পোল্যান্ড–যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমত ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দেয়া নিয়ে

আন্তর্জাতিক প্রচ্ছদ হ্যালোআড্ডা

জার্মানিতে মার্কিন বিমানঘাঁটির মাধ্যমে ইউক্রেনে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান পাঠাতে পোল্যান্ডের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলেছে, প্রস্তাবটি সমগ্র ন্যাটো জোটের জন্য গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী ও রুশ হামলার বিরুদ্ধে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য পশ্চিমা নেতাদের কাছে যুদ্ধবিমান পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ নিয়ে তাঁদের অনাগ্রহ ও পাশাপাশি আলোচনা চলার মধ্যেই গত মঙ্গলবার ওয়ারশর পক্ষ থেকে সোভিয়েত আমলের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দেওয়ার এই প্রস্তাব এসেছে।

পোল্যান্ডের প্রস্তাব অনুযায়ী, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলো জার্মানির রামস্টেইনে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে সরবরাহ করা হবে। এরপর সেগুলো পাঠানো হবে ইউক্রেনে।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি বলেন, ‘আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত ন্যাটো সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে নিতে হবে। এ কারণেই আমরা আমাদের জেট ফাইটারের সব বহর রামস্টেইনকে দিতে রাজি। কিন্তু আমরা নিজে থেকে কোনো পদক্ষেপ নেব না, কারণ আমরা এ যুদ্ধের কোনো পক্ষ নই।’

তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে মার্কিন-ন্যাটো ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান উড়ে যাওয়ার প্রস্তাবটি সমগ্র ন্যাটো জোটের জন্যই গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

জন কিরবি বলেন, ‘আমরা পোল্যান্ড ও অন্য ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাব। এ ছাড়া এ ক্ষেত্রে বর্তমানে যে কঠিন লজিস্টিক সমস্যা রয়েছে তা–ও আলোচনা করা হবে। কিন্তু এ মুহূর্তে পোল্যান্ডের প্রস্তাবটি যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মনে করি।’ মুখপাত্র আরও বলেন, ‘পোল্যান্ডের প্রস্তাবের সারগর্ভ কোনো যুক্তি আছে কি না তা স্পষ্ট নয়।’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো অক্ষত রয়েছে। তবে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিও হয়েছে।

ইউক্রেনের বিমানবহরে রয়েছে সোভিয়েত আমলের মিগ-২৯, সুখোই-২৭ জেট ও ভারী সুখোই-২৫ জেট। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের পাইলটেরা বাড়তি কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই এই যুদ্ধবিমানগুলো ওড়াতে সক্ষম। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পশ্চিমা মিত্রদের কাছে সামরিক যুদ্ধবিমান দিয়ে সহায়তা করার যে আবেদন জানিয়েছেন তাতে সাড়া দিলেও গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইউক্রেনের বিমানবাহিনীকে সমর্থন করাকে মস্কো যুদ্ধে অংশ নেওয়া বলে বিবেচনা করবে এবং সম্ভাব্য প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য সরবরাহকারীদের উন্মুক্ত রাখবে।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো বলেছে, মস্কোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাত চায় না তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে সরাসরি মার্কিন সেনা পাঠানোর বিষয়টি নাকচ করেছেন। পেন্টাগন বলেছে, প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণা স্থলপথের পাশাপাশি আকাশপথের জন্যও প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্র আকাশ পথেও কোনো মিশন চালাবে না।

পোল্যান্ডের যুদ্ধবিমান সরবরাহের প্রস্তাবের পর যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, এ প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র অপ্রস্তুত হয়েছে। আমার জানা মতে, এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পোল্যান্ডের আগে আলোচনা হয়নি।’

মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগীয় কমিটির শুনানিতে নুল্যান্ড বলেন, ‘এটা পোল্যান্ডের আকস্মিক এক ঘোষণা ছিল।’

ইউক্রেনের কাছে দ্রুত যুদ্ধবিমান দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা চাপ দিলেও ওয়াশিংটন তাতে সমর্থন বা কোনো বিনিময় প্রস্তাবে সাড়া দেবে না বলে জানান নুল্যান্ড। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধবিমান পাঠাতে হলে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। এ নিয়ে মিত্রদের মধ্যে এমনকি (মার্কিন) প্রশাসনের মধ্যেই মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’

এর আগে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, পোল্যান্ড যদি যুদ্ধবিমান দিতে চায় তবে যুক্তরাজ্য পাশে থাকবে। তবে এ সিদ্ধান্তের ফলে সরাসরি রাশিয়ার মুখোমুখি হতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। স্কাই নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা পোল্যান্ডকে সুরক্ষা দেব। তাদের প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু দিয়েই পাশে থাকব।’

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *