ্জ পলাশপুরের বউবাজার এলাকায় রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। প্রতিটি কেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসকরা বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিতেন এবং হাসপাতালে প্রসূতি নারীরা প্রসব, সিজার অপারেশনসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পেতেন। এখন হাসপাতালসহ এর সব সেবাকেন্দ্রই বন্ধ হয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে কাউনিয়া বাঁশেরহাট সংলগ্ন হাসপাতালে গিয়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। একজন প্রহরী সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, ১ এপ্রিল থেকে হাসপাতালসহ অপর চার স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন পর আবার চালু হবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁদের জানিয়েছেন। চারজন প্রহরী পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় লাকুটিয়া এলাকার অন্তঃসত্ত্বা নারী কাকলী বেগম হাসপাতালে আসেন আলট্রাসনোগ্রাম করার জন্য। প্রহরী ওই নারীকে হাসপাতাল বন্ধের কথা জানিয়ে তাঁকে সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রহরী বলেন, বন্ধের পরও প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগী আসছেন হাসপাতালে। তাঁদের সবাইকে একই পরামর্শ দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, তাঁরা বেসরকারি সংস্থা সীমান্তিকের নিয়োগে চাকরি করেন। ১ এপ্রিল সকাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁদের জানিয়েছেন, বিসিসির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য তাঁরা মন্ত্রণালয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। মেয়াদ বৃদ্ধি হলে আবার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হবে। ওই চিকিৎসক জানান, একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা এবং নবজাতকদের সেবা দেওয়া হতো এই প্রতিষ্ঠানে।

সীমান্তিকের প্রকল্প পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ সমকালকে বলেন, গত ৩১ মার্চ বিসিসির সঙ্গে তাঁর প্রতিষ্ঠানের ৫ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদ আরও ১৫ মাস বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ আবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।

বিসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. খন্দকার মঞ্জুরুল ইমাম শুভ বলেন, নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো পরিচালনায় সীমান্তিকের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এর পর ওই প্রতিষ্ঠানটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেনি। যে কারণে সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে।

বিসিসির প্যানেল মেয়র গাজী নইমুল হোসেন লিটু বলেন, নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হতো। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাচারিতা, অবৈধ গর্ভপাত সেবার নামে দুর্ভোগের অভিযোগ ছিল। তাই বিসিসি চুক্তির মেয়াদ বাড়ায়নি। মেয়রের সিদ্ধান্ত হলো– বিসিসি নিজেরাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো চালাবে। আসন্ন সিটি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এগুলো চালু হতে পারে। এক্ষেত্রে কয়েক মাস সেবাগ্রহীতারা কোথায় যাবেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভালো কিছু পেতে হলে তো সময় দিতেই হবে।’

আরো পড়ুন : রোড ফায়ার হাইড্র্যান্ট না থাকায় দুরূহ হয়ে পড়ছে আগুন নেভানো

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *