পুরো নাম মো. শিপন আহম্মেদ। তবে অনেকেই তাকে আরিফ নামে চিনে। জন্ম ১৯৯৯ সালে রাজশাহী জেলার বাঘা থানার আরাজী চাঁদপুর গ্রামে। ২০১৫ সালে খানপুর জেপি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। ২০১৯ সালে পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমাও করে। ডিপ্লোমা পাসের পর টাকা আয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে শিপন। পরিবারে ছিল চরম আর্থিক সংকট। আর্থিক সংকট কাটাতে গ্রামের বন্ধুদের কাছ থেকে ইমো হ্যাকিংয়ের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়। কিন্তু কিছুদিন পর সে নিজেই ইমো হ্যাকের মাস্টার বনে যায়। প্রশিক্ষক হয়ে বিভিন্ন বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
যাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতো তাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্জিত আয়ের একটি অংশ দেয়ার শর্ত জুড়ে দিতো। পাশাপাশি সে নিজেই মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের টার্গেট করে ইমো হ্যাক করতো। হ্যাক করা ইমো দিয়ে তাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে টাকা আদায় করতো। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ইমো হ্যাক করে প্রবাসীসহ দেশের বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে কোটিপতি বনে গেছে। তবে রেহাই মেলেনি। পরে রমনা মডেল থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার শিপ্রা রানী দাস অভিযান চালিয়ে শিপন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেন। শিপনের দুই সহযোগীর নাম- মজিবুল ইসলাম ওরফে নজিবুল ইসলাম ও রাসেল আহম্মেদ। শুক্রবার রাজশাহীর বাঘা থানায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
ডিবি সূত্র জানায়, শিপন প্রথমে তার নিজের মোবাইলে একটি ফেইক সিম নম্বর দিয়ে আইডি খুলে। গুগল ব্রাউজার (গুগোল প্লে স্টোরে এই অ্যাপ নিষিদ্ধ) থেকে ‘ইমো ফাইন্ড ফ্রেন্ড’ নামক থার্ডপার্টি অ্যাপস ব্যবহার করে এগারো ডিজিটের ফোন নম্বর ব্যবহার করে সার্স দিতো। এতে ১০-৫০টি ইমো অ্যাকাউন্ট চলে আসতো। সেখান থেকে প্রবাসীদের টার্গেট করতো। টার্গেট করার পর ইমো ওই আইডিটি প্রথমে একটি ইমো গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করে পরবর্তীতে তাকে বিভিন্ন উপায়ে কল ও স্টিকার সেন্ড করে বিরক্ত করতো। কৌশলে তাকে ইমোতে কল দিয়ে বলতো, আপনি কি গ্রুপে থাকতে চান? স্বাভাবিকভাবে গ্রুপে বিরক্তি ফিল করায় ভুক্তভোগীরা বলতো না আমি থাকতে চাই না, আমাকে গ্রুপ থেকে রিমুভ করে দেন। প্রতারক হ্যাকার এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ভুক্তভোগীকে বলতো- গ্রুপ থেকে রিমুভ করে দিচ্ছি। তবে, আপনার ফোনে একটি ওটিপি কোড যাচ্ছে সেটি দিতে হবে। কোড নিয়ে প্রতারক তার ফোনে ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্ট নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতো। সেখান থেকে ভুক্তভোগীর বন্ধু-বান্ধব বা নিকট আত্মীয়দের বাছাই করতো। পরে অসুস্থতা বা জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে টাকা চেয়ে ইমোর মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠাতো। ভুক্তভোগীর স্বজনরা এ ধরনের ম্যাসেজ বিশ্বাস করে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হতো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিপন ডিবিকে জানিয়েছে, প্রবাসীদের টার্গেট করে টাকা পাওয়া সহজ। কারণ দীর্ঘ দূরত্ব ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ কম থাকার কারণে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ কম থাকে। এজন্যই মূলত প্রবাসীদের টার্গেট করতো। একবার একজন প্রবাসীর কাছ থেকে টাকা আদায় হলে ফেইক ইমো অ্যাকাউন্টটি ডিলিট করে দিতো এবং আর একটি নতুন ফেইক ইমো অ্যাকাউন্ট খুলতো। এভাবে ইমো হ্যাকিং করে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ টাকা আদায় হয় বলে সে এই কাজ অব্যাহত রাখে।
ডিবি’র সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, রমনা থানার মামলায় শিপন ও তার ২ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। আমরা তার কাছ থেকে জানতে পেরেছি প্রবাসীদের টার্গেট করে তাদের ইমো হ্যাক করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শিপন চক্র। এসব টাকা দিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করতো। তিনি বলেন, ইমো যারা ব্যবহার করেন তাদেরকে আরও সতর্ক হতে হবে। কখনো অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত ইমো নম্বর অথবা ওটিপি শেয়ার করা যাবে না।
আরো পড়ুন : মেডিকেল বোর্ড গঠন হলো ডা. জাফরুল্লাহর চিকিৎসার জন্য