স্টাফ রিপোর্টার : ‘সারেগামাপা’ খ্যাত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মতিঝিল থানার অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতির জন্য আদালতে পাঠায় ডিবি। পরে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ডিবি জানিয়েছে, মাদকতা, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, বেপরোয়া জীবনযাপন, স্ত্রীকে মারধর, টাকা আত্মসাৎ, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে নোবেলের বিরুদ্ধে। কয়েকজন শিল্পী ও এক এয়ার হোস্টেস চক্র তাকে যাবতীয় সব মাদক সরবরাহ করেন। অনেক মানুষ ডিবি’র কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। যদিও সেগুলো মৌখিক অভিযোগ ছিল। সর্বশেষ একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য অগ্রিম টাকা নিয়ে সেখানে না গিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। অনুষ্ঠানে যোগ দেননি আবার তাদের টাকাও ফেরত দেননি। পরে আয়োজকরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
গতকাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ তার কার্যালয়ে নোবেলকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে প্রাক্তন ছাত্রদের এক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার কথা বলে নোবেল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা নিয়েও সেখানে হাজির হননি। টাকা ফেরত দেয়ার কথা দিয়েও ফেরত দেননি। আয়োজকরা পরে মামলা করে। কিন্তু মামলার পরেও থানায় হাজির হননি আদালতেও যাননি। এই মামলায় তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে প্রোগ্রামে গিয়ে মাতাল অবস্থায় স্টেজ ভেঙে ফেলা, তার স্ত্রীকে মারধর করাসহ অজস্র অভিযোগ পাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিয়ে সে আত্মসাৎ করেছে। এজন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে তাকে আমরা বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার স্ত্রী আমাদের কাছে ৪ দিন এসে অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, নোবেলের প্রতিদিনই মদ, ইয়াবা, গাঁজা সেবন করতে হয়। কিছু শিল্পী তার কাছে এগুলো সরবরাহ করেন। নেশার ঘোরে ও ঘুমের ওষুধ খেয়ে রাত-দিন ঘুমিয়ে থাকেন এজন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেন না। হারুন বলেন, তাকে কারা মাদক সরবরাহ করেন তাদের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। মতিঝিল থানায় অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণা মামলায় রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
নোবেলের স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ বলেন, আপনারা প্রথম থেকে ব্যক্তি নোবেল বা গায়ক নোবেলকে দেখেছেন আমিও ঠিক একইভাবে দেখেছি। আমি তার সঙ্গে সংসার করেছি। সে খুব ভালো একজন মানুষ ছিল। কিন্তু কোনো একটা চক্রের মধ্যে পড়ে সে নেশাটা শুরু করে। পরে সে প্রচন্ডভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তখন তার ব্যবহারেও পরিবর্তন আসে এবং অন্যরকম একটা মানুষে পরিণত হয়। পরে যে ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলো মাদকাসক্তের কারণে ঘটেছে। আমাকে প্রত্যেকদিন মারধর করা হতো। যখন সেটা সহ্যের বাহিরে চলে যায় তখন আমি ৯৯৯-এ কল দেয়ার পরে খুব দ্রুত পুলিশ এসে পড়ে। পুলিশ এসে নোবেলের কাছ থেকে আমাকে বাঁচায়। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল কেন তাকে মারছেন। পুলিশকে নোবেল জানায়, সে অনেক ধরনের ড্রাগস ও নেশা করে। তাই তার মাথা ঠিক থাকেনা এজন্য মারধর করে। পরে আমি গুলশান থানায় জিডি করি। আমি একটি মেডিকেল রিপোর্টও নিয়েছিলাম। কিন্তু আইনগতভাবে বেশিদূর অগ্রসর হইনি। কারণ আমি চেয়েছিলাম নোবেল নেশা থেকে বের হয়ে আসুক এবং সুস্থ জীবনযাপন করুক। আমার উদ্দেশ্য তাকে শাস্তি দেয়া ছিল না। ভালো মানুষ হয়ে ফিরে আসতে পারে এটাই চেয়েছিলাম। আমাদের দুজনের পরিবারও কয়েকবার এসব বিষয় নিয়ে বসে। সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওই পথ থেকে ফিরবে। কিন্তু ফেরেনি।
তিনি বলেন, আসলে তারও দোষ আছে। আশেপাশে যারা আছে তাদেরও দোষ আছে। যাদের প্ররোচণায় পড়েছে, যারা তাকে জিনিসগুলো সাপ্লাই দিচ্ছে, সাপোর্ট দিচ্ছে তাদের থেকে সে আর বের হয়ে আসতে পারছে না। এজন্য আজকের এই অবস্থা। চক্রের বিষয়ে আমি ফেসবুকে লিখেছিলাম। এরপর থেকে আমার কাছে প্রতিনিয়ত থ্রেট আসতে থাকে। মেয়েদের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা আমি কখনো দেখিনি তবে ইন্টারন্যাশনাল এক এয়ার হোস্টেস তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং নোবেলকে সব ধরনের মাদক সরবরাহ করে। তিনি বলেন, এর আগে একটার পর একটা ঘটনা ঘটেছে। তারপরে র্যাব থেকে ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক সহকারী পরিচালক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা কথা বলতে চেয়েছিল। তারা ওই ঘটনা নিয়ে কতোটুকু কাজ করেছে সেটা আমি জানি না। তবে গতকাল ডিবির একজন কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে আসতে বলেন। ডিবি এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখে।
মামলার বাদী সাখায়াত ইসলাম সামী বলেন, আমাদের একটি পুর্নমিলনী ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য গত ২৫শে মার্চ মতিঝিলের হীরাঝিল রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয় তলায় নোবেলের সঙ্গে আমাদের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার একটি চুক্তি হয়। সেখানে বসেই নগদ ১৫ হাজার টাকা আমরা দেই। পরে ২৮শে এপ্রিল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরও ৪৭ হাজার টাকা দেয়া হয়। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুদিন আগে আরও টাকা দেই। অনুষ্ঠানের দিন সকালে আমাদেরকে ওনি বলেন সন্ধ্যায় থাকবেন। কিন্তু সন্ধ্যায় তাকে ফোন দিলে তিনি বলেন শরীয়তপুরের দিকে আছেন। তার ১ ঘণ্টা পরে তার ফোন বন্ধ পাই। রাত ১০টায় আবার যোগাযোগ করলে আবারো বলেন শরীয়তপুরের দিকে আছেন গাড়ির চাকা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে আবার ফোন দিলে বন্ধ পাই। সেদিন আমাদের মাঠ ভর্তি দর্শক ছিল তার গান শোনার জন্য। কিন্তু তিনি না যাওয়াতে আমরা খুবই লাঞ্ছিত হয়েছি।