নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ২৬, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ঝড় তুলেছেন ১০, মাঠে সরব ১৩ আর ২০৩ আসনে লাঙলের প্রার্থী থেকেও নেই
আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীক ছাড় পাওয়া জাতীয় পার্টির (জাপা) ২৬ প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে নৌকা ছাড় না পেলেও জাপার ১০ জন লাঙলের প্রার্থী নৌকার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ঝড় তুলেছেন। আরও ১৩ জন প্রার্থী মাঠে সরব রয়েছেন। এর বাইরে থাকা ২০৩ আসনে লাঙল প্রতীকে কাগজে-কলমে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও নেই তারা নির্বাচনী দৌড়ে। প্রচারণায় এখনো নীরব। প্রশ্ন উঠেছে বর্তমান জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এই নির্বাচনে এমন শোচনীয় অবস্থা কেন?
নৌকা প্রতীকে ছাড় না পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সমঝোতার বিষয়টি যদি মনোনয়ন প্রত্যাহারের এক ঘণ্টা আগেও প্রকাশ করা হতো তাহলেও পার্টির অন্তত শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেত। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অধিকাংশ প্রার্থীর অংশগ্রহণ দেখানোর জন্য কৌশলে ২৬ আসনের সমঝোতার বিষয়টি মনোনয়ন প্রত্যাহরের শেষ সময় পর্যন্ত গোপন রাখা হয়। এ জন্যই দুই শতাধিক আসনে বলা যায় জাতীয় পার্টির ডামি প্রার্থী মাঠে রয়েছে নামমাত্র।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৮৩ আসনে মনোনয়ন দেয় জাতীয় পার্টি। মনোনয়ন বাতিল ও প্রত্যাহারের পর এখন কাগজে-কলমে দলটির ২৬৫ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। শতাধিক সংসদীয় আসনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়- অধিকাংশ প্রার্থীর নিজ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা একে একে নির্বাচনী মাঠ ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছেন, বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।
জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা গণসংযোগ করলেও তা খুবই কম। ইতোমধ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন। তিনি দলীয় লাঙল প্রতীক পেলেও এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। জাকির হোসেন বর্তমানে জাতীয় পার্টির রায়গঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মেহেরপুর-১ আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন মো. আবদুল হামিদ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার গণসংযোগ এলাকাবাসীর চোখে পড়েনি। একই অবস্থা পঞ্চগড়-২ আসনেও। সেখানে লাঙ্গল নিয়ে লড়ছেন লুৎফর রহমান রিপন। তিনিও নীরব। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে কে এম সাইফুর রহমান লাঙ্গল নিয়ে লড়াই করছেন। তিনিও এখন পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় নামেননি। সিলেট-৬ আসনে লড়ছেন সেলিম উদ্দিন। তার প্রচারণা নেই বললেই চলে। রংপুর-৫ আসনে জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য ছিলেন। এই এলাকা থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছিলেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদও। এই আসনে লড়াই করছেন মো. আনিসুর রহমান। কিন্তু নেই প্রচারণার ব্যাপকতা। সুনামগঞ্জ-১ আসনে লড়ছেন আবদুল মান্নান তালুকদার। তার প্রচার-প্রচারণাও চোখে পড়ার মতো নয়। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ নির্বাচন করছেন, তিনি দুইবারের সংসদ সদস্য হওয়ায় নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ গড়ে তুলেছেন। জয়পুরহাট-১ আসনে নির্বাচন করছেন ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। জয়পুরহাট-২ থেকে নির্বাচন করছেন আবু সাঈদ নুরুল্লাহ। এই দুই আসনে প্রচার-প্রচারণা খুবই কম। আর ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে নৌকা ছাড় না পেয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও ঢাকা-৭ এ সাইফুদ্দিন মিলন। এর বাইরেও নৌকা প্রতীক ছাড় না পেয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম সারিতে আছেন ঢাকা-১ আসনে সালমা ইসলাম, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রতনা, নারায়ণগঞ্জ-১ মো. সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, শেরপুর -১ মাহমুদুল হক মনি, জামালপুর-২ মোস্তফা আল মাহমুদ, কুমিল্লা-১ মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া, সিলেট-২ ইয়াহইয়া চৌধুরী।
কেন প্রচারণায় নেই জাতীয় পাটি? এমন প্রশ্নের উত্তরে জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য (নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন) বলেন, এখন আর লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট চাওয়া যায় না। আমরা ভোটারদের কাছে জবাব দিতে পারি না। ভোট চাইতে গেলে প্রথম প্রশ্ন ওঠে আসন সমঝোতা নিয়ে। আমরা যে ভোটারদের কাছে ভোট চাইব সেই সুযোগ নাই। দলের কয়েকজন ব্যক্তিস্বার্থে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য পার্টিকে যে অবস্থায় নিয়ে গেছে আগামীতে জাতীয় পার্টি নিয়ে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকা মুশকিল হবে।
আরো পড়ুন : ভরা মৌসুমেও আলু, পিঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা