প্রচারণার শুরুতেই নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

আইন-আদালত ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ জনপ্রতিনিধি জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন প্রার্থীরা। তবে প্রচারণার শুরুতেই নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক দেখে যাচ্ছে। নির্বাচনি প্রচারে মিছিল শোডাউন নিষিদ্ধ থাকলেও কেউ তা মানছেন না। যদিও নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে শোকজ করেছে।

নির্বাচনি প্রচারের সময় প্রার্থীদের বেশ কিছু নিয়মকানুন মানার নির্দেশনা থাকলেও কেউ তা মানছে না। নির্বাচনে পোস্টার রঙিন করায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকেই মানছেন না। জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধা হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড থেকে প্রার্থীদের বিরত থাকার নির্দেশনা থাকলেও প্রার্থীদের শোডাউনের কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সভা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে অবহিত করে অনুমতি নেওয়ার বিধান থাকলেও কোনো প্রার্থী তা মানছেন না। মাইকে প্রচার হতে হবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা মধ্যে। নির্বাচনি এলাকায় প্রতি ইউনিয়ন আর পৌর ও সিটি এলাকার ওয়ার্ডপ্রতি নির্বাচনি ক্যাম্প করতে হবে একটি। ক্যাম্পে ভোটারদের কোনো কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনোরূপ উপঢৌকন দিতে পারবেন না। প্রার্থী তার নির্বাচনি এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা বা অনুদান প্রকাশ্যে বা গোপনে দিতে পারবেন না। এমনকি অঙ্গীকার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। প্রচারের জন্য কোনো গেট, তোরণ নির্মাণ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকবে হবে। নির্বাচনি ক্যাম্প এমন স্থানে তৈরি করতে হবে যেন জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা না হয়। মোটরসাইকেলসহ যে কোনো মোটরগাড়িতে করে মিছিল, মশাল মিছিল বা শোভাযাত্রা একদম নিষিদ্ধ। যদিও এসব বিষয় এখন শুধুই খাতা-কলমেই রয়েছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

লক্ষ্মীপুর : সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাত ৮ টার পর প্রচারণা চালানোর দায়ে লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর মাইক ব্যাটারি মেশিন আটক করা হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাদশা নামে একজন প্রচারকারীসহ এসব আটক করা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে নির্বাচনি আচরণবিধি ২০০৮-এর ১৩ ধারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুকবুল হোসেন। তিনি বলেন, রাত ৮টার পর প্রচার কার্য বন্ধ থাকার পরও তারা মাইক ব্যবহার করেছেন। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং সতর্ক করা হয়।

শরীয়তপুর : আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. খালেদ শওকত আলীকে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। তিনি শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল)। আগামী ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে নোটিসের জবাব দিতে হবে। শরীয়তপুর-২ আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও নড়িয়ার সিনিয়র সহকারী জজ মো. আরিফুল ইসলাম আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে ডা. খালেদ শওকত আলীকে এ নোটিস প্রদান করেন। নোটিসে দেখা যায়, শরীয়তপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এ কে এম এনামুল হক শামীমের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. খালেদ শওকত আলীর বিরুদ্ধে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগের সূত্র ধরে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর বিধান লঙ্ঘন বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিস দিয়েছে তাকে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ডা. খালেদ শওকত আলী গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে এসে বহু লোকের জমায়েত করে মিছিল নিয়ে মাজেদা হাসপাতাল হয়ে ব্র্যাক অফিসের সামনে গিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়াও ডা. খালেদ শওকত আলী ভোট গ্রহণের তিন সপ্তাহ আগে থেকে ঈগল প্রতীক নিয়ে শত শত লোক সমাগম করে স্লোগান দিয়েছেন। যা জাতীয় সংসদ নির্বাচনি আচরণ বিধিমালার ১২ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

মাদারীপুর : জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূর-ই-আলম চৌধুরী, শেখ সেলিম, শেখ হেলালসহ শেখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা হেদায়েত উল্লাহ সাকলাইন কাজীর নামে মাদারীপুরের শিবচর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহর চাচাতো ভাই। সোমবার রাতে শিবচর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এ অভিযোগটি দায়ের করেন। কুরুচিপূর্ণ এই বক্তব্যর জন্য এলাকার মানুষদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

কুমিল্লা : কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ. ক. ম বাহাউদ্দিন বাহারকে শোকজ করা হয়েছে। গতকাল আসনটির তদন্ত কমিটি ও যুগ্ম জেলা জজ মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন ইকবাল তাকে শোকজ দেন। বাহারকে দেওয়া শোকজে উল্লেখ করা হয়, আপনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ১৮ ডিসেম্বর মহানগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরি পিটিআই স্কুল মাঠে উঠান বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে আপনি ‘যদি কোনো বিএনপি এবং জামায়াতের কোনো কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া যায় তার হাত, ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। আমি আ. ক. ম বাহাউদ্দিন আপনাদের সঙ্গে আছি’ মর্মে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন। আপনার ওই বক্তব্যের কারণে নির্বাচনের সুষ্ঠু, অবাধ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, এতে আপনি রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন। এই অবস্থায় ওই বিষয়ে আপনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন নির্বাচন কমিশনে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে না, ২৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কার্যালয়ে স্বয়ং অথবা উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে হাজির হয়ে কারণ দর্শাবেন।

আরো পড়ুন : গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৯৬

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *